ডেস্ক রিপোর্ট
৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: বাসদের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের উদ্যোগে আজ ৮ নভেম্বর ২০২৪ বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কমরেড নিখিল দাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড জুলফিকার আলী। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাসদের প্রতিষ্ঠা আহ্বায়ক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড খালেকুজ্জামান, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড রওশন আরা রুশো।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গত জুলাই-আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে ১৫ বছরের দুঃশাসনের বিপরীতে একটা গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্য ও দুর্নীতির অবসান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩ মাস পূর্তি হচ্ছে। কিন্তু এখনো নিত্যপণ্যের বাজার উর্ধমুখী। সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে আছে। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ মব কিলিং বন্ধ হয়নি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমলের মতোই মজুরি চাইতে গিয়ে গুলি খেয়ে শ্রমিকদের নিহত হতে হচ্ছে। অথচ ’২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শ্রমিকরা অকাতরে জীবন দিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ মিরপুরে রিকশা জব্দ করে নিলামে বিক্রি ও কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে হকার উচ্ছেদের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা না করে গণবিরাধী তৎপরতা বন্ধের দাবি জানান। একই সাথে বন্ধ পাটকল-চিনিকল চালু ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করে বেকার সমস্যার সমাধান করা অন্যথায় বেকার ভাতা চালুর দাবি করেন। সরকারের ১০টি সংস্কার কমিটির এখনো তেমন কোন অগ্রগতি নেই। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার ক্ষেত্রে সরকার এখনো স্পষ্ট বক্তব্য দিচ্ছে না। ফলে গণঅভ্যুত্থানের অর্জন দৃশ্যমান হয়নি। জনগণ ধোঁয়াসার মধ্যে রয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এই অঙ্গীকার বুকে ধারণ করে ৩০ লাখ শহীদি আত্মদান ও ২ লাখ মা-বোনের লাঞ্ছনার বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হলেও গত ৫২ বছরে শাসক গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দেশ শাসন করায় মানুষের মুক্তি আসেনি। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকার-আলবদর পরাজিত হলেও গত ৫২ বছরের ধনীক বুর্জোয়া শাসকগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দিয়েছে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের আকাঙ্খা নিয়ে ১৯৯০ সালের সামরিক শাসনবিরোধী গণঅভ্যুত্থান এবং ২০২৪ সালে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থান মুক্তিযুদ্ধের অপূরিত স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য আবারো উর্ধে তুলে ধরেছে। অহেতুক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনা করে দ্রæত প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ১৯১৭ সালের ৭ নভম্বর মহামতি লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়াতে দুনিয়ার বুকে প্রথম শ্রমিক শ্রেণির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর ১৫ বছরের মধ্যে কমরেড স্তালিন দেখিয়েছিলেন কীভাবে সমাজ থেকে শোষণ, বেকারত্ব, ভিক্ষাবৃত্তি, পতিতাবৃত্তি দূর করা যায়। এই শিক্ষাকে ধারণ করে বিশ্বের দেশে দেশে মানুষ শোষণমুক্তির আশায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়ছে। ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থান ও ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে বৈষম্যহীন সমাজ তথা সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণের সংগ্রামকে বেগবান করা ছাড়া মুক্তির আর কোন পথ নেই। তাই শুধু ক্ষমতার হাত দল নয় ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য শ্রমিক কৃষকসহ আপামর মেহনতি জনতার প্রতি আহ্বায়ক জানান।