ডেস্ক রিপোর্ট
৬ অক্টোবর ২০২৪, ৭:২৯ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। এতে জেলার তিন উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক।
রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, হালুয়াঘাটের পানিবন্দি এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বতর্মানে নারী-শিশুসহ দেড় সহশ্রাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এতে দুর্গতদের জন্য তিন উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে দুর্গতদের মাঝে।
তবে অপর একটি সূত্র জানায়, ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর, জিগাতলা, পঞ্চনন্দপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে পুরো উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তবে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করছে প্রশাসন। এ ছাড়াও পানিবন্দি অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে।
এ ছাড়াও ফুলপুর উপজেলার ছনধরা, রামভদ্রপুর, সিংহেশ্বও, ফুলপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ও অন্যান্য ইউনিয়নের আংশিক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার আমন ফসল ও সবাজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের খামার। উপজেলা সদর থেকে কলসিন্দুর পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও ধোবাউড়া পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও বালিগাঁও পাকা রাস্তা, মুন্সিরহাট বাজার থেকে শালকোনা পাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় নিমজ্জিত ধান ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর। এর মধ্যে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত ৪ হাজার ২০০ হেক্টর ও সবজি ৬০ হেক্টর। হালুয়াঘাটে নিমজ্জিত ধান ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর। এর মধ্যে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত ৪ হাজার ১০০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর ও সবজি ৭৫ হেক্টর। ফুলপুরে নিমজ্জিত ধান ৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর। এর মধ্যে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত ১ হাজার ৪৮০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত ২ হাজার ১৫০ হেক্টর ও সবজি ৬২ হেক্টর।
খাবার কিনতে বের হওয়া উপজেলার আমতৈল গ্রামের সিদ্দিক মিয়া বলেন, রাস্তাঘাটে ও ঘরে পানি উঠেছে। কোথায় কোনো শুকনা খাবার পেলাম না। তাই খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।
স্থানীয় আবুল কাশেম বলেন, এমন বন্যা আগে কখনও দেখি নাই। ১৯৮৮ সালের বন্যা দেখেছি, তখন এমন পানি ছিল না। বাড়িঘরে পানি উঠেছে। গরু-ছাগল নিয়ে বিপদে আছি। গরু পানির মধ্যে বাঁধা। আমরা খুব সমস্যায় আছি। চলাফেরা খুব কষ্ট হয়, রাস্তায় বুকসমান পানি। ফসলের অনেক ক্ষতি হয়ছে। আমন ধান পানির নিচে পড়ে গেছে। এবার আমন ধান পাবো, এমন আশা করা যায় না। অনেক শাকসবজির পানিতে তলিয়ে গেছে।
জেলা মৎস কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৭ হাজার ৮০ জন মৎসচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ২১৭ লাখ, ভেসে গেছে ৫ হাজার ৬২৪ লাখ টাকার মাছ ও রেনোপোনা ভেসে গেছে ১৪৯ লাখ টাকার। মৎসখাতে মোট ৫ হাজার ৯৮৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।