ডেস্ক রিপোর্ট
৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১৫ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যাটারিচালিত যানবাহনে চাপিয়ে দেওয়া ৩২৫০ টাকার জুলুম বন্ধ, জব্দকৃত গাড়ি ১০ দিন পর্যন্ত আটকে রাখার বিধান বাতিলসহ বিআরটিএ’র অনুমোদিত লাইসেন্স, নীতিমালা,রুট পারমিট, সার্ভিস লেম নির্মাণ করার দাবিতে ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা কমিটির বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা কমিটির আহ্বায়ক আল কাদেরী জয়ের নেতৃত্বে ৩০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১ টায় আগ্রাবাদে চট্টগ্রাম বন্দর ডিসি (ট্রাফিক) এর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
এসময় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্য সচিব মো.মনির হোসেন, পতেঙ্গা থানা কমিটির সহ সভাপতি মো.মাসুদ, আবদুর নুর, সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ, অঞ্চল কমিটির সহ-সভাপতি জহুরুল আলম, সাধারণ সম্পাদক মো.মুসলিম, সহ সাধারণ সম্পাদক মো.সেলিম, অর্থ সম্পাদক মো. আলমগীর, সদস্য মো.দিদার, শ্রমিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন, সদস্য আহমদ জসিম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি মিরাজ উদ্দিন, পতেঙ্গা, কাঠগড়, জালালাবাদ, পাহাড়তলী, খুলশী, আগ্রাবাদ, বেপারীপাড়া, হালিশহর ও বিভিন্ন থানা ও অঞ্চল কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সারাদেশের মতন চট্টগ্রাম নগরীতেও লক্ষ লক্ষ মানুষ ব্যাটারিচালিত রিক্সা, ইজিবাইক চালনা এবং আনুষঙ্গিক নানা কাজের উপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে এবং বিভিন্ন জায়গায় এটা সাধারণ মানুষের একমাত্র বাহন। এই রিক্সা ভ্যান ও ইজিবাইক যাত্রী পরিবহন, পণ্য পরিবহন এমনকি পরিবেশ উপযোগী পরিবহনের ক্ষেত্রে দেশের সর্বত্র ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎ চালিত বলে এই সব বাহন শব্দ দূষণ কিংবা পরিবেশ দূষণ করে না। ছোট ছোট গলিপথে চলাচল করতে পারে এবং ভাড়া কম বলে এই সব বাহন দ্রুত সারা দেশে প্রয়োজনীয় ও জনহিত বাহনে পরিণত হয়েছে।
সারাদেশের মত চট্টগ্রাম শহরের পরিস্থিতিও ভিন্ন নয়। অথচ আমরা দেখলাম সড়কে শৃঙ্খলা বিধান ও আইন প্রয়োগের নিমিত্তে চট্টগ্রামে ব্যাটারিচলিত রিকশা, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন গাড়িতে Tow বাবদ ৩২৫০/= টাকা( রেকার খরচ ৭৫০/= টাকা এবং জরিমানা ২৫০০/=) নেয়া হচ্ছে যা সারা বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। এমনকি যেখানে ঢাকা শহরের মতন গুরুত্বপূর্ণ শহর ও দেশের রাজধানীতে খুব সহজে গাড়ি ছেড়ে দেয় সেখানে চট্টগ্রামে ১০ দিন পর্যন্ত এই গাড়ি জব্দ করা হচ্ছে।এতে গাড়ি ও ব্যাটারির স্থায়িত্ব যেমন নষ্ট হয়ে পড়ে তেমনি এই গাড়িগুলোর চালক, কোম্পানি সকলেই দারিদ্র্যের মুখোমুখি হয়ে যায়। বেকার হয়ে তাদের মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়। এরইমধ্যে মাঠ পর্যায়ে দেখা গেছে অনেকসময় গলির ভেতর থেকে ও গাড়ি জব্দ করা হয়। এরকম পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই আমরা এই লক্ষ লক্ষ অসহায় শ্রমিক, চালক, গাড়ি ও গ্যারেজ স্বত্ত্বাধিকারীদের প্রতিনিধি হয়ে আপনার কাছে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমাদের দাবিসমূহ তুলে ধরছি।
আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী বর্তমান সময়ে দেশে শাসনকাঠামোয় পরিবর্তন আসলেও সিংহভাগ সাধারণ চালক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ তাদের সমস্যা সংকটের নিরসন ঘটেনি। যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে এদেশের ছাত্র শ্রমিক জনতা শহীদ হয়েছে, অসংখ্য পরিবার হয়েছে স্বজনহারা। সেই দেশেই এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলে চট্টগ্রামে লক্ষ লক্ষ ব্যাটারিচালিত যানবাহনে এই ধরনের পদক্ষেপ খুবই বৈষম্যমূলক এক রীতিমতো শ্রমিকদের উপর জুলুম ছাড়া আর কিছু নয়। বর্তমানেও বিভিন্নভাবে অতীতের মতন চাঁদাবাজি যেন তৈরি না হয় তা লক্ষ্য রাখা দরকার বলে মনে করি।
একথা সকলেই স্বীকার করবেন যে, অর্থনৈতিক কারনে দেশের মানুষের চলাচল ও যানবাহনের প্রয়োজন বেড়েছে মানুষের বাহন হিসেবে রিক্সা, ব্যাটারি রিক্সা-ভ্যান ও ইজি বাইকের প্রয়োজনীয়তা তাই আজ কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। একারনেই একদিকে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা অন্যদিকে সহজ ও সস্তা পরিবহণ হিসেবে তিন চাকার এই বাহন শুধু জনপ্রিয়ই নয় অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি, সল্প দূরত্বে অল্প পরিমাণের পণ্য পরিবহণ এমনকি রোগী পরিবহনেও জনগনের হাতের কাছের বাহন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এইসব বাহন। দেশেই তৈরি বলে এই বাহন নির্মাণ শিল্পে বিপুল পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। রিক্সা চালানোর মত প্রচণ্ড কায়িক এবং অমানবিক বাহনের বিপরীতে ব্যাটারিচালিত এইসব বাহন যেমন চালকের জন্য কিছুটা আরামদায়ক যাত্রীদের জন্যও সন্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। এটা বায়ু ও শব্দ দূষণ করে না এবং পরিবেশ বান্ধব। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে স্থানীয় কারিগর দ্বারা তৈরি এইসব বাহনের কিছু কারিগরি ত্রুটি থাকায় তা অনেকের কাছে বিপজ্জনক বাহন হিসেবে বিবেচিত হতো। ইতিমধ্যেই সে সব ত্রুটি চিহ্নিত করে কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে ফলে দুর্ঘটনার হার অন্যান্য বাহনের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে।
আমরা ব্যাটারি রিক্সা, ভ্যান, ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে এইসব বাহনের কারিগরি উন্নতি সাধনের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে আধুনিকায়নের দাবী করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। এ ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হলে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের নিরাপদ কর্মসংস্থান ও কোটি কোটি যাত্রীর উপকার হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। বক্তারা একইসাথে চট্টগ্রাম নগরীতে ইজিবাইক জব্দ ও নজিরবিহীন জরিমানা যা সারাদেশের কোনো জেলায়, নগরী কিংবা মহানগরীতে নেই তা থেকে এই অসহায় মানুষদের রক্ষা করে তাদের জীবন ও জীবিকা পরিচালনার জন্য নিম্নোক্ত দাবিসমূহ তুলে ধরেন।
১।চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যাটারিচালিত যানবাহনে চাপিয়ে দেয়া রেকার খরচসহ ৩২৫০/= ( জরিমানা ২৫০০/=) টাকার জুলুম বন্ধ কর।
২। জব্দকৃত গাড়ি ১০ দিন পর্যন্ত আঁটকে রাখার অন্যায্য বিধান বাতিল কর।
ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা কমিটির বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে চট্টগ্রাম বন্দর ডিসি (ট্রাফিক) কবির আহমদকে স্মারক লিপি প্রদান করে যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে এবং প্রশাসনের কাছে এক সপ্তাহের মধ্যে এই দাবিসমূহ পূরণে আহবান জানানো হয়।