ডেস্ক রিপোর্ট

৩ মে ২০২৫, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

মে দিবস উপলক্ষে সিপিবি সিলেট জেলার আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

আপডেট টাইম : মে ৩, ২০২৫ ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সিলেট জেলা কমিটির উদ্যোগে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে শ্রমিক সমাবেশ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভার পূর্বে একটি লাল পতাকার মিছিল নগরীর বভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এ মিছিলে শ্রমিক-কর্মচারি ছাড়াও পার্টি ও গণসংগঠনের নেতা-কর্মিরা অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সিলেট জেলা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি কমরেড সৈয়দ ফরহাদ হোসেন এর সভাপতিত্বে এবং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কমরেড আনোয়ার হোসেন সুমন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অথিতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক কমরেড এস এম শুভ।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খায়রুল হাছান, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি প্রদীপ দেবরায়, চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক সবুজ তাঁতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি মনীষা ওয়াহিদ প্রমুখ।

আলোচনাসভায় বক্তারা বলেন, পহেলা মে হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিন। ১৩৯ বছর আগে ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকেরা কাজের সময়সীমা আট ঘণ্টা নির্ধারণ, কাজের উন্নত পরিবেশ, মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করেন। দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সেদিন রাজপথে নেমে এসেছিলেন। কিন্তু পুলিশের গুলিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন অসংখ্য শ্রমিক। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সারা বিশ্ব সোচ্চার হয়ে উঠেছিল।

বক্তারা বলেন, শিকাগোর শ্রমিকদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টা করার দাবি সেই সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকলেও স্বাধীনতার ৫৪ পরেও আমাদের দেশে এখনো সকল ক্ষেত্রে এ দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কাজের উন্নত পরিবেশ নেই। প্রয়োজনীয় মজুরিও শ্রমিকরা পাচ্ছেন না। মৌলিক চাহিদা পূরণ করে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য জাতীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা হয়নি। বিশেষ করে চা-শ্রমিক ও পোষাক শ্রমিকদের অবস্থা এখনো শোচনীয়। এই ২০২৫ সালেও চা-শ্রমিক দৈনিক মজুরি মাত্র ১৭০ টাকা। শুধু মজুরির বিষয়ই নয়, তাদের বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষারও কোনো সুব্যবস্থা নেই। এক অবর্ণনীয় অবস্থার মধ্য দিয়ে তারা দিনাতিপাত করছেন। বৈষম্যহীন সমাজের আকাঙ্ক্ষায় আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের পাশাপাশি শ্রমিকরাও অকাতরে জীবন দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করছে। এ সরকারের আমলেও স্বৈরাচারী সরকারের মতোই নায্য মজুরির দাবিতে রাজপথে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর পুলিশবাহিনী গুলি চালিয়ে শ্রমিক হত্যা করছে। শুধু শ্রম-বৈষম্যই নয়, শিক্ষা থেকে শুরু করে চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েই গেল! বৈষম্য অবসানের বদলে শ্রমিকরা এখনো বঞ্চনার শিকার হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়।

বক্তারা আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জিত নতুন প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের এসব বৈষম্য অবসানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখনই প্রয়োজন। নতুবা বঞ্চনা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় শ্রমিকরা আবারো রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবে বলে বক্তারা সতর্ক করেন।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেট জেলা সংসদের শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

শেয়ার করুন