ডেস্ক রিপোর্ট
৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:০৭ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: বেগম রোকেয়াকে স্মরণ করা জরুরী তারচেয়েও বেশি জরুরী তাঁকে মর্মে ধারণ করা এমন মন্তব্য করেছেন বেগম রোকেয়া স্মরণে আলোচনা সভায় বক্তারা। বেগম রোকেয়ার ১৪৩তম জন্ম ও ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মাগুরা জেলা শাখার উদ্যোগে আজ ৯ ডিসেম্বর ২০২৩ সকাল ১১টায় ৩ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলোচনা সভায় বক্তারা এই কথা বলেন।
বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চের কেন্দ্রীয় সদস্য প্রকৌশলী শম্পা বসুর সভাপতিত্বে আলোচনা করেন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হাকিম বিশ্বাস, নাজির আহমেদ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ কাজী নজরুল ইসলাম ফিরোজ, সাবেক সহকারি অধ্যাপক আর্জুমান চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মাগুরা জেলা শাখার সংগঠক সাগর হোসেন। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মাগুরা জেলা শাখার সংগঠক গোলাম পারভেজ।
আলোচনা সভায় বক্তাগণ বলেন, সমাজে নারীকে মানুষ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা, নারীর সামনে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করার সাহস, যুক্তি ও আপন প্রত্যয় নিমার্ণের লক্ষ্যে আজীবন বেগম রোকেয়া সংগ্রাম করেছেন–লেখনী ধরেছেন, স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, সংগঠন গড়ে তুলেছেন। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে এক রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তাঁর কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে। সে সময় মেয়েদের লেখাপড়া ছিলো সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ ও পাপতুল্য। অশিক্ষার অভিশাপ ও পুরুষতন্ত্রের অবরোধ প্রথার মধ্যেই তিনি বড় হন। ভাই ইব্রাহিম সাবের ও বড় বোন করিমুন্নেসার কাছ থেকে কিছু বাংলা ও ইংরেজি শিখেছিলেন। সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়তো তখন রোকেয়া মোমের আলোয় পড়ালেখা করতেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে ও ২৯ বছর বয়সে বিধবা হয়ে রোকেয়া বুঝেছিলেন সমাজে নারীর অবস্থান কতটা নিগৃহীত এবং এর বিরুদ্ধে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। তাই স্বামীর মৃত্যুর পর ১৯০৯ সালে ভাগলপুরে নিজ বাড়িতেই ৫ জন ছাত্রীকে নিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এজন্য স্বামীর আত্মীয়স্বজন ও সমাজের নানা অংশের মানুষের কাছ থেকে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও আঘাত সহ্য করতে হয়।
বক্তাগণ আরও বলেন, বেগম রোকেয়া সমাজে নারীর যে অবস্থান দেখতে চেয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর ৯১ বছরেও আমরা সেখানে পৌঁছাতে পারিনি। বাহ্যিকভাবে হয়তো অনেক পরিবর্তন হয়েছে বলে বোধ হবে; নারী এমনকি মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীও হচ্ছেন। কিন্তু সমাজ মননে আরও বেশি অবক্ষয় ঘটে গেছে।সারাদেশে নারী-শিশু ধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যা এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অপহরণ, বন্দি করে রেখে গণধর্ষণ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন-হত্যা, বখাটেদের উৎপীড়ন, গণপরিবহনে যৌন হয়রানি-ধর্ষণ, ইন্টারনেটে ব্লাকমেইলসহ ঘরে বাইরে নানা উৎপীড়ন, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন–কত ভাবে যে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছেন! সমাজে নারীর প্রতি বিদ্বেষ বাড়ছে। আর সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্বের অধিকারসহ অসংখ্যক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন।
বক্তাগণ আরো বলেন, ব্যক্তি মালিকানা ভিত্তিক শোষণমূলক পুঁজিবাদী আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায় নারী দ্বিমুখী শোষণ নির্যাতনের শিকার। একদিকে অর্থনৈতিক শোষণ অন্যদিকে ভোগবাদী পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার দ্বারা নির্যাতিত। ফলে এই শোষণমূলক ব্যক্তি মালিকানার সমাজ পরিবর্তন ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিবর্তনে, সমাজের সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, নারীমুক্তির আন্দোলনে বেগম রোকেয়া আজও প্রেরণার উৎস।