ডেস্ক রিপোর্ট

৩০ মার্চ ২০২৩, ৩:১৫ অপরাহ্ণ

বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০

আপডেট টাইম : মার্চ ৩০, ২০২৩ ৩:১৫ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) নবাগত শিক্ষার্থীদের নিজেদের পক্ষে ভেড়ানো ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত ১১টা থেকে দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় কলেজের ছাত্রাবাসের অন্তত পাঁচটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।

কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান ওরফে আসিফ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন ওরফে রনির সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার মেডিকেল কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছয়জনকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী (৩১তম ব্যাচ) তাসনিমুল হক (২০), একই ব্যাচের শাহরিয়ার অনিক (২০) ও ধ্রুব চৌধুরী (২০) কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমানের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে রেজা, ফুয়াদ ও অমিওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া উদয় পাল, রাহাত খান, শাহরিয়ার রুদ্র, মাকসুদুর রহমান, ইমতিয়াজসহ আরও বেশ কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী, পুলিশ ও কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২১ সালে আতিকুরকে সভাপতি ও মোফাজ্জলকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ছয় সদস্যের একটি আংশিক কমিটি ঘোষণা করে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। কমিটি ঘোষণার পরপরই দুই নেতা কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। পরে তাঁদের অনুসারীরা কয়েকটি দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

ইতিমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এমবিবিএস ও ইন্টার্ন শেষ হয়েছে। নতুন কমিটি গঠনের তোড়জোড় চলছে। নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাঁদের সমর্থক বাড়াতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। এর মধ্যে দুই দিন আগে ৩২তম ব্যাচের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলে নবাগত শিক্ষার্থীদের নিজেদের পক্ষে ভেড়াতে উভয় পক্ষই তৎপরতা চালায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এর মধ্যে গতকাল সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে দুই পক্ষ সক্রিয় ছিল।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, রাত ১১টার দিকে মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবনের সামনে সভাপতি আতিকুরের সমর্থক কয়েকজন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় মোফাজ্জলের সমর্থকেরা আতিকুরের সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে ক্যাম্পাসজুড়ে এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে কলেজের ছাত্রাবাসের ১০১, ১০২, ১০৮, ১০৯ ও ১১০ নম্বর কক্ষের দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়। রাত ১২টার দিকে কলেজ প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাম্পাসে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর বলেন, সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের আচরণ অছাত্রসুলভ ও মারমুখী। তাঁদের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অতিষ্ট। এসব বিষয়ে অধ্যক্ষকে অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে ৩২তম ব্যাচে ভর্তি শুরুর পর থেকে ছাত্রলীগের কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা নবাগত শিক্ষার্থীদের তাঁদের পক্ষে ভেড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গতকাল রাতে বিনা উসকানিতে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর ওপর সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা হামলা চালিয়ে আহত করেছেন। তবে ওই সময় তিনি ক্যাম্পাসে ছিলেন না।

সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘অসুস্থতার জন্য কয়েক দিন ক্যাম্পাসে ছিলাম না। নবাগত শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানো নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গতকাল রাতে বিনা উসকানিতে আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে ৮ থেকে ১০ জনকে আহত করা হয়েছে। তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংগঠনে বিশৃঙ্খলাকারী ব্যক্তিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন কলেজ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। হোস্টেলে হামলা ও কক্ষ ভাঙচুরে আমার কর্মীরা জড়িত নন।’

জানতে চাইলে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আহত পাঁচ-ছয়জনকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কলেজের পরিস্থিতি এখন শান্ত।

শেয়ার করুন