ডেস্ক রিপোর্ট

১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৮ অপরাহ্ণ

বিএনপি বলেন, আওয়ামী লীগ বলেন, সব একই জিনিস: ফরহাদ মজহার

আপডেট টাইম : এপ্রিল ১৯, ২০২৫ ১০:৪৮ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক : ‘জুলাই ঘোষণা’ না হওয়ায় ছাত্ররা বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ে গেছেন বলে মনে করেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি ছাত্রদের জুলাই ঘোষণা দিতে দেননি। এটা অন্যায় কাজ হয়েছে।… এরা বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ে গেছে আজকে। এই ঝুঁকির দায় কে নেবে? কারণ বিএনপি বলেন, আওয়ামী লীগ বলেন, সব একই জিনিস। এরা তো এই তরুণদের বাঁচতে দেবে না।’

আজ শনিবার বিকেলে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘রাষ্ট্র গঠনে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ও তার বাস্তবতা’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফরহাদ মজহার। গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের অনেকেই তাঁর পাঠচক্রে ছিলেন বলেও অনুষ্ঠানে জানান তিনি।

‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংশোধন আন্দোলন’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত এই আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনি যে জুলাই ঘোষণা করতে দেন নাই, আপনি কী যুক্তিতে দিলেন না? বলছেন, আপনি জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করবেন। একটা কথা বলতে চাই, বাপের নাম কি ছেলে দেয়?’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করবে সরকার। তবে ঘোষণাপত্র সরকার দেবে না। সরকার ঘোষণাপত্রের প্রক্রিয়াকে সহায়তা করবে। ঘোষণাপত্র আসবে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার বৈঠকও করেছিল। এরপর জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এখন বিষয়টি আবার সামনে এনেছেন ফরহাদ মজহার।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনারাই বলছেন, অধ্যাপক ইউনূসকে পাঁচ বছর থাকতে। উনি কী করে থাকবেন পাঁচ বছর। আপনি তো ভুল করে ফেলেছেন প্রথম দিনই। দ্বিতীয় তর্কটা করছেন যে ইউনূস নির্বাচিত না। আরে ভাই নির্বাচিত না মানে কী। তিনি রক্তদানের মধ্য দিয়ে হয়েছেন। আমি রক্ত দিয়ে তাঁকে নির্বাচিত করেছি।’

গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচন নয়—এটি আবার মনে করিয়ে দিয়ে এবং কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘যদি তোমরা অভ্যুত্থান করতে পারতা, তাহলে তোমরাই তো থাকতা ক্ষমতায়। তোমরা তো পারো নাই। তোমরা তো শেখ হাসিনার পরাজিত শক্তির মতো। এখন তোমরা ঘুরতেছ কী কথা বইলা—নির্বাচন, নির্বাচন, নির্বাচন।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে রক্ষার জন্য লড়ছেন জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমরা লড়তেছি অন্তর্বর্তী সরকারকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করার জন্য। আমরা যেকোনো মূল্যে রক্ষা করব। কিন্তু আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) ভুল করতে পারবেন না। কারণ, আপনার ভুলের ওপর আমাদের জীবন নির্ভর করছে। আমরা ভুল করতে দেব না আপনাকে। আমাদের কথা শুনতে হবে। আমরা অতি দ্রুত আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। এ কথা পরিষ্কার বলছি। আমাদের সময় দিতে হবে।’

গণ–অভ্যুত্থানের সবচেয়ে কঠিন সময়ে মাঠে ছিলেন উল্লেখ করে ফরহাদ মহজার বলেন, ‘আপনি (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রিয়। আমরা আপনার মূল্য বুঝব। আমরা আপনার মর্যাদা বুঝব।’

এই গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংশোধন আন্দোলন’ এর চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসাইন। সঞ্চালনায় ছিলেন এই প্ল্যাটফর্মের যুগ্ম আহ্বায়ক আকবর হোসেন।

দেলোয়ার হোসেন দাবি করেন, তাঁদের প্ল্যাটফর্মে ১৫০টি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ছিল। এই অনুষ্ঠানে ৫০টি দলের নেতারা অংশ নিয়েছেন।

ছোট ছোট এসব দলের বিষয়ে গোলটেবিল আলোচনায় ফরহাদ মজহার বলেন, ‘ছোট ছোট যে দলগুলো, আমরা ইউনূসের সঙ্গে একশ ভাগ আছি। আমরা কথা বলব। আমাদের কথা শুনতে হবে।… আপনি বড় বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলবেন আর আমাদের সঙ্গে বলবেন না, তা তো হবে না।’

 

শেয়ার করুন