ডেস্ক রিপোর্ট

৮ মার্চ ২০২৪, ১০:১৭ অপরাহ্ণ

নারী দিবসে লাঞ্চনা-নিপীড়ন রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান মহিলা ফোরামের

আপডেট টাইম : মার্চ ৮, ২০২৪ ১০:১৭ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: নারীর মর্যাদা ও সম অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করা, শোষণ-লাঞ্চনা-নিপীড়ন-নির্যাতন রুখে দাঁড়ানো এবং সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের লড়াই শক্তিশালী করার আহ্বান নিয়ে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম ১১৪ তম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করেছে।

আজ ৮ মার্চ ২০২৪ বিকাল ৩.৩০ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত নারী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, জার্মানির এমএলপিডি এর চেয়ারউইম্যান কমরেড গাবি ফেচনার, অল ইন্ডিয়া প্রগ্রেসিভ উইমেন্স এসোসিয়েশন জাতীয় কার্যকরী কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কমরেড চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী, সাবেক গণপরিষদ/সংসদ এর সদস্য, অল নেপাল উইম্যান্স এসোসিয়েশন (রেভ্যুলিউশনারি) এর সম্পাদক মন্ডলী ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ এর সদস্য কমরেড আং দাওয়া সেরপা, সোসালিস্ট উইমেন্স ইউনিয়ন, শ্রীলঙ্কা এর সদস্য কমরেড বি আর কল্পনা মধুভাষিণী। সমাবেশ পরিচালনা করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: মনীষা চক্রবর্ত্তী।

সভাপতির বক্তব্যে শম্পা বসু বলেন, ‘সমাজের সকল ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা পালন, অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বহুযুগের লাঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনা হয়। কিন্তু নারী দিবস প্রতিষ্ঠার ১১৩ বছর পরও আমাদের দেশের নারীরা আইনগতভাবে, পারিবারিকভাবে, কর্মক্ষেত্রসহ সকল ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বৈষম্যের স্বীকার। নারী নির্যাতন এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। নারী মুক্তি আন্দোলন মানব মুক্তি আন্দোলনের পরিপূরক। তাই নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের মানবিক অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মাধ্যমেই নারী মুক্তি সম্ভব। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের চেতনার মূলেও ছিল শোষণ বৈষম্যহীন সাম্য সমাজ গড়ার আহ্বান। আমরাও সেই আহ্বান জানাচ্ছি।’

কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, পুঁজিবাদী দেশে নারীরা দ্বৈত শোষণের শিকার হয়। একদিকে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার শোষণ, অন্যদিকে পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার শিকার। একদিকে বিজ্ঞাপন সিনেমা নাটকে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন অন্যদিকে ওয়াজ মাহফিলে নারীবিদ্বেষী চিন্তা ছড়ানো হয়। পরিবারে নারীর ভূমিকাকে অস্বীকার করা হয়। তার শ্রমকে সস্তা শ্রমে পরিণত করা হয়। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা টিকে থাকলে নারী তার মর্যাদা কোনদিন পাবে না। প্রকৃত নারী মুক্তি সম্ভব সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে। তাই নারীদের মুক্তি আন্দোলন সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনের সাথে যুক্ত হতে হবে। শোষণহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই নারীর উপর সকল প্রকার শোষণকে বন্ধ করা সম্ভব।

কমরেড গাবি ফেচনার বলেন, ‘সমাজতন্ত্র ছাড়া নারী মুক্তি সম্ভব নয়। সাম্রাজ্যবাদ জীবনকে ধ্বংস করছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি করছে, বিশ্ব পরিবেশ বিপর্যয় ও বিশ্ব ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটাচ্ছে। নারী দিবসের লড়াই হল বুর্জোয়া শোষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিন। নারী অধিকার মানে পুরুষের বিরুদ্ধে লড়াই নয়। সমাজতন্ত্র বুর্জোয়া পরিবার ব্যবস্থার ধারণা বদলে দেবে। আর এই লড়াই শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বেই করতে হবে।’

কমরেড চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী বলেন, ‘মহিলাদের অধিকার লড়াই করেই অর্জন করতে হবে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হবে। একদল চায় মেয়েদের ঘরে বন্দী করে ভোগবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে আরেকদল চায় নারীর শ্রমকে আরো সস্তা করে সর্বোচ্চ মুনাফা করতে।’

কমরেড আং দাওয়া সেরপা বলেন, ‘৮ মার্চ ছিল সমতার পৃথিবীর জন্য লড়াই। নেপালের নারীরাও সকল রাজনৈতিক সামাজিক আন্দোলনে মানব ঢাল হিসেবে লড়াই করেছে কিন্তু ক্ষমতা দখলের পর নারীদের প্রাধান্য দেয়া হয় নাই। কিন্তু জনযুদ্ধে নারীদের বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ অনেক ধারণা বদলে দিয়েছে। অবস্থা পরিবর্তন করতে হলে লড়াই চাই। আর লড়াই করতে হলে প্রয়োজন ঐক্য। মজুরি বৈষম্য, পারিবারিক ও সামাজিক অধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।’

কমরেড বি আর কল্পনা মধুভাষিণী বলেন, ‘যেকোন বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় শিকার হয় নারীরা। আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, যতই সংগ্রাম করি না কেন আমরা এখনও বিশ্বকে বোঝাতে পারিনি যে সমাজে নারীরা সমান সুযোগ, সমান সম্মান এবং সমান অংশগ্রহণ পাওয়া উচিত। নারীরা এখন পর্যন্ত যতটুকু অধিকার পেয়েছে তা নিরন্তর দাবি ও সংগ্রামের ফল। সকল শ্রমজীবি নারী ও পুরুষের জন্য ন্যায্য ও সমতার সমাজ তখনই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব যখন আমরা এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করব এবং যখন শ্রমিকশ্রেণী ক্ষমতা গ্রহণ করবে এবং পুঁজির স্বার্থে নয়, মানুষের স্বার্থে সমাজকে পরিচালিত করতে পারব। এই সংগ্রামে পুরুষরা প্রতিদ্বন্দী নয়, সহযোদ্ধা।’

শেয়ার করুন