ডেস্ক রিপোর্ট

৯ মার্চ ২০২২, ১২:৫০ অপরাহ্ণ

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চাইতে পারে বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : মার্চ ৯, ২০২২ ১২:৫০ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক:: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আসন্ন অংশীদারি সংলাপে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাতে পারে বাংলাদেশ। অপরদিকে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুলে থাকা নানা ইস্যু তুলতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। লেহি আইনের শর্তে বাংলাদেশ রাজি কিনা এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্র বিক্রির প্রস্তাবে ঢাকার সায় আছে কিনা সেই প্রশ্নও সামনে আসতে পারে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট কোয়াডের সঙ্গে সহযোগিতার ধরন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে কথাবার্তা আসাও অস্বাভাবিক নয়। যদিও বাংলাদেশ এমন অনেক ইস্যুতে অস্পষ্টতা বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করতে পারে।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ৮ম আবর্তের অংশীদারি সংলাপ আগামী ২০ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধি অংশ নেবেন। অংশীদারি সংলাপ নিয়ে ঢাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের আমলে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক, কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি এবং বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আসন্ন অংশীদারি সংলাপকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। অংশীদারি সংলাপ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আরও দু’টি প্লাটফর্ম রয়েছে। তার একটি নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংলাপ অপরটি বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনার জন্য অর্থনৈতিক সংলাপ। তবে অংশীদারি সংলাপে যেহেতু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়ে থাকে; কাজেই এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যু উত্থাপন সম্ভব।

জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায় যে, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা ইস্যু নতুন। এটি এজেন্ডাভুক্ত করা নিয়ে প্রাক আলোচনা হতে পারে। এজেন্ডাভুক্ত না হলেও এসব ইস্যু উত্থাপন করা সম্ভব। বাংলাদেশ মনে করে, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করা। ফলে আকস্মিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সংবাদে বাংলাদেশ বিস্মিত। বাংলাদেশ চায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হোক। কোনো সমস্যা থাকলে দুই দেশ আলোচনা করুক। এটাই সংলাপে বলা হবে। বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের লেহি আইনের অধীনে মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তা পেতে মানবাধিকার সুরক্ষা বাধ্যতামূলক। এই শর্ত দিয়ে একটি ফরমে সই করার জন্য বাংলাদেশকে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত তা সই করেনি বাংলাদেশ। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, শর্তটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি সংস্থা হিসাবে র‌্যাব এবং র‌্যাবের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তার বিষয়ে অনেকগুলো ইস্যু খুবই স্পর্শকাতর বলে মনে করে বাংলাদেশ। এ সকল ইস্যু দীর্ঘ মেয়াদে নেগোসিয়েশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এসব ইস্যুতে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংলাপে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে।

এপ্রিলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এসব ইস্যু উত্থাপন করা হলে বাংলাদেশ ইস্যুগুলোকে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংলাপে আলোচনার অনুরোধ জানানো হবে। তবে বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রস্তুতি এবং বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারণ করে রাখার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে অর্থনৈতিক সংলাপ। ফলে চলতি বছরে দ্বিপক্ষীয় অনেক ইস্যু আলোচনার টেবিলে উঠছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শিশুশ্রম, জোরপূর্বক শ্রম, সহিংসতা, কর্মস্থলে হয়রানির মতো ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের তরফে তোলা হতে পারে। বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে সংস্থা দেখাশোনা করে তার নাম আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশনস সংক্ষেপে এএফএল-সিআইও।

শ্রম অধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাতে একপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পদক্ষেপ না নেয় সে জন্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে এএফএল-সিআইও’র সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সংলাপে টিকা ব্যবস্থাপনা এবং কোভিড সংকটে সমর্থনের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। বিশেষ করে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কতটা পাওয়া গেছে এবং ভবিষ্যতে কতটা পাওয়া যাবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্রটি আরও জানায়, অংশীদারি সংলাপে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তি খাতে মার্কিন বিনিয়োগ আহ্বান করতে পারে। এক্ষেত্রে সরাসরি বিনিয়োগ এবং যৌথ উদ্যোগে শিল্প প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। সন্ত্রাস দমন, মাদক নিয়ন্ত্রণের মতো ইস্যুতে গোয়েন্দাদের সামর্থ্য বৃদ্ধির ব্যাপারে মার্কিন সহায়তা কামনা করতে পারে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর বাংলাদেশ কীভাবে বাণিজ্য ক্ষেত্রে মার্কিন সহায়তা পেতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। জিএসপি সুবিধা পুনরায় চালুর জন্য অনুরোধ করতে পারে বাংলাদেশ। ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট পুনরায় চালুর বিষয়ে কারিগরি সহায়তার পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি উন্নয়ন সহায়তা হিসাবে ৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার সহায়তা বাংলাদেশকে দেওয়ার ব্যাপারে চুক্তি করেছে। কিন্তু এসব সহায়তা যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে দিয়ে থাকে। সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় মার্কিন সহায়তা বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে দেওয়ার জন্য ঢাকার তরফে অনুরোধ করা হতে পারে।

বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকা ও কক্সবাজারের কাছে বিনিয়োগ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানানো হবে। নীল অর্থনীতির বিষয়ে বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কামনা করা হতে পারে। সমাজের অনগ্রসর অংশের মানুষ যাতে বিচার পেতে পারেন সেই লক্ষ্যে মার্কিন সহায়তা সংক্রান্ত একটি চুক্তির বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।

অংশীদারি সংলাপে জলবায়ু পরিবর্তন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহায়তা, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, খনিজ সম্পদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, নৌপরিবহণ প্রভৃতি খাতে মার্কিন সহায়তা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা আছে।

শেয়ার করুন