ডেস্ক রিপোর্ট
১ নভেম্বর ২০২২, ২:৫৫ অপরাহ্ণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টির পর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং অন্যান্য শহরে ব্যাপক বিদ্যুৎ ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। খোদ রাজধানী কিয়েভে পানির সংকট এতোটাই চরম আকার ধারণ করে যে, শহরের বাসিন্দারা পানির জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেছেন, শহরের ৪০ শতাংশ গ্রাহক পানিবিহীন অবস্থায় রয়েছে এবং ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের বাড়িতে কোনও বিদ্যুৎ নেই। মঙ্গলবার (১ নভেস্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। মূলত, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গত ৮ অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া।
এর মধ্যে সম্প্রতি অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের বৃহত্তম বন্দরনগরী সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর সোমবার ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে রাশিয়া কার্যত ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি চালায়।
এতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং অন্যান্য শহরে ব্যাপক বিদ্যুৎ ও পানির সংকট দেখা দেয়। সোমবারের এই হামলার পর দেশটির বিভিন্ন শহরের লাখ লাখ মানুষ বিদ্যুবিহীন এবং তাৎক্ষণিকভাবে কিয়েভের প্রায় ৮০ শতাংশ বাসিন্দা পানির সংকটে পড়েন। ইউক্রেন জানিয়েছে, সর্বশেষ হামলায় ১৩ জন আহত হয়েছেন।
রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনের সামরিক নিয়ন্ত্রণ এবং জ্বালানি ব্যবস্থা লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সকল লক্ষ্যবস্তুতেই আঘাত করা হয়েছে। এছাড়া ক্রিমিয়ায় মস্কোর নৌবহরে ড্রোন হামলার জবাবে ইউক্রেনের অবকাঠামোর ওপর এই হামলা চালানো হয় বলে জানান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
বিবিসি বলছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে রাশিয়ার বিমান হামলায় ইউক্রেনের অবকাঠামো ধ্বংসের তথ্য বহির্বিশ্বকে খুব কমই দেখানো হয়। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আক্রমণে ব্যবহার করা হতে পারে এমন আশঙ্কায় অনেক তথ্য প্রকাশ করা হয় না।
কিন্তু সোমবারের রুশ হামলার ফল সর্বত্রই দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে লোডশেডিং শুরু হয়। রুশ হামলার পর কিয়েভে রাস্তার আলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ট্রলিবাসগুলো বাদ দিয়ে রাজধানীর রাস্তায় প্রচলিত বাস নামানো হয়।
এছাড়া নিজস্ব সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কিয়েভের বিভিন্ন পাম্পের সামনে শহরের বাসিন্দাদের দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়। বোতলসহ বিভিন্ন পাত্র সঙ্গে নিয়ে পানি সংগ্রহের জন্য তারা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। এমনকি হামলার পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে কিয়েভের ৮০ শতাংশ গ্রাহকের পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় বলেও জানা যায়।
পরে সন্ধ্যায় দেওয়া এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বাসা-বাড়িতে জরুরি পরিষেবা পুনরায় চালুর কাজ অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মস্কো হামলা চালালেও ‘ইউক্রেনীয়দের বাঁচার ইচ্ছা’ ধ্বংস করার মতো কোনও ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার কাছে নেই।
ইউক্রেন বরাবরই বলছে, রাশিয়ার হামলা থেকে নিজেদের শহরগুলো রক্ষার জন্য কিয়েভের আরও বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা প্রয়োজন। জার্মানি ইতোমধ্যেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে সরঞ্জাম পাঠিয়েছে।
একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।