ডেস্ক রিপোর্ট
১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৫৪ অপরাহ্ণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: : সীমান্তে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে সীমান্ত এলাকায় অঞ্চলে অন্তত ২১ জন নিহত ও আরও অনেকে আহত হয়েছেন। বিগত কয়েক দিন ধরে এক সময়ের মিত্র এই দুই দেশের মধ্যে শত্রুতা ক্রমেই বাড়ছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে ইতোমধ্যে আফগান সেনাবাহিনীর ৪টি সীমান্ত পোস্ট এবং ৬টি ট্যাংক ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।
চলতি বছরের ১১ থেকে ১২ অক্টোবর আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে ২,৬০০ কিলোমিটার সীমান্তে প্রচণ্ড সংঘর্ষ এবং গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।
এসময় আফগান তালেবান বাহিনী পাকিস্তানের সেনা পোস্টগুলোতে ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে, কুনার এবং হেলমান্দের মতো প্রদেশে ফাঁড়িগুলোও দখল করে। এরপর পাকিস্তান কামান এবং ট্যাঙ্ক দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করে, সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেয়। এই সংঘর্ষে মোট ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়, যা ২০২১ সালে কাবুলে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলের দিকে কুররম সীমান্তে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে যৌথভাবে হামলা চালায় আফগানিস্তানের সেনাবাহনী এবং পাকিস্তানের নিষিদ্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতভর চলা এই সংঘর্ষ আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের স্পিন বোলডাক জেলা ও পাকিস্তানের চামান জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
এক্সে দেওয়া পোস্টে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ অভিযোগ করেন, পাকিস্তানি সেনারা আগে গুলি চালিয়ে সংঘর্ষ শুরু করে। তিনি বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী ‘হালকা ও ভারী অস্ত্র’ ব্যবহার করে আফগানিস্তানের ভেতরে হামলা চালায়, এতে ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও শতাধিক আহত হন।
মুজাহিদ দাবি করেন, আফগান বাহিনী পাল্টা হামলা চালিয়ে ‘বিশাল সংখ্যক’ পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে, পাকিস্তানি অস্ত্র ও ট্যাংক দখল করেছে এবং তাদের সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে। তবে তিনি নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা উল্লেখ করেননি।
স্পিন বোলডাক জেলার জনসংযোগ কর্মকর্তা আলী মোহাম্মদ হাকমাল জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি এক জেলা হাসপাতালের কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে ৮০ জন নারী ও শিশু রয়েছে।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথমে তালেবানই পাকিস্তানের একটি সামরিক চৌকি ও সীমান্তের আশপাশে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে এবং চার পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিক আহত হন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সংঘর্ষে ছয়জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এই সহিংসতা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে।
পাকিস্তানের চামান জেলার বাসিন্দা নাজিবুল্লাহ খান বলেন, গোলাগুলির সময় সীমান্তের কাছের অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘মানুষ খুব কষ্টে আছে। গোলার আঘাতে অনেকের বাড়িঘরে আগুন লেগে গেছে।’
পাকিস্তান সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা আফগান তালেবানের হামলা ‘কার্যকরভাবে প্রতিহত’ করেছে। এতে ১৫ থেকে ২০ জন তালেবান যোদ্ধা নিহত ও আরও অনেকে আহত হয়েছে। সেনাবাহিনী আরও জানায়, একই রাতে উত্তরের কুররম জেলাতেও তারা আলাদা এক তালেবান হামলা প্রতিহত করেছে।