ডেস্ক রিপোর্ট
১০ মার্চ ২০২৩, ১১:০৯ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে, তা নিয়ে সরকারি দলের লোকজন এখন ‘তামাশা’ করে বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তাঁরা অভিযোগ করেন, নিজেদের দায় এড়াতে বিরোধীদের দোষারোপে মাতেন আওয়ামী লীগের নেতারা। চলমান আন্দোলন থেকে দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরাতে সরকার জনগণের জীবন নিয়ে খেলছে বলে দাবি করেনন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।
আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এসব কথা বলেন। যদিও এই সমাবেশ ছিল ‘ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি বাতিলের দাবি’তে, কিন্তু বক্তাদের বক্তব্যে প্রাধান্য পেয়েছে সর্বশেষ ৭ মার্চ ঢাকার সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা। এ ঘটনার পর মন্ত্রীদের অনেকে রাজনৈতিকভাবে দোষারোপ করে বক্তব্য দিয়েছেন। এসব বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।
‘ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির অসম চুক্তি বাতিলের দাবি’তে এই সমাবেশের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক ভাসানী অনুসারী পরিষদ।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিভিন্ন গোষ্ঠীকে খুশি করাই বর্তমান সরকারের কাজ। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে জাতীয় স্বার্থ বাদ দিয়ে আদানিকে অনৈতিক সুবিধা দিয়েছে। এই সময়কার শুধু নিজেদের গোদির স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। আবারও এই গোষ্ঠীকে খুশি করে আগামী নির্বাচনও ভোট ছাড়া করতে চাইছে।
একদিকে মানুষ মরছে আর সরকারি দলের নেতারা দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়ে তামাশা করছে মন্তব্য করে জোনায়েদ সাকি বলেন, গুলিস্তানে বিস্ফোরণের দায় বিরোধীদের নাশকতা বলে তামাশার কথা বলছেন। মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনার পর দীর্ঘ সময়েও রাজধানীর কত ভবন এমন ঝুঁকিপূর্ণ সেই তালিকা করা হয়নি। সরকার নিজেদের দুর্নীতি, অনিয়মের দায় বিরোধীদের কাঁধে চাপাতে চায়।
সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার পরিকল্পনা করছে দাবি করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচন করে আন্তর্জাতিক মহলকে দেখাতে চায়, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। সরকারের এই স্বপ্ন পূরণ হবে না।
গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক বলেন, দেশকে তিলে তিলে ধ্বংস করা হচ্ছে। সরকার ভারতের তোষামদ করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আদানির সঙ্গে চুক্তিতে দেশের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র বিষয় নয়, নরেন্দ্র মোদির পকেটে টাকা দিতে এই চুক্তি।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নুরুল হক বলেন, ‘এই দল ভোট ডাকাত, ব্যাংক ডাকাত, সম্পদ ডাকাত। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব থাকবে না। আওয়ামী লীগের ৮০ শতাংশ সংসদ সদস্য দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। নির্বাচনের খেলা শুরু হয়েছে। চলমান আন্দোলন–সংগ্রাম থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরাতে সরকার দোষারোপের খেলা শুরু করেছে।’
সরকার নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে একের পর এক জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি করছে বলে মন্তব্য করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, মোদি সরকারকে খুশি করতে এই চুক্তি। সরকার এই চুক্তি নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি, এর মধ্যেই আদানির বিদ্যুৎ আসতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারদর থেকে তিন গুণ বেশি দামে আদানির থেকে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম বলেন, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে দেশের মানুষ কেন ১০ টাকা করে বেশি দেবে? সংসদে আলোচনা না করে সরকার এই চুক্তি গোপন রেখেছে। মোদির পকেটের কোম্পানি আদানি।
সভাপতিত্ব করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম। তিনি বিক্ষোভ সমাবেশের একটি প্রস্তাবনা পড়ে শোনান। তাতে বলা হয়, ভারতের বিদ্যুৎ বাজারের প্ল্যাটফর্ম ‘এনার্জি এক্সচেঞ্জ লিমিটেড’ থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৭ টাকা ৪০ পয়সার কেনা যায়। সেখানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ কিনবে ১৮ টাকায়। এই চুক্তির শুভঙ্করের ফাঁকি যোগ করলে প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে ২৪ টাকা। তিনি অভিযোগ করেন, এই চুক্তি শুধু দেশের স্বার্থবিরোধী নয়, রাষ্ট্রদ্রোহিতাও।