ডেস্ক রিপোর্ট
১০ মে ২০২৩, ১১:১৪ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: গাজীপুরের সালনা এলাকায় বাসায় ঢুকে কুপিয়ে রাবেয়া আক্তার নামে এক কলেজ ছাত্রীকে হত্যা এবং ওই ছাত্রীর মা ও তিন বোনকে কুপিয়ে জখম করার প্রতিবাদ এবং হত্যাকারীর শাস্তি দাবি জানিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের নেতৃবৃন্দ। আজ বুধবার (১০ মে ২০২৩) এক যৌথ বিবৃতিতে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু এবং সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এরকম ভয়ানক হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার ও হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, গত সোমবার ৮ মে ২০২৩ গাজীপুরের সালনা এলাকায় বাসায় ঢুকে কুপিয়ে রাবেয়া আক্তার নামে এক কলেজ ছাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় বাঁধা দিলে ওই ছাত্রীর মা ও তিন বোনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। মা বর্তমানে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছে। নিহত শিক্ষার্থী ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের ¯œাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। হত্যাকারী সাইদুল ইসলাম সালনা এলাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক, পাশাপাশি একটি মসজিদে নামাজ পড়ান এবং নিহত শিক্ষার্থীর ছোট দুই বোনের কোরআন শিক্ষার গৃহ শিক্ষক। তিনি রাবেয়াকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। সে কারণেই তিনি এরকম বর্বর হত্যাকান্ড সংগঠিত করেন।
‘সারা দেশেই নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মাত্র কদিন আগে নেত্রকোণার বারহাট্রায় প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করা হল। এখন আবার গাজীপুরে ভাওয়াল কলেজের শিক্ষার্থীকে নিজ গৃহে কুপিয়ে হত্যা করা হল। মাঝে বগুড়ায় প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হল। একজন শিক্ষার্থী সে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ফেরার পথেও যেমন নিরাপদ পরিবেশ পাচ্ছে না তেমনি নিজ গৃহেও নিরাপত্তা পাচ্ছে না। আর বয়স তো কোন বিষয়ই না। ঘরে বাইরে সর্বত্র সকল বয়সের সকল নারীকে এই রকম আতঙ্কের মধ্যে জীবন কাটাতে হচ্ছে। কিন্তু এর প্রতিকারের কোন উদ্যোগ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে না। নারী শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে ১০০ টি মামলার মধ্যে ৯৭ টির বিচার হয় না। যে তিনটির বিচার হয় তার মধ্যে শাস্তি হয় ০.৩ শতাংশ এর। বিচার প্রক্রিয়া এত দীর্ঘ যে সাধারণত ৫ বছরের নিচে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয় না। বিচার না হওয়ার কারণে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ছে।’
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘একটি সম্পর্কে সম্মতি না দিলেই হত্যা করে ফেলার মত মনন জগত কেন তৈরি হল? কেন অন্যের মতামতকে গ্রহণ করার মানসিকতা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেল? কেন মানুষ হিসেবে একটি নিরাপদ জীবন নারীরা পাচ্ছে না? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির মধ্যেই নিহিত আছে। সরকার একদিকে রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদী শাসন বহাল রেখে মানুষের উপর জবরদস্তি চাপিয়ে দিয়েছে এবং সারা দেশে সেই মানসিকতা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে যেন কেউ প্রতিবাদ না করতে পারে। অন্যদিকে নারীদের পুরুষের ভোগ্যপণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে যাচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। নারীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য সে সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ধারণ করে ও ওয়াজ মাহফিলের নামে এলকার মোড়ে মোড়ে প্রচার করে রাষ্ট্র তাদেরই তোষণ করে। ফলে একজন মাদ্রাসা শিক্ষকের চিন্তা এর বাইরে আর কি হতে পারে!’
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ঘটনার তিনদিন পার হতে চলেছে আজও হত্যাকারী পলাতক! এরকম একটি পরিস্থিতিতে নারীরা কিভাবে বিচারের আশা করতে পারে? নারী নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন হওয়ার হার খুবই নি¤œ। তাই হত্যাকারীরা, নির্যাতনকারীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত আরও ভয়াবহ রূপ ধারন করছে। এক ঘটনা আগের ঘটনার ভয়াবহতা ও বিভৎসতাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’
অবিলম্বে নেতৃবৃন্দ হত্যাকারী সাইদুল ইসলামকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।