ডেস্ক রিপোর্ট

১৬ জুন ২০২২, ৯:০৫ অপরাহ্ণ

‘‘অধিকার’ এর নিবন্ধন নবায়নের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে’

আপডেট টাইম : জুন ১৬, ২০২২ ৯:০৫ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক:: সম্প্রতি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ‘অধিকার’-এর নিবন্ধন নবায়নের আবেদন বাতিল করেছে সরকারের এনজিওবিষয়ক ব্যুরো। অধিকার প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী কর্তৃক গুম-খুন-ক্রসফায়ারের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নথিভুক্ত ও প্রকাশের ব্যবস্থা করছে। নিবন্ধন নবায়ন নিয়ে অধিকারের করা একটি রিটের বিষয়ে হাইকোর্টের রুলের ওপর শুনানি চলাকালীন অবস্থাতেই সংগঠনটির আবেদন বাতিল করেছে সরকার। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ও এর পরের বছর সরকারের রেজিস্ট্রেশন পাওয়া সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি নবায়নের আবেদনটি ২০১৪ সালের। কিন্তু অনুমতি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আট বছর পর এবং সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে আবেদন নিষ্পত্তির জন্য আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার তিন বছর পর, যখন দীর্ঘ নীরবতার পর গত ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টের রুলের ওপর সরকার তার জবাব দাখিল করে এবং মামলাটির শুনানি শুরু হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সংগঠনটি নাকি ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে বহির্বিশ্বে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করে।’ আরও দাবি করা হয়, সংগঠনটি নাকি ‘কথিত গুম-খুনসহ বিচারবহির্ভূত বিভিন্ন হত্যার বিষয়ে নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে।’ অথচ বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষ অবগত আছেন যে, সরকারের বিভিন্ন বাহিনী কিভাবে বিগত একযুগ যাবত গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার নামে ক্রসফায়ারের মচ্ছব চালিয়েছে। বিরোধীমত দমন করতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে পেশাদার খুনী বাহিনীর মতো ব্যবহার করেছে। এমনকি তাদেরই বাহিনীর লোকেদের হাতে সরকারদলীয় বহু নেতাকর্মীরা খুন হয়েছেন এবং তাদের অনেকের বিচার কার্যক্রম আদালতে চলমান।

এরপরেও সরকার যখন দাবি করে ‘কথিত গুম-খুন’ তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না বর্তমান সরকার মানবাধিকারের বিষয়কে কতটুকু কেয়ার করে। সেইসাথে দীর্ঘদিন যাবত জনস্বার্থে কাজ করে আসা একটা সংগঠনের নিবন্ধন আবেদন এভাবে বাতিল করে দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানে ঘোষিত ‘সংগঠন করার অধিকার’-এর স্পিরিটের সাথে সাংঘর্ষিক আইনি ক্ষমতার অন্যায় প্রয়োগ হয়েছে বলেই আমরা মনে করি। সরকারের এ সিদ্ধান্ত আবারও প্রমাণ করে, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অপরিহার্য উপাদান জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে সক্রিয় পক্ষসমূহের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করতে এবং অস্তিত্ব বিলীন করতে সরকার ভীষণ তৎপর। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত না করে সেগুলোর তথ্য প্রকাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে সরকারই বরং বহির্বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের সুনাম কলঙ্কিত করছে। অধিকারের নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়াটি মানবাধিকার-রক্ষক ও সরকার সমালোচকদের উপর সরকারের রাজনৈতিক জুলুমের অংশ মনে করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের সকল মানবিক ও গণতান্ত্রিক মানুষের প্রতি সরকারের এইরকম ‘এবসিলিউট পাওয়ার’ এর নগ্ন আক্রমণের বিরুদ্ধে নিজেদের জীবন-জীবিকা-মর্যাদা-স্বাধীনতা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানায়। ঐক্যবদ্ধভাবে এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে অপসারণ এবং শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি মানবিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানায়।

শেয়ার করুন