ডেস্ক রিপোর্ট

৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, ৩ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মরদেহ উত্তোলন

আপডেট টাইম : নভেম্বর ৮, ২০২৪ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় সাবেক এমপি শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে করা হত্যার অভিযোগে করা মামলার ঘটনায় আড়াই বছর পর ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মীর মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দিনব্যাপী পৃথক পৃথক কবরস্থান থেকে তাদের মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মরদেহ উত্তোলন করা নিহত তিন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হলেন- উপজেলার ২নং বিনোদনগর ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণপুর গ্রামের মো. ইয়াসিন আলীর ছেলে কিবরিয়া ইসলাম (৩০), ছাত্রলীগকর্মী ও উপজেলার উত্তর শ্যামপুর গ্রামের মো. রবিউল ইসলামের ছেলে রিমন ইসলাম (২২) এবং কাঁচদহ গ্রামের মো. জাহিদুল ইসলামের ছেলে ছাত্রলীগকর্মী সাব্বির হোসেন (২৩)।

নবাবগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট নিহত ছাত্রলীগকর্মী রিমন ইসলামের বাবা রবিউল ইসলাম তার ছেলে ও ছেলের দুই বন্ধু কিবরিয়া ও জাহিদুল ইসলামকে হত্যার অভিযোগে বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক এমপি শিবলী সাদিক, নবাবগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, ছাত্রলীগ সভাপতি, সম্পাদকসহ ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে নবাবগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর বিনোদনগর ইউনিয়নে কাঁচদহ সেতুর উত্তর দিকে প্রায় ২০০ গজ দূরে করতোয়া নদীতে ১ নম্বর আসামি সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের ইজারা নেওয়া একটি বালুমহাল ছিল। সেই সময় ওই বালুমহালের দায়িত্বে শিবলী সাদিকের অধীন মামলার আসামিদের অনেকে ছিলেন। বাদী রবিউল ইসলামের বড় ছেলে রিমন ইসলাম ওই বালুমহাল থেকে বালু তোলার ট্রাক্টরের হিসাব রাখার কাজ করতেন। আর সেখানে শ্রমিকের কাজ করতেন রিমন ইসলামের বন্ধু কিবরিয়া ইসলাম ও সাব্বির রহমান। তারা তিনজনই ওই বালুমহালের ঘরে থাকতেন। বালু বিক্রির ট্রাক্টরের হিসাব নিয়ে রিমন ইসলাম ও তার দুই বন্ধু কিবরিয়া ইসলাম ও সাব্বির রহমানের সঙ্গে মামলার ২ নম্বর আসামি শাহিনুর রহমান সবুজের বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় শাহিনুর ইসলাম ওই তিনজনকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। পরে বিষয়টি রিমন ইসলাম তার বাবাকে জানান।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ৩০ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রিমন, কিবরিয়া ইসলাম ও সাব্বির কাঁচদহ বালুমহাল থেকে একটি মোটরসাইকেলে নবাবগঞ্জ মেলায় ঘুরতে যান। মেলা শেষে রাতে ওই তিনজন কাঁচদহ বালুমহালের উদ্দেশে মোটরসাইকেলে রওনা দেন। রাত সোয়া ১২টার দিকে তারা উপজেলার বিনোদনগর ইউনিয়নে নবাবগঞ্জ-কাঁচদহ পাকা সড়কে কৃষ্ণপুর এলাকায় পৌঁছালে শাহিনুর রহমানের নেতৃত্বে আসামি জিয়াউর রহমান, তাজওয়ার ফাহিম, আজিজুল হক, জামিনুর রহমান, সায়েম সবুজ, মো. শামসুজ্জামান, সানোয়ার হোসেন মণ্ডল ও সাদেক আলী তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। পরে শাহিনুর রহমান কুড়াল দিয়ে রিমনের মাথায় কোপ দেন। এ সময় কিবরিয়া ইসলাম চিৎকার দিলে ৩ নম্বর আসামি জিয়াউর রহমান হাঁসুয়া দিয়ে কিবরিয়া ইসলামের গলা ও বুকে কয়েকটি কোপ দেন। একপর্যায়ে মামলার আসামি তাজওয়ার ফাহিম, আজিজুল হক, জামিনুর রহমান, সায়েম সবুজ, মো. শামসুজ্জামান, সানোয়ার হোসেন মণ্ডল ও সাদেক আলী হাঁসুয়া, কুড়াল ও লোহার রড দিয়ে সাব্বির রহমানের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকেন। রিমন, কিবরিয়া ইসলাম ও সাব্বিরের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর আসামিরা তাদের মরদেহ রাস্তার পাশে ফেলে চলে যান। এ সময় তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলটি দুমড়েমুচড়ে অবস্থায় পাওয়া যায়। সেই সময় ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিয়ে মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় ওই সময় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মামলা করার সাহস পাননি। সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের পরিকল্পনায় আসামিরা ওই তিনজনকে হত্যা করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, পুলিশের একটি দল ও উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্তের জন্য তিনজনের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিসুর রহমান জানান, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে নিহত তিনজনের মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শেয়ার করুন