ডেস্ক রিপোর্ট
৩১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস (ইয়াসমিন হত্যা দিবস) উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে আজ ২৯ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৫ টায় ২ নং রেল গেইটে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মিমি পূঁজা দাস, পরিচালনা করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার।
বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সহসভাপতি নিগার সুলতানা পলি, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুন্নাহার, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক রিমা আক্তার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক নাছিমা আক্তার।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জনগণের উপর চেপে বসা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারকে উচ্ছেদ করেছে এদেশের জনগণ। শত শত মানুষ জীবন দিয়েছে আর হাজার হাজার মানুষ আহত হয়ে এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছে। স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার উন্মত্ততায় এই রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড সংগঠিত করেছে। অবিলম্বে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে সকল হত্যাকান্ডের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, হতাহতের তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং নিহত ও আহত ছাত্র-শ্রমিক-জনতাকে ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘এই গণআন্দোলনে সকলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে ছাত্রীরা। সন্তানদের সাথে রাস্তায় নেমে এসেছিল মায়েরা, বোনেরা। এই লড়াই ছিল প্রতিনিয়ত যে বৈষম্য নারীদের সাথে ঘটে চলেছে তার প্রতিবাদ। দেশের সবচেয়ে বড় বড় বৈষম্যের অন্যতম নারী পুরুষের মর্যাদা ও অধিকারের বৈষম্য। আইনগত ভাবেই সম্পত্তিতে নারীদের সমঅধিকার নেই। শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি হলেও কর্মক্ষেত্রে সেই সংখ্যা অনেক কম। পারিবারিক দায়িত্ব পালনের কারণে কর্মক্ষেত্র থেকে ছিটকে পড়লেও নারীর পারিবারিক-সামাজিক মর্যাদা প্রতিনিয়ত ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। কর্মজীবি নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং সমকাজে সমমজুরির নিশ্চয়তা নেই। এরকম অসংখ্য বৈষম্যের শিকার দেশের নারীরা। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বৈষম্যবিরোধী চেতনা তৈরি হয়েছে তার সাথে এই বাস্তবতা সাংঘর্ষিক। অবিলম্বে সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘সারাদেশের গণআন্দোলন এবং দিনাজপুরে ৭ জন ভাইয়ের প্রাণের বিনিময়ে ইয়াসমিন হত্যার বিচার হয়েছিল। কিন্তু ইয়াসমিন হত্যার পর কেটে গেছে ২৯ বছর। বিগত এই সময়ে দেশে একদিকে নারী নির্যাতনের সংখ্যা, ধরন ও তীব্রতা বেড়েছে আর অন্যদিকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সরকারি উদ্যোগ কমে গেছে। দেশের সর্বত্র নারী-শিশু ধর্ষণ, খুনের ঘটনা ঘটে চলেছে, সাথে সাথে সমানতালে চলেছে বিচারহীনতার নজির। বিচারহীনতা ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক বলয় অপরাধ প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ধর্ষণের মামলায় ৯৭ শতাংশেরই কোন সাজা হয় নাই। ফলে অপরাধী আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অর্থ ও ক্ষমতার বলয়ে থাকলে খুন-ধর্ষণ যেকোন অপরাধ করে রক্ষা পেয়ে
যায়Ñএই হচ্ছে বাস্তবতা! মুনিয়া হত্যা, তনু হত্যার বিচার না হওয়া সেটাই প্রমাণ করে।’
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘নারী নির্যাতন সমাজ বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়। যে সমাজে বৈষম্য প্রকট, সে সমাজে নির্যাতন একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়। বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের সংগ্রাম নারী মুক্তির একমাত্র পথ। পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থা বহাল রেখে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থা একদিকে নারীকে পণ্যে পরিণত করে অন্যদিকে ভোগবাদী মানসিকতাকে লালন করে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস এই অন্যায্য সমাজ ব্যবস্থাকে গুড়িয়ে দেয়ার শিক্ষা দিয়ে যায়।’ সমাবেশ থেকে বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।