ডেস্ক রিপোর্ট

২৩ এপ্রিল ২০২২, ৯:২০ অপরাহ্ণ

রাস্তায় ভ্যান চালককে বেত্রাঘাত করলেন সিসিক মেয়র আরিফ

আপডেট টাইম : এপ্রিল ২৩, ২০২২ ৯:২০ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সিলেট প্রতিনিধি:: সড়কের ওপর ভ্যান রাখার কারণে এক চালককে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ উঠেছে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

নগরের চৌহাট্টা এলাকায় শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বেত্রাঘাত করার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এর পরই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা।

নগরের চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক গত বছর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এরপর এই সড়ক দিয়ে রিকশা-ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাতে হকার বসা নিষেধ লিখে বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ডও লাগানো হয়। তবে এসব নিষেধ অমান্য করে এই সড়কের ফুটপাত দখল করে আছেন হকাররা। সড়কের পাশে পার্কিং করে রাখা হয় গাড়িও। ফলে সড়কজুড়ে যানজট লেগে থাকে।

শনিবার বেলা ২টার দিকে চৌহাট্টার দিকে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন মেয়র আরিফ। এ সময় সড়কের পাশে একটি ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা দেখতে পান তিনি। তখন মেয়র গাড়ি থামিয়ে ওই ভানচালককে ডেকে নিয়ে তার হাতে বেত্রাঘাত করেন।

এই ঘটনার সময় পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সিলেট জেলা সংসদের সাবেক সভাপতি সপ্ত দাস। তিনি মেয়রের বেত্রাঘাতের একটি ছবি ফেসবুকে আপ করেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সপ্ত ফেসবুকে লেখেন (বানান ও বাক্য অপরিবর্তিত)- ‘সিগারেট কোম্পানির এক কর্মচারী ভ্যান রেখে ডেলিভারি দিতে গেছে পাশের দোকানে। সেই সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিল মেয়রের গাড়ি। তাকে দেখে এই ভ্যানচালক ভ্যান সরিয়ে নিতে গেলে, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তাকে হাত পাততে বলেন এবং উনার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে দুটো বাড়ি দেন। কিন্তু একটু সামনেই রাস্তার পাশে একটি প্রাইভেট কার পার্ক করা ছিল। কিন্তু কবি সেখানে নিরব। এই শহরের অনেক রিকশা চালক ও খেটেখাওয়া মানুষের পিঠ খুঁজলে মেয়র আরিফের লাঠির আঘাতের অনেক দাগ খুঁজে পাওয়া যাবে।’

এরপর , হজরত বিনয় ভদ্র (Hazrat Binoy Bhodroe) নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে শনিবার দুপুরে ছবিসহ একটি পোস্ট করা হয়। মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।

‘একজন নিপীড়ক মেয়র এবং আমাদের বিবেক’ শিরোনামের ফেসবুক পোস্টটিতে লেখা হয়-

‘একজন সিগারেট কোম্পানির কর্মচারী ভ্যান রেখে ডেলিভারি দিতে গেছে পাশের দোকানে। সেই সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিল মেয়রের গাড়ি। তাকে দেখে এই ভ্যানচালক ভ্যান সরিয়ে নিতে গেলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তাকে হাত পাততে বলেন এবং উনার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে দুটো বাড়ি দেন। একটু সামনেই রাস্তার পাশে একটি প্রাইভেট কার পার্ক করা ছিল, কিন্তু কবি সেখানে নীরব। কী বলব? এই শহরের অনেক রিকশাচালক ও খেটেখাওয়া মানুষের পিঠ খুঁজলে মেয়র আরিফের লাঠির আঘাতের অনেক দাগ খুঁজে পাওয়া যাবে।’

রুবেল আহমদ নামের ওই ভ্যানচালকের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তিনি সিগারেট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ভ্যান চালান। শনিবার দুপুরে ভ্যান নিয়ে ওই এলাকায় গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘সড়কে ভ্যান রেখে আমি পাশের দোকানে সিগারেট দিতে গিয়েছিলাম। মেয়রকে দেখে দৌড়ে ভ্যান সরাতে আসি। কিন্তু তার আগেই মেয়র লাঠি দিয়ে আমার হাতে বাড়ি দেন।’

ওই ভ্যানগাড়ির সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর বিক্রয় প্রতিনিধি ধ্রুব ভট্টাচার্য। তিনি নিউবাংলাকে বলেন, ‘আমি পাশেই ছিলাম। মেয়র চালককে মারছেন দেখে দৌড়ে আসি।’

তিনি বলেন, মেয়র এই কাজটি ঠিক করেননি।

আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টটি শেয়ার করে লেখেন, ‘কাজটি সঠিক নয়।’

এ নিয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ফেসবুকে লেখেন, ‘লাঠিয়াল নয়, জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করুন। পবিত্র রমজান মাসে পবিত্র নগরীর পবিত্র চেয়ারের সম্মান হানিকর সব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।’

এই ঘটনায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এটিএম এ হাসান জেবুল ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে লেখেন, একজন মানুষের ঔদ্ধত্য কোন পর্যায়ে পৌঁছালে তিনি গাড়ীতে বেত নিয়ে ঘোরেন! সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় একজন ভ্যানচালককে অবৈধ পার্কিং এর দায়ে বেত্রাঘাত করার দৃশ্য গনমাধ্যমে এসেছে। একজন নাগরিককে বেত্রাঘাত করা অমানবিক ও বেআইনী। মেয়রের সাহেব গণমাধ্যমে বলেছেন তিনি বেত্রাঘাত করেন নি! তিনি বেত হাতে তাকে শাসিয়েছেন মাত্র। কিন্তু তিনি কোন আইনের বলে বেত নিয়ে ঘোরেন। এই আচরণ কোন সভ্য জনপ্রতিনিধির আচরণ নয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র সাহেবের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি!

এ বিষয়ে সেখানকার এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেয়রের এই ধরনের আচরণ শিষ্টাচার পরিপন্থি। এ ঘটনার জন্য তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পাশের দোকানের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, তিনি একজন নগরপিতা। তার কাছ থেকে রোজার দিনে এই ব্যবহার আমরা আশা করি না।

এ বিষয়ে কথা বলতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

শেয়ার করুন