ডেস্ক রিপোর্ট

১৫ জুলাই ২০২২, ৮:৫৩ অপরাহ্ণ

কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা

আপডেট টাইম : জুলাই ১৫, ২০২২ ৮:৫৩ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক:: বাসদ (মার্কসবাদী)র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আজীবন বিপ্লবী কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা আজ শুক্রবার (১৫ জুলাই) বিকাল ৪টায় বিএমএ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন বাসদ (মার্কসবাদী)র সমন্বয়ক কমরেডমাসুদ রানা ও সভা সঞ্চালনাকরেন কেন্দ্রীয় নিবার্হী ফোরামের সদস্য কমরেড জয়দীপ ভট্টাচার্য।

স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন ভারতের এসইউসিআই(কমিউনিস্ট) পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাষ ঘোষ, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্টলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবতীর্, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক সভাপতি মোস্তফা ফারুক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “শোষণমুক্তির চিন্তাটাই কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীকে আজীবন তাড়া করে ফিরেছে। তাই সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতেই তিনি তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন। বিপ্লব হচ্ছে সার্বক্ষণিক কাজ। এই চর্চার দিকটাকেইতিনি সামনে এনেছেন। বিপ্লব মানে মূলত সমাজ বিপ্লব, সেই সমাজ বিপ্লব করতে হলে সাংগঠনিক প্রস্তুতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিরদিকটাকে কমরেড হায়দার সবসময় সামনে রাখতেন।

বর্তমানে বুর্জোয়া সংস্কৃতির প্রভাবে সমস্ত ঐক্য ভেঙে যাচ্ছে। সভ্যতা বিশ্বব্যাপী একটা ক্রান্তিকালে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই পুঁজিবাদের সকল ধরনের ধ্যান-ধারণা ও সংস্কৃতিকে আমাদেরপ্রত্যাখ্যান করতে হবে। মানুষের মধ্যে যেসব প্রবণতা বাড়ছে: হতাশা, আত্মহত্যা ইত্যাদি। এসব তো পুঁজিবাদের কারণেইহচ্ছে। তাই বিপ্লবী রাজনীতির জন্য আমাদের হতাশাকে দূরে ঠেলে দিতে হবে। কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী কখনও হতাশ হননি। তিনি আজীবন লড়াই করেছেন সামাজিক মালিকানার সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। তাঁর প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।”

বক্তারা বলেন, উল্লেখ্য গতবছর ৬ জুলাই ৮৭বছর বয়সে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী প্রয়াত হন। তিনি আমৃত্যু এদেশের শোষিত মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী শৈশবেই ভারতে এসইউসিআইসি দলের সাথেযুক্ত হন কমরেড শিবদাসঘোষের আদর্শ ও চরিত্রে অনুপ্রাণিতহয়ে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থী শিবিরে কাজ করেন। স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে আসেন।সদ্য স্বাধীন দেশে বুজোর্য়া শ্রেণির নেতৃত্বে পুঁজিবাদী আর্থ সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে শোষণমুক্তির আকাঙ্খা নিয়ে যে জনগণ যুদ্ধকরেছিল তাদের স্বপ্ন অপূরিত থেকে যায়। এদেশে পুরাতন ও প্রচলিত বামপন্থীরাজনীতির ধারা মুক্তিযুদ্ধে কাঙ্খিত ভূমিকা নিতে পারেনি, শোষিত মানুষের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ অন্যদিকে দেশের যুবক—তরুণরা এই শোষণমুক্তির আকাঙ্খাধারণ করলেও সঠিক পথের দিশা না পাওয়ায় দিকভ্রান্ত Ñ এরকম প্রেক্ষাপটে এদেশের শ্রমজীবী মেহনতী সাধারণ মানুষের মুক্তির আকাঙ্খা নিয়ে সত্যিকারের শ্রমিকশ্রেণির দল গড়ে তোলারপ্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। মার্কসবাদ—লেনিনবাদ—কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারাকে পাথেয় করে সারাজীবন ধরে এদেশে শোষিত মেহনতী মানুষের মুক্তির জন্য শ্রমিকশ্রেণির বিপ্লবী দল গড়ে তোলারসংগ্রাম করেছেন।

কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষায় তিনি শিখিয়েছেন, বিপ্লবী রাজনীতির চেয়ে মযার্দাময় জীবন আর নেই। রাজনীতিহল হৃদয়বৃত্তি, বিপ্লবী রাজনীতি হল উচ্চতর হৃদয়বৃত্তি। শোষিত নিপীড়িত মানুষের প্রতি ভালবাসা ও দরদবোধই এইরাজনীতির আধার। কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষায় তিনি শিখিয়েছেন, আজকের এই যুগে সর্বব্যাপীসাংস্কৃতিক অবক্ষয়। কমিউনিস্ট আন্দোলনকেও তা প্রভাবিত করছে।তাই এই যুগে কমিউনিস্টআন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হলে কমিউনিস্ট চরিত্র গড়ে তুলতে হবে। এই শিক্ষায় দলের কমীর্দের গড়ে তুলেছেন। জীবনভোর সংগ্রামে তিনি অসংখ্য বিপ্লবী কমীর্ তৈরি করেছেন। ‘দলই জীবন, বিপ্লবই জীবন’ এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন।

কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর শিক্ষায় আজকের দিনে এই চরিত্র গড়েতোলার সাধনার পাশাপাশি দেশের শোষিত মানুষের মুক্তির লড়াইকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের মানুষের উপর আজ ফ্যাসিবাদী শাসনজগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। এই ফ্যাসিবাদী শাসনকেউচ্ছেদ করার লড়াইয়ের পাশাপাশি পুঁজিবাদী ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা তথা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইকে বেগবান করতে হবে। এই সংগ্রামে কমরেডমুবিনুল হায়দার চৌধুরীর উজ্জ্বল চরিত্র আলোকবর্তিকার মতো আমাদের পথ দেখাবে।

শেয়ার করুন