ডেস্ক রিপোর্ট

২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১২ পূর্বাহ্ণ

লালন চিন্তার আলোকে শোষণ-বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের প্রত্যয়

আপডেট টাইম : অক্টোবর ২৬, ২০২৪ ১২:১২ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: বাউল সাধক লালন ফকিরের ১৩৫তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে আজ ২৫ অক্টোবর ’২৪ বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।

‘দ্রোহে প্রতিরোধে লালন’-এই শিরোণামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি নিখিল দাস। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সঞ্চলনায় প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন। আরো আলোচনা করেন বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান লাল্টু, সংগঠনের সহসভাপতি শাহজাহান কবীর ও কামরুজ্জামান ভূইয়া প্রমুখ।

আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, লালন এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। রাজা রামমোহান রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরসহ অনেক মনীষী ভারতবর্ষের নবজাগরণ যাদের হাত ধরে শুরু হয়েছিলো তারা ইউরোপের রেঁনেসার সৃষ্টিকর্মের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। কিন্তু লালন এই আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাক্ষাৎ পাননি। তাহলে তার গভীর তত্ত¡জ্ঞানের উৎস কি? সেটি হলো সমাজের ব্রাত্যজনের চলমান আন্তস্রোতের ভাবসম্পদ। বৌদ্ধ সহজিয়া, সুফীবাদী চিন্তা ও বৈষ্ণব মতের যে মিথস্ক্রিয়ায় বাউল চিন্তা গড়ে উঠে তা সমাজ দেহে একটি শক্তিশালী মতাদর্শ নির্মাণ করে, যেটি লালন ধারন করেছিলেন। তিনি বাউল চিন্তার আলোকে জাত-পাত, ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানবতার জয়গান গেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন লোক দার্শনিক।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, গত ৫ আগস্ট ২০২৪ গণভ্যুত্থানে প্রায় দেড় হাজারের উপর ছাত্র-শ্রমিক-জনতার জীবন উৎসর্গের বিনিময়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে। ফ্যাসীবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই হলেও আমরা দেখেছি, উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাজার, মন্দির, পীরের দরগা, লালনের আখড়া, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য আক্রমণ, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে আইনশৃঙ্খলার অবনিত ঘটিয়েছে। শুধু তাই নয়, কথিত ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মব কিলিং ঘটিয়েছে। এই উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হুমকীতে নতজানু হয়ে সরকার পাঠ্য পুস্তক সংশোধিত ও পরিমার্জনের জন্য গঠিত সমন্বয় কমিটি বাতিল করেছে। এছাড়া কক্সবাজারে নারী লাঞ্ছনা, মব ট্রায়ালের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে হত্যা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শামীমসহ বিভিন্ন ঘটনায় দেশবাসী উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের কেন্দ্রীভ‚ত চেতনা সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার যা স্বাধীনতার ঘোষণায় বলা হয়েছিল এবং স্বাধীনতাত্তোর সংবিধানে মূলনীতি হিসেবে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন জাতীয় বিকাশের অর্থে জাতিয়তাবাদের বিপরীতে বিগত ৫২ বছর ধরে শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ বছরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ আওয়ামী ফ্যাসীবাদের উৎস হিসেবে ’৭২ এর সংবিধানকে অভিযুক্ত করেছে। এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। ’৭২ এর সংবিধান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মদান ও ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম হারানো জমিন থেকে উঠে আসা। এটি জনযুদ্ধের সংবিধান, মুজিবীয় সংবিধান নয়। সুতরাং যারা ’৭২ এর সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার কথা বলেন, তারা হয়তো অজ্ঞতাবশত বা দুর্ভিসন্ধীমূলকভাবে বলেন। এর মধ্য দিয়ে আমরা পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারেরই প্রতিধ্বনী শুনতে পাই। এটি জনগণের কাম্য নয়।

নেতৃবৃন্দ লালন দর্শনের আলোকে শোষণ-বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের সংগ্রামে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। আলোচনা সভা শেষে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা লালন সংগীত পরিবেশন করেন।

শেয়ার করুন