ডেস্ক রিপোর্ট

১১ মে ২০২৫, ৭:৪১ অপরাহ্ণ

নির্বাহী আদেশে কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়

আপডেট টাইম : মে ১১, ২০২৫ ৭:৪১ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: বিচারিক প্রক্রিয়ায় জুলাই গণহত্যার জন্য দায়ীদের ও দল হিসেবে আওয়ামী লীগের এবং একাত্তরের গণহত্যার জন্য দায়ী যুদ্ধাপরাধী জামাতেরও বিচার দেশবাসী প্রত্যাশা করে

সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ আজ ১১ মে ২০২৫ সংবাদপত্রে পাঠানো এক বিব্রতিতে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রকারান্তরে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের প্রতিই মানুষের সহানুভূতি স্রিষ্টি করবে। তিনি বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা না দিয়ে ঢালাও মামলা দিয়ে মামলাকে প্রহসনে পরিণত করার চক্রান্ত বন্ধ করে জুলাই গণহত্যার জন্য দায়ীদের এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করার দাবি জানান।

কমরেড ফিরোজ বলেন, জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত পনের বছরের শাসনে আওয়ামী লীগ দেশের সকল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, অসংখ্য মানুষের গুম-খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী । এখনও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জুলাই গণহত্যাসহ তাদের বিগত কর্মকান্ডের জন্য ন্যূনতম অনুশোচনাও নেই। কিন্তু তারপরও সন্ত্রাস দমন আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মত অগণতান্ত্রিক আইনের মাধ্যমে নির্বাহী আদেশে কোন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা অথবা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার মত যেকোন সিদ্ধান্ত দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের পথে প্রতিবন্ধক। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের আইন সংশোধন করে জুলাই গণহত্যাসহ সকল রাজনৈতিক ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের দায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করার মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া সঠিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলে তিনি মনে করেন।

কমরেড ফিরোজ আরও বলেন, গত ৫৪ বছর ধরে এদেশের মানুষ একাত্তরের গণহত্যার দায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে বিচার করার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কোন সরকার এই উদ্যোগ নেয়নি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারও এই দাবিকে উপেক্ষা করে জামায়াত ইসলামের যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে। জুলাই গণ অভ্যূত্থানকালে সেই ফ্যাসিবাদী সরকারও সন্ত্রাস দমন আইনে নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে জনগণের মনযোগ ভিন্ন দিকে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচারের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধ এবং মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার দায়ে জামায়াতে ইসলামীরও বিচার দাবি করেন তিনি।

কমরেড ফিরোজ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সমাবেশে যারা বা যেসব সংগঠন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে স্লোগান উচ্চারণ করেছে এবং জাতীয় সংগীত গাইতে আন্দোলনকারীদের বাধা দিয়েছে তাদেরকেও চিহ্নিত করে বিচারপূর্বক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত অভ্যূত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন, প্রকৃত দায়িদের চিহ্নিত করে বিচার এবং প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার করে অতি দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু আমরা সরকারের দিক থেকে এরজন্য আস্থাশীল কোন ভূমিকা লক্ষ্য করছি না। বরঞ্চ সময়ে সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে মব তৈরি করে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করে সাম্রাজ্যবাদীদের নানা এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুযোগ করে দেয়ার কৌশল হচ্ছে কি না সেদিকে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন । একইসাথে কমরেড ফিরোজ মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের সাথে কথিত মানবিক করিডোর দেয়া, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাতে তুলে দেয়াসহ জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তসমূহ অন্তর্বর্ত্তী সরকারের মত অনির্বাচিত সরকারের এখতিয়ার বহির্ভূত বলে উল্লেখ করেন।

শেয়ার করুন