ডেস্ক রিপোর্ট

১৬ মার্চ ২০২৩, ১১:৫২ অপরাহ্ণ

মহিলা ফোরাম ঢাকা নগর শাখার প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আপডেট টাইম : মার্চ ১৬, ২০২৩ ১১:৫২ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম ঢাকা নগর শাখার প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় আজ ১৬ মার্চ ২০২৩, টিএসসি স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিকেল ৪ টায়। জাতীয় পতাকা ও সংগঠন পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে র‌্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সেলিনা ইয়াসমিন কনা।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল – বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু। সভা পরিচালনা করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রুখশানা আফরোজ আশা। আলোচনা সভা শেষে ঢাকা মহানগরের নতুন কমিটি পরিচয় করিয়ে দেন কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘ নারী পুরুষের মিলিত প্রচেষ্টায় পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে ওঠে। মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠলেও কোথাওই নারী পুরুষের অধিকার ও মর্যাদা সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। একদিকে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অন্যদিকে সমাজের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী – এই দ্বৈত শোষণের শিকার নারী সমাজ। পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীতে সমাজ পরিচালিত হয় বলে পুরুষ সর্বক্ষেত্রে কর্তৃত্বশীল আর নারী সর্বক্ষেত্রে পদানত। আইনের দৃষ্টিতেও আমাদের দেশে নারীরা বৈষম্যের শিকার। সম্পত্তিতে সমঅধিকার না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। প্রতিটি গৃহে নারী যে শ্রম দেয় সেই শ্রমের স্বীকৃতি পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রে নেই। যে নারীরা অন্যের বাড়ি গৃহ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তারাও শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি পায় না। তাদের মজুরী, শ্রমঘন্টা, ছুটির কোন নিশ্চয়তা নেই।


নেতৃবৃন্দ বলেন, কর্মজীবি, শ্রমজীবি নারীদের অবস্থা আরও করুণ। তাকে বাইরের কাজ, ঘরের কাজ দুটোই সামলাতে হয়। কর্মক্ষেত্রে নেই নিরাপদ পরিবেশ এবং ন্যুনতম মজুরির নিশ্চয়তা। ৮ ঘন্টা কর্মঘন্টার হিসাব কাগজে কলমে থাকলেও ১২-১৫ ঘন্টা কাজ না করলে চলে না। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই ডে কেয়ার সেন্টার থাকে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জন্ম দেয় যে নারী তার জন্য মাতৃত্বকালীন সবেতন ৬ মাস ছুটির নিশ্চয়তা নেই। শ্রম আইনে সংশোধনের নামে ন্যুনতম অধিকারগুলো খর্ব করার নানা রকম আয়োজন চলতে থাকে।’

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘বর্তমানে নারী-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যা এক ভয়াবহ রপ নিয়েছে। যেকোন জায়গায় যেকোন বয়সের নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গণপরিবহন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এর প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেই বললেই চলে। মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেয়ার দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তোলার লক্ষ্যেও রাষ্ট্রের তেমন কোন উদ্যোগ নেই। বিজ্ঞাপন, নাটক, সিনেমা, ওয়াজে নারীকে পণ্যরূপে উপস্থাপন করা হয়। স্যোসাল মিডিয়া, ইন্টারনেট, মোবাইল এর মাধ্যমেও প্রায়শই নারীদের হয়রানী, বøাকমেইল এবং ট্রলের শিকার হতে হয়।

বর্তমান বাংলাদেশে সকল ক্ষেত্রে গণতন্ত্র সংকুচিত হচ্ছে, ধনী গরীব বৈষম্য বেড়ে চলেছে। নিত্যপন্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ জনজীবনের সংকটে মানুষ পর্যুদস্ত। এর প্রভাব এসে পড়ছে সমাজ- পরিবারে, মানুষের মনন জগতে। নৈতিক অবক্ষয় ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। নারী সমাজ এই অবক্ষয় থেকে মুক্ত থাকতে পারবে না। তাই নারীদের লড়াই করতে হবে সমাজে বিদ্যমান সকল শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে। লড়াই করতে হবে শোষণমূলক ব্যক্তি মালিকানার সমাজ ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে। তাহালেই সামগ্রিক অর্থে নারী মুক্তি সম্ভব।’

সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম ঢাকা নগর শাখার কমিটি:

সভাপতি – সেলিনা ইয়াসমিন কনা
সহসভাপতি – মুক্তা বিশ্বাস
সাধারণ সম্পাদক – রুখশানা আফরোজ আশা
সাংগঠনিক সম্পাদক – শরীফা বেগম
দপ্তর সম্পাদক – লাবনী আক্তার
অর্থ সম্পাদক – সেলিনা আক্তার
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক – নাজমীন আক্তার শারমীন
শ্রম বিষয়ক সম্পাদক – খাদিজা রহমান
সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক – সুস্মিতা মরিয়ম
সদস্য – ১. নূরজাহান ঝর্ণা
২. রাশিদা বেগম
৩. পারভীন আক্তার
৪. সেলিনা আক্তার
৫. নাসরীন আক্তার
৬. ইসরাত জাহান শাপলা

দাবিসমূহ:
১. সম্পত্তির উত্তরাধিকারসহ সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত ও ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু করতে হবে
২. সকল পেশার কর্মজীবি-শ্রমজীবি নারীদের সমকাজে সমমজুরি নিশ্চিত, কর্মস্থলে ডে কেয়ার সেন্টার চালু ও ৬ মাস
৩.মাতৃত্বকালীন সবেতন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে।
৪. গৃহ শ্রমিকদের কাজকে শ্রম আইনে অন্তর্ভূক্ত করে মজুরি, শ্রমঘন্টা নির্ধারণ ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
৫. গৃহস্থালী কাজের আর্থিক মূল্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরূপণ ও স্বীকৃতি দিতে হবে
৬. সারাদেশে অব্যাহত নারী-শিশু নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ, গণপরিবহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
৭. ঢাকা মহানগরে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত গণপরিবহন ও পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে

শেয়ার করুন