ডেস্ক রিপোর্ট
১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৯:২৭ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: বাসদ নেতা ও গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ নিঃশর্ত মুক্তি, নেতৃবৃন্দের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ বিকাল ৫ টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্য সচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব। বক্তব্য রাখেন বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য এস.এম কাদির, বাসদ বর্ধিত ফোরামের সদস্য প্রদীপ সরকার, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, জেলা সভাপতি ও বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য সেলিম মাহমুদকে গত রাত ১:৩০ টায় তার ফতুল্লার বাসার গেট ভেঙে তাকে যৌথ বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। তুলে নেয়ার সময় তিনিসহ তার পরিবারের সাথে যৌথবাহিনী খুবই খারাপ আচরণ করেছে। তার ৯ম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলেকে হাত দিয়ে থাপ্পড় ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। থানায় তার বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। তারপরও রাতের আঁধারে তুলে নেয়া হলো। রবিনটেক্স কারখানায় ইউনিয়ন জমা দেয়া শ্রমিকদের পাশে থাকা কি তার অপরাধ? এজন্যই কি প্রস্তাবিত ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তারসহ ২২ জন শ্রমিককে কারাগারে যেতে হলো? এর উত্তর কে দিবে? পুলিশ বলছে, বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে জেলখানায় পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, যারা সারাক্ষণ মুজিববাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, তারাই আবার মুজিবের প্রণীত বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করছে! কি সেলুকাস! এই সেলিম মাহমুদই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বাম জোটের ডাকা হরতালে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের ব্যাপক আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, রবিনটেক্সের শ্রমিকরা ইউনিয়ন গঠন ও নিবন্ধন করার প্রচেষ্টা শুরু করার পর থেকেই কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিত ভাবে শ্রমিকদের সংগঠিত ভাবে মত প্রকাশের অধিকারকে দমন করতে ইউনিয়ন নির্মুল করার কাজ চালিয়ে আসছিল। রবিনটেক্স কর্তৃপক্ষের এই শ্রমিক বিরোধী অবস্থান নিয়ে শ্রম আদালতে ইউনিয়ন নিবন্ধনের মামলা চলমান। ইউনিয়ন নিবন্ধনের কার্যক্রম অমিমাংসিত থাকা অবস্খায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কে গত চার মাস যাবত কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ইউনিয়ন নিবন্ধনের প্রক্রিয়া অনিষ্পন্ন থাকা অবস্খায় ইউনিয়ন কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যূত করা যাবেনা- শ্রম আইনের এই বিধান সত্ত্বেও ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক কে ২৬ ধারা অনুসারে চাকরিচ্যূত করার দাবি করা হয়েছে। শ্রম অধিদপ্তর ও শ্রম পরিদর্শন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে অভিযোগ করেও শ্রমিকরা এই আইন লঙ্ঘনের প্রতিকার পায়নি।
শ্রম প্রশাসনের এই নিষ্কৃয়তা শ্রমিক নিপীড়ক রবিনটেক্স কর্তৃপক্ষকে শ্রমিকদের ইউনিয়ন কে নির্মূল করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উৎসাহিত করেছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ, পরিকল্পিত ভাবে উস্কানি দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনে ঠেলে দিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। পুলিশি হয়রানি আর চাকরিচ্যূত করে আতংক সৃষ্টির মাধ্যমে শ্রমিক ইউনিয়নকে র্নির্মল করার কৌশল হিসাবে ইউনিয়ন কর্মকর্তাসহ প্রতিবাদী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে, ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তারসহ ২২ জন শ্রমিককে গ্রেফতার করিয়েছে। পুলিশি হয়রানির মুখে অসহায় হয়ে পড়া এই শ্রমিকদের আইনি সহায়তা দেওয়া, ইউনিয়নের কাজ এগিয়ে নিতে তাদের উ]সাহিত করার মানবিক দায়িত্ব পালন করছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ। রবিনটেক্সের দুর্বিত্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিপিড়িত শ্রমিকদের আশ্রয়হীন করে দিয়ে বাধামুক্ত ভাবে শ্রম শোষণ করতে সেলিম মাহমুদ কে গ্রেফতার করিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বায়িত্ব ছিল দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত দেশের বৃহত্তর অংশের শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আমরা দেখছি এসরকারও বিগত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের মতোই শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠ রোধ করতে শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলার নির্যাতনের পথ গ্রহণ করছে। এভাবে মালিকদের শোষণের স্বার্থ রক্ষায় সরকার শ্রমিক নেতা ও শ্রমিকদের নির্যাতন চালালে এর কঠিন প্রতিক্রিয়ায় এসরকারকেও পরতে হবে।