ডেস্ক রিপোর্ট

২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ

রংপুরে প্রস্তুত ইসি, প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা

আপডেট টাইম : ডিসেম্বর ২৪, ২০২২ ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণের বাকি আর তিন দিন। আগামী ২৭ ডিসেম্বর সেখানে ভোটগ্রহণ করা হবে। শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় এখন জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, তত নির্বাচন কমিশনের তৎপরতাও বাড়ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে রংপুর সিটির ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে শুরু হয়েছে মক ভোট। ইভিএমে ভোট দেওয়ার এই শিখন কার্যক্রম চলবে দুই দিন। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ভোটার শিখন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। শিখন কার্যক্রমে ভোটাররা ইভিএমে ভোটদান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাচ্ছেন।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোটের দিন সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএমে নির্বাচন হবে। এজন্য রংপুরে ৩ হাজারের বেশি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চলে এসেছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজও শেষের দিকে।

এবারের নির্বাচনে মাঠে থাকবেন ৪৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট। ইতোমধ্যে নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে ১৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২৫ ডিসেম্বর থেকে পাঁচ দিন আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর নির্বাচনী এলাকায় ২৫ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ২৮ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসি।

সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত ইভিএম রংপুর নির্বাচন ভবনে রাখা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অথবা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মনোনীত ব্যক্তিরা ইভিএম কাস্টমাইজেশন সেন্টারে উপস্থিত হয়ে কাস্টমাইজেশনের বিভিন্ন দিক অবলোকন করতে পারবেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন প্রশিক্ষিত দুইজন কর্মকর্তা/কর্মচারী কারিগরি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি ভোটগ্রহণের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটগ্রহণের আগের দিন ২৬ ডিসেম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নামের বিপরীতে ব্যালট ইউনিটে প্রতীক সন্নিবেশিত রয়েছে কি না তা ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা যাচাই করবেন।

এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বুধবার বিকেলে রংপুরে আসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তিনি রংপুর সরকারি কলেজের অডিটরিয়ামে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এসময় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নির্ভয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক নির্বাচনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আপনারা নির্ভয়ে দায়িত্বপালন করবেন।

তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। ভোট চলাকালীন ইভিএমে সমস্যা হলে এক্সপার্ট রয়েছে, তাৎক্ষণিক সমাধান করা হবে। নির্বাচনে যত ইভিএম দরকার তার থেকে দ্বিগুণ ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইভিএমে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।

রাশেদা সুলতানা বলেন, ভোট চলাকালীন ইভিএমে ভোটপ্রদান-সংক্রান্ত একটি কাগজের মাধ্যমে লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের দেখানো হবে কীভাবে ভোট দিতে হবে। ইতোমধ্যে পোলিং এজেন্ট, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, মক ভোটের আয়োজন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ইভিএম নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করতে আইনের কাঠামোয় যা যা দরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন চলাকালীন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। সেই সময়ে প্রশাসনের কেউ হস্তক্ষেপ কিংবা প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করলে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে বলেছি। এরকম কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করতে প্রয়োজনমতো সর্বোচ্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্বে থাকবে।

গত ৯ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের প্রচারণায় মুখর হয়েছে উঠেছে পুরো নগরী। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাড়া-মহল্লা, হাটবাজার চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। বসে নেই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক, আত্মীয়স্বজনরাও। বিভিন্নস্থানে পথসভা ও গণসংযোগে শীতের আমেজ কেটে এখন সবাই ব্যস্ত ভোটের আমেজে। প্রার্থীরা নিজেকে যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ডিজিটাল মাধ্যমেও চলছে ব্যাপক প্রচারণা। সব মিলিয়ে ভোটগ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসাতে জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ।

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নয়জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভোটের মাঠে লাঙ্গল প্রতীক ও ব্যক্তি জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবার সম্ভবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা না থাকায় ভোটে এর প্রভাব পড়তে পারে। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়ালও প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আবু রায়হান, খেলাফত মজলিসের প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু, জাসদের শফিয়ার রহমান ,জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে ৯ জন মেয়র ছাড়াও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৬৮ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর ১৮৩ জনসহ মোট ২৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে সার্বিক বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা আফতাব হোসেন বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমরা নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে প্রার্থীদের মধ্যে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। প্রতীক বরাদ্দের পর তাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। আচরণবিধি প্রতিপালনে সবাইকে বারবার উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা শেষ হয়েছে। পাড়া-মহল্লার পাশাপাশি জনবহুল এলাকাগুলোতে ইভিএম প্রদর্শনী করা হয়েছে। এখন মক ভোট কার্যক্রম চলছে। সবমিলিয়ে আমাদের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। ভোটগ্রহণের আগে ও পরে নির্বাচনী অপরাধ রোধে পাঁচ দিন দায়িত্ব পালন করবেন ৪৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট। এদের মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৩৩ জন এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ১৬ জন।

প্রসঙ্গত, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সিটিতে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন পুরুষ এবং দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন নারী ভোটার ২২৯টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এবার মেয়র পদে ৯ জনসহ সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৮ এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৮৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

শেয়ার করুন