ডেস্ক রিপোর্ট

১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:৪১ অপরাহ্ণ

গণহত্যার দোসর ছাত্রশিবিরিকে ক্যাম্পাসে পুনর্বাসনের চক্রান্ত রুখে দাড়ানোর আহ্বান

আপডেট টাইম : ডিসেম্বর ১২, ২০২৪ ৬:৪১ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: তড়িঘড়ি করে নয়, ক্যাম্পাসগুলিতে গণতান্ত্রিক সহাবস্থান নিশ্চিত করে সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে মর্মে বক্তব্য দিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।

আজ এক যৌথ বিবৃতিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা, সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন শুভ বলেন, খুব সম্প্রতি আমরা ডাকসু সহ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের আলোচনা শুনতে পাচ্ছি।

দীর্ঘসময় সারাদেশের ছাত্র সংসদের অনুপস্থিতির বিপরীতে নির্বাচন কার্যকর করার দাবিতে আমরা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নসহ অপরাপর প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা করেছি। আন্দোলনের মুখে ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে বাধ্য হয়। আমরা সেই সময়ই বলেছিলাম হলগুলিতে সহাবস্থান নিশ্চিত না করে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণ ব্যতিরেকে নির্বাচন আয়োজন করলে সেই ডাকসু শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রতিনিধিত্ব করবে না, বরং তা হবে নিপীড়নের নতুন হাতিয়ার। আমাদের অনুমানকে সত্য প্রমানিত করে প্রশাসনের যোগসাজশে নজিরবিহীন ভোট কারচুপির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ। তার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ ব্যতীত সবকটি প্যানেলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। আজকে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্র সংসদ কার্যকর করা অতীব জরুরি বিষয় বটে তবে তার জন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক পরিবেশ। অভ্যুত্থানের পরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও দলদাস প্রশাসনের দায়হীনতাকে ছাত্ররাজনীতির কাধে চাপিয়ে দেশের ৩৩ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৪টি সরকারি কলেজ ও ১০টি সরকারি মেডিকেল কলেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও প্রায় সবকটি হলে রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেছে প্রত্যেকটি হলের প্রশাসন। কার্যত এইসমস্ত জায়গায় রুদ্ধ হয়ে আছে শিক্ষার্থীদের কাছে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার প্রচারণার পথ। ফলে এরকম চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ প্রদানে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হবে। এই মুহুর্তে এই সকল অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হল-ক্যাম্পাসে সকল গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন সমূহের সহাবস্থান নিশ্চিত করে ডাকসু সহ সারাদেশের ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সভায় আমাদের ৭১-এর মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার সাথে জড়িত জামাতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের উপস্থিতি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। বারংবার প্রশ্ন করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সদুত্তর প্রদান করা হয়নি। বরং আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রশাসন নানা কৌশলে এই গণহত্যাকারী সংগঠনকে ক্যাম্পাসে পুনর্বাসিত করার নানা অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এই ছাত্র শিবিরের পূর্বতন ইসলামী ছাত্র সংঘ আল বদর বাহিনী গঠন করে বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞে নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যা ও ধর্ষণের ভূমিকার অন্যতম কূশীলব এরা। এমনকি এখনও তারা একই মনোবৃত্তি ধারণ করে সেই গণহত্যার পক্ষে যুক্তি করে যাচ্ছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালেও ’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকা এবং বিভিন্ন ক্যাম্পাসে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছিল। ইতিহাস সচেতন ব্যক্তিমাত্রই সে সম্পর্কে অবগত। এরই প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে এই সন্ত্রাসী-ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট শক্তিকে নিষিদ্ধ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম পরিবেশ পরিষদ সর্বসম্মতভাবে ছাত্র শিবির ও স্বৈরাচারের দোসর আরেক ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজকে অবাঞ্চিত ও নিষিদ্ধ করা হয়। পরিবেশ পরিষদের ঘোষণা ভঙ্গ করে এদের পুনর্বাসিত করার এই প্রক্রিয়ার জবাবদিহিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবশ্যই করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে পরিবেশ পরিষদের সভা আয়োজন করে ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণের রূপরেখা গ্রহণ করতে হবে।

শেয়ার করুন