ডেস্ক রিপোর্ট
১৪ জুলাই ২০২৪, ৩:১১ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাজধানীর গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনের সড়কে অবস্থান করছেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বঙ্গভবনের দিকে যেতে চাইছেন। তবে তাঁদের সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। সেখানে অনেক পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বরাবর স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার কর্মসূচি রয়েছে।
আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনকারীদের গণপদযাত্রা শুরু হয়।
গণপদযাত্রার জন্য বেলা ১১টার আগে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে বড় কিছু মিছিলও আসে।
গণপদযাত্রার উদ্দেশ্যে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর মিছিল শুরু হয় দুপুর ১২টা ২ মিনিটে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শাহবাগ, মৎস্য ভবন হয়ে শিক্ষা অধিকার চত্বরে গিয়ে পুলিশি ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। তারা ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়-সংলগ্ন সড়কে ঢুকে পড়ে।
বেলা ১টা ১০ মিনিটে সচিবালয়ের সামনের সড়কে (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে) পুলিশের কয়েকজন সদস্য কথা বলতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁদের বাদানুবাদ হয়। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের নেতারা মাইকে কাউকে বিশৃঙ্খলা না করার অনুরোধ করেন।
একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় বসে পড়তেও বলা হয়। আন্দোলনকারীদের একটি অংশ বেলা ১টা ১৮ মিনিটে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন। অন্য অংশটি তখনো পুলিশের সঙ্গে কথা বলছিল।
এ সময় মাইকে আবার শিক্ষার্থীদের রাস্তায় বসে পড়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘আমরা জায়গা নিয়ে বসে পড়ি। এখানে কিছুক্ষণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।’ কিছু শিক্ষার্থী সড়কে বসেও পড়েন।
তখনো পুলিশের সঙ্গে কথা বলছিলেন আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ কয়েকজন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই রাস্তায় বসে পড়া শিক্ষার্থীরা আবার উঠে যান। বেলা ১টা ২৫ মিনিটে তাঁরা জিরো পয়েন্ট মোড়ের সড়ক অবরোধ করেন।
জিরো পয়েন্টে আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ওইসময় বলেন, ‘এখানে আমরা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করব। আমাদের প্রতিনিধিরা স্মারকলিপি দিয়ে বঙ্গভবন থেকে ফেরার আগ পর্যন্ত আমরা জিরো পয়েন্টের সড়ক অবরোধ করব। অবরোধে শিক্ষার্থী-প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেবেন।’
বেলা দেড়টার দিকে প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা হয়। নাহিদ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনিসহ ১০ জনের একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনে স্মারকলিপি দিতে যাচ্ছেন। জিরো পয়েন্টে ফিরে তাঁরা তাঁদের পরবর্তী বক্তব্য বা অবস্থান জানাবেন।
বেলা ১টা ৪০ মিনিটে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান ও বক্তব্য দেন। তাঁদের অবরোধে সংশ্লিষ্ট সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজট তৈরি হয়।
বেলা পৌনে দুইটা পর্যন্ত জিপিওর সামনে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ব্যারিকেড খুলে দিলে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে আরও অগ্রসর হন। বেলা ১টা ৫০ মিনিটে তাঁরা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনের সড়কে অবস্থান নেন।
ঢাকায় এই কর্মসূচির পাশাপাশি সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বরাবর গণপদযাত্রা করছেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তাঁরা রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন।
দাবি আদায়ে মাঠের কর্মসূচির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ডাকে আজ টানা ষষ্ঠ দিনের মতো চলছে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট।
১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলনে আছেন কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানানো শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু গত ৭ জুলাই থেকে তাঁরা এক দফা দাবির কথা বলছেন। দাবিটি হচ্ছে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করা। সব গ্রেডে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা।