অধিকার ডেস্ক:: সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন বেড়ে যাওয়ায় ৫৭ দেশকে ভ্রমণের লাল তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে কাতার। এর বাইরে বাংলাদেশ-ভারতসহ আরো নয়টি দেশকে বিশেষ তালিকায় রেখেছে দেশটি। বুধবার কাতার সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়। শনিবার থেকে নির্দেশনাটি কার্যকর করা হবে।

দেশটিতে ভ্রমণ করতে হলে ৭২ ঘন্টা আগে পিসিআর পরীক্ষা করাতেও বলা হয়েছে।

কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বিবিসিকে জানিয়েছেন, দেশটির মিনিস্ট্রি অব পাবলিক হেলথ তাদের ওয়েবসাইটে ‘কোভিড-১৯-এক্সসেপশনাল রেড লিস্ট কান্ট্রিজ’ তালিকায় বাংলাদেশের নাম রেখেছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আমরা সতর্ক আছি। বাংলাদেশ থেকে যেকোনো দেশে যেতে হলে কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। দুবাই ও কাতারসহ মধ্যপাচ্যের দেশগুলোতে ভ্রমণের আগে পিসিআর ল্যাবেও পরীক্ষা করাতে হয়। আমাদের বিমানবন্দরে তা করানো হচ্ছে।

বেবিচকের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাতার সরকার বাংলাদেশসহ ৫৭টি দেশের ওপর কিছু বিধিনিষেধ করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে ওই দেশের সরকারের লিখিত কিছু এখনো পাইনি। তবে বাংলাদেশকে বিশেষ তালিকায় রাখলেও ভয়ের কিছু নেই। এতে আমরা উদ্বিগ্ন হইনি। কারণ বাংলাদেশ থেকে যারা যাচ্ছেন বা আসছেন সবাই করোনার নিয়ম মানছেন। সরকারীভাবে ওই দেশের নির্দেশনাগুলো হাতে আসার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ভ্রমণের ক্ষেত্রে দেশগুলোকে লাল ও বিশেষ তালিকাভুক্ত করেছে কাতার। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় স্বাস্থ্যঝুঁকির সূচক এবং বিভিন্ন দেশের মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘বিশেষ তালিকা’ নামে আরেকটি তালিকা করেছে দেশটি।

কাতারের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, তুরস্ক, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কাসহ ৫৭টি দেশকে লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আর বিশেষ তালিকায় রাখা হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিশর, বতসোয়ানা, লেসোথো, নামিবিয়া ও জিম্বাবুয়েকে।

এসব দেশ থেকে ভ্রমণে কাতার সরকারের নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ কার্যকর হবে শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে। কাতার সরকার আরো জানিয়েছে, ভ্রমণকারী কাতারের নাগরিক বা বাসিন্দা হলে যদি তাদের পূর্ণডোজ টিকা নেওয়া থাকে, তাহলে আর কোয়ারেন্টাইনের দরকার পড়বে না। কাতারে পৌঁছানোর পরের ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তাদের আবারও টেস্ট করাতে হবে। এ ধরনের ভ্রমণকারীদের টিকা নেয়া না থাকলে সাতদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে এবং ষষ্ঠদিনে আবার করোনা টেস্ট করাতে হবে। এতে নেগেটিভ প্রমাণিত হলেই বাইরে বেরোনোর অনুমতি পাবেন।

ভ্রমণকারীরা কাতারের নাগরিক বা বাসিন্দা না হলে পৌঁছানোর আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর টেস্ট করাতে হবে। তাদের কাতার সরকার অনুমোদিত টিকা নেয়া থাকলে পৌঁছানোর পর দুই দিন, না নেয়া থাকলে সাত দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তা ছাড়া শর্তসাপেক্ষে অনুমোদিত টিকা নেয়া ভ্রমণকারীদের কাতার পৌঁছানোর আগে সোরোলজি অ্যান্টিবডি টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক।

যদি রওয়ানা দেওয়ার আগে তা করাতে না পারেন, তাহলে পৌঁছানোর পর সাত দিন হোটেল কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

বিশেষ তালিকায় থাকা দেশগুলো থেকে যাওয়া ব্যক্তি যদি কাতারের নাগরিক হন, তাহলে টিকা নেয়া থাকলে দুই দিন, না নিলে সাত দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। পৌঁছানোর আগে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদেরও পিসিআর টেস্ট করাতে হবে। এ ধরনের ভ্রমণকারীরা টিকা নেয়া থাকলে পৌঁছানোর ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে আরেকবার টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর টিকা নেয়া না থাকলে কোয়ারেন্টাইনের ষষ্ঠ দিনে আবার করোনা টেস্ট করাতে হবে। কাতার কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত চারটি টিকার সরাসরি অনুমোদন দিয়েছে।

সেগুলো হলো ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসন (এক ডোজ)। আর সিনোফার্ম, সিনোভ্যাক, স্পুটনিক ভি এবং কোভ্যাক্সিনকে শর্তসাপেক্ষে অনুমোদনের তালিকায় রেখেছে তারা।