ডেস্ক রিপোর্ট
২১ আগস্ট ২০২১, ৯:২৮ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক:: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের চিকিৎসায় ১৬ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
শনিবার দুপুরে হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ডের এক চিকিৎসক গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, হাসান আজিজুল হকের চিকিৎসায় হাসপাতালের পরিচালক জামাল উদ্দিনকে প্রধান করে ১৬ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
এর আগে, হাসান আজিজুল হককে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শনিবার সকাল ১০টার দিকে তাকে রাজশাহী বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। সেখানে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও লেখকের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন ।
গুণী এই লেখককে নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্স উড়াল দেয়।
শুক্রবার রাতে হাসান আজিজুল হকের শুভাকাঙ্ক্ষিরা জুম মিটিংয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিবারের সদস্যরাও তাতে সম্মত হন। জুম মিটিংয়ে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অধ্যাপক আব্দুল খালেক এবং রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন অংশ নেন।
হাসান আজিজুল হক ইলেকট্রোলাইন ইমব্যালেন্স ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। করোনার কারণে বাসায় রেখে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
হাসান আজিজুল হকের ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান জানান, শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বাবাকে ঢাকায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।
এ বিষয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক শুক্রবার রাতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আমাদের শিক্ষাগুরু ও অভিভাবক এবং সমাজ ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ হাসান আজিজুল হক গুরুতর অসুস্থ। তাকে আগামীকাল ২১ আগস্ট সকাল দশটায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহী থেকে ঢাকায় নেয়া হবে। সেখানে তিনি ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. নজরুল ইসলামের অধীনে চিকিৎসা নেবেন। স্যার দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন এই কামনা করি!’’
এর আগে অধ্যাপক ইমতিয়াজ এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে তার বাবার গুরুতর অসুস্থতার কথা জানান।
তিনি লেখেন, “আব্বা বয়সের ভারে শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন অনেকটা, মনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে একটু। আড়ালেও কি চলে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে? গত এক মাস যাবৎ তিনি ভীষণ অসুস্থ, ছোট একটি শিশুর মতোই আমাদের ওনার পরিচর্যা করতে হয়। পরিবারের মানুষ আর গুটিকয়েক শুভানুধ্যায়ী ছাড়া আর কেউ সে কথা জানেন না। অনেকেই হয়তো মন চাইলেও তার খবর নিতে পারেননি বা যোগাযোগ করতে পারছেন না। সে জন্যই এটুকু লেখা। আপনাদের দোয়ায়, প্রার্থনায় তাকে রাখবেন।”
হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে নগরের চৌদ্দপায়ে আবাসিক এলাকা ‘বিহাস’অনেক বছর ধরে তার ঠিকানা।
১৯৬০ এর দশকে তিনি কথাসাহিত্যিক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন তার মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ।
১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
সার্বজৈবনিক সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৮ সালে তাকে একটি বেসরকারি ব্যাংকের পক্ষ থেকে ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধি দেওয়া হয়।