ডেস্ক রিপোর্ট

৫ আগস্ট ২০২১, ১০:১৯ অপরাহ্ণ

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন রাইসি

আপডেট টাইম : আগস্ট ৫, ২০২১ ১০:১৯ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পার্লামেন্টে শপথ নিয়েছেন দেশটির কট্টরপন্থী শিয়া মতাবলম্বী ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ আইনজীবী ইব্রাহিম রাইসি। দেশে এবং বিদেশে ক্রমবর্ধমান সংকটের মুখে ইসলামী এই প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছেন তিনি।

গত জুনে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া শিয়া এই ধর্মীয় নেতার আনুষ্ঠানিকভাবে চার বছরের মেয়াদের অভিষেক হয়েছে মঙ্গলবার। ওইদিন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নির্বাচনে ইব্রাহিম রাইসির জয়ের স্বীকৃতি দেন। ওই নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের অযোগ্য ঘোষণা করায় রাইসির জয়ের পথ সুগম হয় বলে অভিযোগ আছে।

রাইসির প্রেসিডেন্টের মেয়াদকালে ইরানের ক্ষমতার সব শাখা-প্রশাখাই পশ্চিমা-বিরোধী খামেনির অনুগত কট্টরপন্থীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রত হবে।

বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত শপথ অনুষ্ঠানে রাইসি বলেন, পবিত্র কোরআন এবং জাতির সামনে, আমি সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার কাছে দেশের ধর্ম এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পাশাপাশি সংবিধান রক্ষার শপথ করছি।

বিচারপতি থাকাকালীন বিরোধীদের ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ইরানের নতুন এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত আগের নিষেধাজ্ঞা এখনও কার্যকর আছে। তারপরও তিনি দেশটির ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন শপথ অনুষ্ঠানে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের তেল রফতানি এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

শপথ নেওয়ার পর দেশের কল্যাণে এবং প্রতিবেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ইব্রাহিম রাইসি। তিনি বলেছেন, ইরানের জনগণ প্রত্যাশা করে নতুন সরকার তাদের জীবনমানের উন্নতি করবে। ইরানিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত সব ধরনের অবৈধ নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।

২০১৫ সালে ছয় প্রধান বিশ্ব শক্তির সঙ্গে সাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। তিন বছর আগে তেহরানের প্রতি চুক্তিতে নমনীয়তা প্রদর্শন করা হচ্ছে অভিযোগ এনে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে নিজ দেশকে প্রত্যাহার করে নেন।

চুক্তি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন; যে নিষেধাজ্ঞায় ইরানের অর্থনীতি পঙ্গু হয়েছে। পরে তেহরান চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে পারমাণবিক কর্মসূচি আবারও শুরু করে।

খামেনির মতোই রাইসি পারমাণবিক চুক্তির আলোচনায় সায় দিয়েছেন। থমকে যাওয়া পারমাণবিক চুক্তিকে সচল করার আলোচনায় তিনি কঠোর পন্থা অবলম্বন করতে পারেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে পারমাণবিক নীতিসহ দেশটির সব বিষয়ে সর্বোচ্চ নেতার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

২০১৯ সালে দেশটির বিচারবিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পান ইব্রাহিম রাইসি। তাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। নিয়োগের কয়েক মাস পরই ১৯৮৮ সালে দেশটির হাজার হাজার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকে বিচারিক হত্যাকাণ্ডের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন রাইসি। যদিও ইরান কখনই ওই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ স্বীকার করেনি।

খামেনির অত্যন্ত আস্থাভাজন রাইসি বলেছেন, বিচারকের দায়িত্ব পালনের জন্যই তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রাইসির প্রেসিডেন্টের মেয়াদকালে ইরানে দমন-পীড়ন আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির ভিন্নমতাবলম্বীরা।

সূত্র: রয়টার্স।

শেয়ার করুন