ডেস্ক রিপোর্ট
২০ জুন ২০২৪, ১১:৩৬ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: ‘ছবিটি বাংলা সিনেমার অবস্থানকে কয়েক ধাপ ওপরে নিয়ে যাবে। এত দিন মানুষ বাংলা ছবি বলতে যা বুঝত, তুফান সেই ভাবনাকে পাল্টে দেবে।’ পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তিপ্রাপ্ত তুফান দেখে ফেসবুকে লিখেছেন অলক মহিয়ান নামের এক দর্শক।
ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস, লায়ন সিনেমাস, মধুমিতাসহ দেশজুড়ে ১২০ টির বেশি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি চলছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের ছায়াবাণী সিনেমা হলে ছবিটি দেখতে দর্শকেরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। দর্শকের চাপে বাধ্য হয়ে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে (রাত ১২টা থেকে ৩ টা) সিনেমাটির একটি বিশেষ প্রদর্শনী করেছে সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ।
এ প্রেক্ষাগৃহের বুকিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন প্রথম আলোকে জানান, গত দুই দশকে ছায়াবাণী সিনেমা হলে এমন ঘটনার দেখা মেলেনি।
ঢাকার সিনেমার রমরমা সময়ে হামেশাই মধ্যরাতে শোর খবর মিলত। তবে মাঝের সময়ে দর্শকেরা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পর মধ্যরাতে শোর খবরে উচ্ছ্বসিত বুকিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন। তাঁর মাধ্যমে এবার ঈদে ছায়াবাণীসহ আরও ১০টি প্রেক্ষাগৃহে তুফান সিনেমার বুকিং হয়েছে।
কামাল হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৯টার শোতেও দর্শকের উপচে পড়া ভিড় ছিল। এই দুই শোতে অনেক দর্শক ছবিটি দেখতে না পেরে ফিরে গেছেন। আবার অনেকে অপেক্ষা করছিলেন, ছবিটি তাঁরা দেখবেনই। পুলিশ এনেও লোকজন সরাতে পারিনি। সারা দিন দর্শকের ভিড় সামাল দিতে আমাদের কর্মচারীরাও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই আমরা প্রথমে রাত ১২ থেকে ৩টার শো চালাতে চাইনি। দর্শক ও প্রশাসনের অনুরোধে বাধ্য হই রাত ১২ থেকে ৩টার শো চালু করতে।’
ছায়াবাণী সিনেমা হলের দর্শক ধারণক্ষমতা ৯০০। তবে ঈদে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রতিদিন হাজারের বেশি দর্শক ছবিটি উপভোগ করতে পারছেন।
তুফান সিনেমার এত চাহিদা কেন—জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, ‘অনেক দিন পর মাসালা টাইপের সিনেমা শাকিব খানের। এমন অ্যাকশন সিনেমায় শাকিবকে আগে দেখা যায়নি। ছবিটিও ভালো। মুক্তির আগে থেকেই দর্শকের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। প্রচারণাও ভালো ছিল। ছবির নির্মাণও ভালো হয়েছে। “লাগে উরাধুরা” গানটা বেশি ভাইরাল হয়ে গেছে। সবকিছু বাদ দিলেও শাকিব খানের তো একটা বিশাল ভক্তকুল আছেই।’
টিকিট না পেয়ে হলে ভাঙচুর
তুফান সিনেমার টিকিট না পেয়ে হলে ভাঙচুরের খবরও পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টায় ঢাকার মধুমিতা সিনেমা হলে ভাঙচুর চালিয়েছেন বিক্ষুব্ধ দর্শক। এ সময় হলের পোস্টার ডিসপ্লে, চেয়ার ও দরজার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়।
অনেক দর্শকের অভিযোগ, কাউন্টারে নির্ধারিত দামে টিকিট বিক্রি না করে হলের বাইরে অতিরিক্ত দামে অবৈধভাবে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে দুই কালোবাজারিকে আটক করেছে পুলিশ।
রাজধানীর মধুমিতা হলে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন দর্শক একত্র হয়ে হলের অভ্যন্তরে ঢুকে গন্ডগোল শুরু করেন। এ সময় লাথি দিয়ে হলের দরজা ভাঙেন কয়েকজন উত্তেজিত দর্শক। ঢিল ছুড়ে ভাঙা হয় দরজার গ্লাস। ছিঁড়ে ফেলা হয় দেয়ালে সাঁটানো পোস্টার, ভেঙে ফেলা হয় পোস্টার বোর্ড।
এ সময় তুফান দেখতে আসা দর্শকেরা অভিযোগ করেন, অনেক দিন ধরেই মধুমিতা সিনেমা হলে টিকিট কালোবাজারি হয়ে আসছিল। সোমবার তুফান সিনেমা মুক্তির পরপরই টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার শো দেখার জন্য মধুমিতা হলে দর্শকের চাপ বেড়ে গেলে টিকিটের সংকট সৃষ্টি হয়। দর্শকদের অভিযোগ, হল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছিল তুফান-এর টিকিট।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মধুমিতা সিনেমা হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের নির্ধারিত আসনের তিন গুণ দর্শক এসেছেন হলে। এত দর্শকের চাপ সামাল দেওয়া যায়নি।’
দর্শকদের মারমুখী হতে কয়েকজন ইউটিউবার উসকানি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন নওশাদ।
স্টার সিনেপ্লেক্সে সর্বোচ্চ শোর রেকর্ড
স্টার সিনেপ্লেক্সের দুই দশকের ইতিহাসে বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্যে সর্বোচ্চ শোর রেকর্ড গড়েছে তুফান। স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, ঈদের দ্বিতীয় দিন স্টার সিনেপ্লেক্সের সব আউটলেট মিলিয়ে ছবিটির ৪৭টি শো চালানো হয়েছে। এর আগে বাংলা কোনো সিনেমার এত শো চালানো হয়নি।
শোর হিসাবে প্রিয়তমা, পরাণ ও হাওয়া সিনেমাকে ছাড়িয়ে গেছে তুফান।
ঈদের দিন স্টার সিনেপ্লেক্সে ২২টি শো দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল তুফান, দর্শকের চাপে শো বাড়তে বাড়তে ৪৭ টিতে পৌঁছেছে। শো আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান মেজবাহ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ছবিটি দেখতে দর্শকের প্রচুর চাপ ছিল। ব্যাড বয়েজ-এর মতো সিনেমার শো কমিয়ে তুফান-এর শো বাড়ানো হয়েছে। শো বেড়েই চলেছে, কমার কোনো লক্ষণ নেই।’
আজ থেকে স্টার সিনেপ্লেক্সে তুফান–এর শো বাড়িয়ে ৫১টি করা হয়েছে।
ঢাকার আরেক সিনেপ্লেক্স লায়ন সিনেমাসে ঈদের দিন পাঁচটি শো চালানো হয়েছে। দর্শকের চাপে প্রতিদিন ১০টি শো চালানো হচ্ছে। প্রেক্ষাগৃহটির কর্ণধার মির্জা আবদুল খালেক জানান, তুফান সিনেমার প্রায় সব শো হাউসফুল যাচ্ছে।
‘তুফান’ সিনেমায় শাকিব খানকে দ্বৈত চরিত্রে দেখা গেছে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমায় শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভারতের মিমি চক্রবর্তী এবং বাংলাদেশের নাবিলা। আরও আছেন চঞ্চল চৌধুরী, ফজলুর রহমান বাবু, গাজী রাকায়েত, সালাহউদ্দিন লাভলু, গাউসুল আলম শাওন প্রমুখ।
তুফান ছবিটি প্রযোজনা করেছে আলফা-আই স্টুডিওজ লিমিটেড; ডিজিটাল পার্টনার চরকি এবং ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে আছে এসভিএফ।