ডেস্ক রিপোর্ট
১৮ জুলাই ২০২৪, ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি দেওয়ার পরপরই আবারও চাপা উত্তেজনা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। আগের মতো বৃহস্পতিবারের (১৮ জুলাই) এই কর্মসূচিও সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়বে কিনা? আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও কোথায় সমবেত হওয়ার ঘোষণা দেয়নি। তবে কর্মসূচি ঘোষণার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিক বৈঠক করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সড়কে নেমে কেউ জনদুর্ভোগ সৃষ্টির চেষ্টা করলে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে চলবে গ্রেফতার অভিযানও। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় যেসব মামলা দায়ের হয়েছে সেসব মামলার আসামিদের গ্রেফতার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি ইনামুল হক সাগর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, যে কোনও দাবি আদায়ের নামে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, সম্পদ বিনষ্ট করা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের কর্মসূচির নামে আন্দোলনকারীরা যদি সড়ক অবরোধ করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করতে চায় তাহলে শক্ত হাতে তাদের দমন করা হবে। কোনও অবস্থাতেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন কোনও কাজ করতে দেওয়া হবে না।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশের আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি কার বা অস্ত্রসজ্জিত যানবাহন), জল কামান মোতায়েন থাকবে। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় গোয়েন্দা নজরদারির জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার কারণে আন্দোলনকারীদের কোনও একটি বিশেষ স্থানে জমায়েত হতে দেওয়া হবে না। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনও শিক্ষার্থীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যত স্কুল-কলেজ রয়েছে, সেগুলোতেও যেন কোনও শিক্ষার্থী প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে পুলিশ প্রহরা বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রগুলোর দাবি, শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ প্রবেশ করেছে। তারা নানাভাবে নাশকতার চেষ্টা করছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তারা মারমুখী আচরণের চেষ্টা করছে। বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালেও একই কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, একটি গ্রুপ অর্থ-অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারীদের ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের তালিকা তৈরি করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
এদিকে, বুধবার সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো হল ফাঁকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছে। তবে একটি গ্রুপ বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাত থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার চারপাশে পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে। কেউ যাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কড়া নজরদারি করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও আন্দোলনকারী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করবে। বাধার মুখে পড়লে বিভিন্ন এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হতে পারে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশি বাধার মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সমবেত না হতে পেরে একটি শ্রেণি যাত্রাবাড়ী-শনিরআখড়া এলাকায় অবরোধ বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে এক শিশুসহ বেশ কয়েকজন পুলিশের ছড়ড়া গুলিতে আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, যাত্রাবাড়ী-শনিরআখড়া এলাকায় সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াদের মধ্যে আন্দোলনকারীরা নেই বললেই চলে। সেখানকার সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের স্থানীয় লোকজন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, বৃহস্পতিবারের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা যোগ দিতে পারে। ছাত্র আন্দোলনের সুযোগে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা সড়কে নেমে সহিংসতা করতে পারে।
এদিকে, অপর একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পাহারা বসাবে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের কেন্দ্র থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।