ডেস্ক রিপোর্ট

১২ নভেম্বর ২০২২, ১১:৫৩ অপরাহ্ণ

লুটপাটের দায় জনগণ আর কত বহন করবে: প্রশ্ন কমরেড ফিরোজের

আপডেট টাইম : নভেম্বর ১২, ২০২২ ১১:৫৩ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক:: বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, স্বাধীনতার ৫১ বছরে পুঁজিবাদী শোষণ, বৈষম্য আর দুঃশাসন জনগণের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। লুটপাটের দায় জনগণ আর কত বহন করবে বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বাসদ এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও রুশ বিপ্লব বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই প্রশ্ন করে বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, একদিকে জিডিপি আর মাথাপিছু আয়ের গল্প, উন্নয়নের নামে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধি, দেশ থেকে টাকা পাচার, বৈদেশিক ঋণ নিয়ে মেগা প্রকল্প, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ অন্যদিকে শ্রমিক কৃষক, মধ্যবিত্তের দুর্দশা, দ্রব্যমুল্যের উরধগতি, শিক্ষা চিকিৎসার খরচ বৃদ্ধি, নারীর নিরাপত্তাহীনতা সমান তালেই বাড়ছে। কখনও করোনার অজুহাত, কখনও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ব্যবসায়ী তোষণ নীতি ও দুর্নীতিকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাফল্য, রিজার্ভ নিয়ে এত বাগাড়ম্বরের পর দেখা যাচ্ছে লোড শেডিং আর ডলার ঘাটতি। জনগণের চোখে ধুলা দিয়ে অথবা কৃত্রিম সাফল্য প্রচার করে লুটপাটের ক্ষতি আড়াল করা যায় না। তিনি আরও বলেন, আইএমএফ এর কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ নেয়ার জন্য অসম শর্তে রাজি হওয়ার আগে প্রতিবছর ৭০০ কোটি ডলার পাচার বন্ধ করা উচিত ছিল। এখন আইএমএফ এর ঋণের অজুহাতে কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য খাতে বরাদ্দ কমানোর অপকৌশল করছে।

কমরেড ফিরোজ বলেন, একদিকে অর্থনৈতিক লুটপাট অন্যদিকে রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদী আক্রমণ চালাচ্ছে সরকার। গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার সব আজ কেড়ে নেয়া হচ্ছে। কখনো বিনা ভোটে, কখনো রাত্রিকালীন ভোটে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আস্থাহীন করে ফেলা হয়েছে। এর অবসানে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার আহŸান জানান তিনি।

আজ থেকে ১০৫ বছর আগে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর কমরেড লেনিন কীভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয় ক্ষতি মোকাবিলা আর মহামন্দা মোকাবিলা করে বেকারত্ব, অনাহার, নিরক্ষরতা, পতিতাবৃত্তি দূর করে মানুষের মর্যাদার সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই দৃষ্টান্ত এবং রাজনীতিকে আমরা অনুসরণ করতে চাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৯ বছর পরে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল তার প্রতিষ্ঠা লগ্নেই ঘোষণা করেছিলাম এদেশের মানুষের মুক্তির পথ সমাজতন্ত্র। পুঁজিবাদী পথে বিশ্বের কোথাও যেমন সাধারণ মানুষের মুক্তি আসেনি বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসেও তা সম্ভব হয় নি। এদেশের কৃষি উৎপাদন বেড়েছে, শিল্পের উৎপাদন বেড়েছে, পাশাপাশি ধনী, অতি ধনীদের সংখ্যাও বেড়েছে আর বেড়েছে জনজীবনে দুর্দশা। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রেখে মানুষ এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পাবেনা। তাই শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, কৃষি ফসলের ন্যায্য দাম, বেকারের চাকরি, ছাত্রের শিক্ষা, সকল মানুষের চিকিৎসা, নারীর নিরাপত্তা আর বৃদ্ধদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শোষণ, লুণ্ঠন, ফ্যাসিবাদী শাসন বিরোধী লড়াইকে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে পরিচালিত করতে হবে।

তিনি বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইকে তীব্রতর করার পাশাপাশি দলীয় সরকারের অধীনে নয় নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের আন্দোলনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।

বাসদ এর ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং মহান রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার, ১২ নভেম্বর বেলা ৩:৩০টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ।

পার্টির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতনসহ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী, বাসদ ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য আহসান হাবিব বুলবুল, খালেকুজ্জামান লিপন, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের দপ্তর সম্পাদক রুখসানা আফরোজ আশা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা শোভন রহমান। সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জুলফিকার আলী।

সমাবেশ শেষে একটি বর্ণাঢ্য লাল পতাকা মিছিল শাহবাগ, কাঁটাবন, সাইন্স ল্যাবরেটরি, ঢাকা কলেজ, নিউ মার্কেট, নিলখেত, টিএসসি হয়ে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।

শেয়ার করুন