ডেস্ক রিপোর্ট
২৪ জুলাই ২০২২, ৯:২৯ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক:: সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নাগরিক প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক এক প্রতিবাদ সভায় আলোচকরা বলেছেন, সামাজিক বিপ্লবের জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি দরকার। আসল অবক্ষয় ঘটেছে সংস্কৃতিতে। সংস্কৃতি সভ্যতার চেয়েও বড়।
আলোচকরা বলেন, সংস্কৃতি চর্চা সৃষ্টিশীলতাকে বৃদ্ধি করবে, সামাজিকতাকে ফিরিয়ে আনবে, মনুষ্যত্বকে রক্ষা করবে, জীবনে আনন্দ ফিরে আসবে, বিনোদন নিয়ে আসবে। সেটাই এখন ঘটছে না। সংস্কৃতি চর্চা উদ্দেশ্য ছাড়া হলে চলবে না। সংস্কৃতি চর্চা হবে সমাজ পরিবর্তনের জন্য।
রোববার (২৪ জুলাই) মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে সভাটির আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ।
অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জামান আহমদের সভাপতিত্বে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্যের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, অভিনেতা মামুনুর রশিদ, চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দিন ইউসুফ, চাকমা রানী ও মানবাধিকারকর্মী রানী ইয়েন ইয়েন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির নির্বাহী প্রধান আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ফারাহ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ঊষাতন তালুকদার, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, সাংগঠিক সম্পাদক পদ্মাবতী দেবনাথ, নড়াইলের লোহাগড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার ভুক্তভোগী হ্যালমেট সাহা প্রমুখ।
সভায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,দেশে এই যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটছে, এর চেহারা সাম্প্রদায়িক, কিন্তু এর চরিত্র রাজনৈতিক। ব্রিটিশ আমলে এসব শুনেছি, তখন ব্রিটিশ রাষ্ট্র তা প্রশ্রয় দিয়েছে। পাকিস্তান আমলে ওই আওয়াজ শুনেছি, পাকিস্তান রাষ্ট্র সেগুলোকে উৎসাহিত করেছে। আজকের বাংলাদেশে ওই আওয়াজগুলো শুনতে হলো। তার অর্থ হলো রাষ্ট্র চেহারায় বদলেছে, ছোট হয়েছে বড় রাষ্ট্র, কিন্তু চরিত্রে রাষ্ট্রের কোনো বদল হয়নি।
তিনি বলেন, এই যে নৃশংস ঘটনাগুলো ঘটছে, তাতে দেখছি যে, প্রশাসন তৎপর হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত যেতে পারছে না। যখন যাচ্ছে তখন তারা কর্তব্য পালন করতে পারছে না। এই রাষ্ট্রকে বদলাতে হবে এবং গণতান্ত্রিক করতে হবে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যারা সাম্প্রদায়িক হামলা করছেন, তারা ধর্মীয় গোষ্ঠী নাকি বিভিন্ন দলের সুবিধাবাদী লোক, তা তলিয়ে দেখা দরকার। কক্সবাজারের রামুতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় কত মামলা হয়েছে। প্রতিটি মামলা কেন ব্যর্থ হল? ঘটনা ঘটেছিল, এটা তো অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু ঘটনা যারা ঘটাল, কারও শাস্তি হয়েছে এমন কথা শুনিনি।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত অক্টোবরে এরকম একটি প্রতিবাদ সভার কিছুদিনের মধ্যেই যে আবারো এ ধরনের আরেকটি সভার আয়োজন করতে হচ্ছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সংখ্যালঘু বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। সবাই মানুষ, সবাই বাংলাদেশি- এটাই স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সবাইকে আমরা সম-অধিকার, সম-মর্যাদা সম্পন্ন মানুষ হিসেবে দেখি- যেখানে কোনো ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ব্যবধান নেই। সাম্প্রতিককালে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো উদ্বেগজনক।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী শাহীন আনাম বলেন, সংখ্যালঘু শব্দটিই অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য অপমানজনক। নাগরিক সমাজের অবশ্যই এক্ষেত্রে একটা দায়িত্ব রয়েছে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার পরে পুলিশ আসবে এটাই স্বাভাবিক। তবে খেয়াল রাখতে হবে এ ধরনের পরিস্থিতি উদ্ভূত হওয়ার আগেই এর বিরুদ্ধে যেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
প্রখ্যাত অভিনেতা মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের একটি সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি দরকার। গত ৫০ বছরে সরকার নানাভাবে রাষ্ট্রকে, সমাজকে গ্রাস করেছে। সমাজের এই গভীর অসুখগুলো আজ বের হয়ে আসছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে জন্ম নেওয়া এ দেশে এ ধরনের সহিংসতামূলক ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি নিজের জন্যই লজ্জাজনক।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারওয়ার আলী বলেন, বাংলাদেশ সকলের জন্য নিরাপদ’ এ কথাটি বলার অধিকার আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কেননা, সংখ্যালঘুরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ধর্মের নামে লুণ্ঠন— এটাই এখন এদেশের বাস্তবতা। আমাদের এক সময়ের সেই উদার-মানবিক সমাজের কিভাবে যেন আজ পদস্খলিত হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির নির্বাহী প্রধান অ্যাডভোকেট সাইদা রিজওয়ানা হাসান বলেন, মানুষের আস্থার জায়গায় ফাটল ধরেছে। কিন্তু সরকার ব্যর্থ হলেও জনগণের ব্যর্থ হওয়া চলবে না।
বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজ ব্যাপকভাবে বিভাজিত হয়ে ভয়ঙ্কর একটি রূপ ধারণ করেছে। এখানে প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের বাস্তব প্রয়োগের আরও প্রয়োজন।