ডেস্ক রিপোর্ট
১২ আগস্ট ২০২৪, ১:০০ পূর্বাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য নীতি বজায় রাখবে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে সরকার চায় বাংলাদেশের মানুষ যেন ভাবে ভারত খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এজন্য ভারতের সহায়তা দরকার। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন।
রবিবার (১১ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি দুই সরকারের মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এটি আমরা জানি। এখানে একটা ব্যত্যয় ছিল যে মানুষের মনে কতটুকু সোনালি অধ্যায় চলছিল সেটি নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। সম্পর্ক শুধু দুই দেশের মধ্যে নয়, দুই সরকারের মধ্যে নয়, দুই দেশের সামগ্রিক সম্পর্কে মানুষ খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যেন ভাবে ভারত আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আমরা এটাই চাই। আমরা চাইবো ভারত আমাদের সেটিতে সহায়তা করুক।’
একদিকের সরকার
শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর নতুন সরকার শপথ নিয়েছে ৮ আগস্ট। এরপর ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের কথা বলা হচ্ছে এবং সরকারকে ‘একদিকের’ সরকার হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। এর কোনও মানে নেই বলে মনে করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারকে যদি কেউ চিত্রিত করতে চায় কোনও একদিকের, এটির কোনও মানে নেই। এই সরকার সবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে বদ্ধপরিকর। আমরা কারও সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক রাখতে চাই না। আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখবো, আমরা চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখবো। আমরা ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে আসছি। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক চাই। এছাড়া অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গেও আমরা ভালো সম্পর্ক চাই।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারসাম্য নীতিতে বিশ্বাস করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না যে আমরা শুধু লাভবান হবো, অন্যেরা হবে না। আবার আমরা এটাও চাই না অন্যরা আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধু লাভবান হবে, আমাদের কোনও লাভ থাকবে না। সুষম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক যতটুকু মসৃণ করা যায়, সেটি আমরা চেষ্টা করছি। আমরা অনেকের কাছ থেকে ইতিবাচক মনোভাব পাচ্ছি। আমরা আশা করছি এ সরকার ভালোভাবে বিদেশিদের সঙ্গে কাজ করবে। তাদের যে উদ্বেগ বিভিন্ন সময়ে ব্যক্ত হয়েছে, সেটি আমাদেরই উদ্বেগ, তিনি যুক্ত করেন।
সেভেন সিস্টার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের ব্যাখ্যা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন যে বাংলাদেশ আক্রান্ত হলে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য এবং মিয়ানমার নিরাপদ থাকবে না। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এটির ব্যাখ্যার তেমন কিছু নেই। আসলে উনি যেটি বলতে চেয়েছেন যে আমাদের এখানে যদি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে সেটির স্পিলওভার প্রভাব পড়বে আশপাশে। পৃথিবীর যেকোনও জায়গায় এটি সত্যি এবং আমাদের এখানে আরও সত্য। কারণ সেভেন সিস্টারের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ অনেক বেশি। ভারতও এটি বোঝে যে সেভেন সিস্টারের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন।’
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমরা পথ দেখানোর চেষ্টা করবো। আমরা কতটুকু করতে পারবো জানি না। তবে এতটুকু বলতে পারি, আমরা আমাদের স্বার্থ দেখবো। আমরা প্রতিবেশীর স্বার্থ দেখবো এবং এর পাশাপাশি আমাদের স্বার্থ দেখবো।’
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা
সরকার স্বচ্ছতা ও সততার অসম্ভব গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বেশ কিছু কথা এসেছে। আমি যদি বলি কোনও কিছু হয়নি, সেটি বিশ্বাসযোগ্য হবে না। বিষয়টি হলো যে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে।’
ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কারণে সহিংসতা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংঘাতের কারণে কাউকে আঘাত করা, এটি কোনও অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না। সংখ্যালঘুদের বিশেষ সুরক্ষা দেওয়ার দরকার এবং পত্রিকায় আমরা দেখেছি যে তাদের সুরক্ষার জন্য ধর্মীয় দলগুলো তাদের লোক পাঠিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে সব তথ্য চেয়েছি কোথায় কী ঘটেছে এবং কিছু পেয়েছি। আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে প্রত্যেকটা সংঘাত এবং অনাচার হয়েছে এবং সেগুলো যারা করেছে, কোনও দলমত না দেখে তাদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করবো।’