ডেস্ক রিপোর্ট
৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: পুলিশের গুটি কয়েক শীর্ষ কর্মকর্তাকে নিয়ে তীব্র ক্ষোভ চলছে অধস্তনদের মধ্যে। তারা বলছেন, চিহ্নিত কিছু কর্মকর্তাদের জন্য পুলিশের আজকের এই অবস্থা। তারা পুলিশের মতো একটি শৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করেছেন। তারাই পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন। চিহ্নিত সেসব কর্মকর্তা বাংলাদেশ পুলিশের দুই লাখ সদস্যকে মৃত্যুর মুখে ফেলে নিজেরা পালিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, শেষ মুহূর্তেও মাঠে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কোনও দিকনির্দেশনা না দিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন তারা। এজন্যই পুলিশের এত সদস্য ক্ষুব্ধ জনতার হাতে নির্মমভাবে মারধরের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
এদিকে পুলিশের নতুন নিয়োগ পাওয়া আইজিপি মইনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার মধ্যে সব সদস্যকে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এখনও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন। তারা যদি নিজ নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার পথে আক্রমণের শিকার হন, তাহলে এর দায়ভার কে নেবে?
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, পুলিশের নিম্ন পদমর্যাদার সদস্যরাও অফিসারদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। অবস্থা এমন পর্যায়ে যে, রাস্তায় জনগণের মারধর আর কার্যালয়ে গিয়ে অধস্তনদের সামনে অপমানিত বা মার খাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলার মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের মারধর ও ধাওয়া দিয়েছেন নিম্ন পর্যায়ের সদস্যরা।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত পদমর্যাদার সদস্যরা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। তাদের দাবি, পুলিশকে রাজনীতিকরণ বন্ধে স্বাধীন কমিশন বা স্বতন্ত্রভাবে পুলিশকে পরিচালনা করার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোসহ অধস্তন কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, পদোন্নতি ও পদায়ন স্বচ্ছতার মাধ্যমে করার আহ্বান জানানো হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত একজন কনস্টেবল এই প্রতিবেদককে জানান, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর যখন চারদিকে থানায় আক্রমণ করা হচ্ছিল, সেসময় তার অফিস প্রধান নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেও তাকে অফিসে সিভিল পোশাকে পাহারা দিতে বলে। তিনি সেই নির্দেশ না মেনে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাই নিরাপদে থেকে মাঠের সদস্যদের জনগণের মুখোমুখি করিয়েছেন। এবং শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পরও ফোর্সকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেননি।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মধ্যম সারির একজন কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান তার কার্যালয় ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু যাওয়ার আগে তিনি ওয়্যারলেসে একটা নির্দেশনা দিয়ে যেতে পারতেন। তাহলে এতগুলো পুলিশের প্রাণ যেতো না। তারা সময়মতো নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিতে পারতেন।
ঢাকার উপকণ্ঠে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জানান, তিনি ফোর্স নিয়ে একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোনও নির্দেশনা না পেয়ে তিনি পরদিন ভোর পর্যন্ত নানা কৌশলে ফোর্স নিয়ে অবস্থান করার পর নিরাপদ জায়গায় যেতে পেরেছেন। ডিএমপির একজন কর্মকর্তাও রামপুরা এলাকার একটি বাসায় আত্মগোপন করে থেকে পরদিন নিরাপদ জায়গায় চলে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তারা বলছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার আলোচনা হচ্ছে এমনটা জেনেও সদ্য বিদায়ী আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ফোর্সদের মাঠ থেকে ব্যারাকে কিংবা সড়ক থেকে থানায় ফিরিয়ে নেননি। বরং আগের দিন রাতেও ফোর্সদের কারফিউ পালনে আগের চাইতে আরও বেশি কড়াকড়ির নির্দেশনা দিয়েছেন। এজন্যই পুলিশের এতগুলো সদস্য নির্বিচারে প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া যৌক্তিক একটি আন্দোলনেও গুলি করার নির্দেশনা দিয়ে তারা অন্যায় করেছেন। পুলিশের শীর্ষ এই কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তারা।
কর্মকর্তা পর্যায়ের কেউ মারা যায়নি উল্লেখ করে পুলিশ কনস্টেবলরা বলছেন, ঊর্ধ্বতনরা তাদের বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়ায় নিম্ন স্তরের পুলিশ সদস্যরাই মারা গেছেন। এমন অবস্থা যে জনতার ক্রোধের মুখে পড়ে মৃত্যুবরণ করার পর লাশও পরিবারের কাছে নেওয়া যাচ্ছে না। একদিন-দুদিন পর লাশ উদ্ধার করা হচ্ছে।
ডিএমপির একজন কর্মকর্তা জানান, দ্রুত সরকার গঠন করা হলে হয়তো পরিস্থিতি আরও বেশি স্বাভাবিক হবে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। নিজেদের নিরাপত্তাজনিত কারণেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় নেবে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন