ডেস্ক রিপোর্ট
৪ জুন ২০২১, ১:০৮ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক:: আধুনিক ও টেকসই মহাসড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘দেশে সড়ক পথের উন্নয়নের জন্য গত ১২ বছরে সরকার ৩৩১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং ৪৫২টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের সময় এ তথ্য জানান তিনি।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধি, ঢাকা মহানগরীতে যানজট নিরসণে দ্রুতগতির গণপরিবহন ব্যবস্থা (এমআরটি ও বিআরটি) প্রবর্তনসহ মোটরযান ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে পরিকল্পনা গ্রহণসহ বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান।’
৪৫৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার এবং তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে এবং চার লেন বিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ইত্যাদি চার লেনে উন্নীত করার কাজ এগিয়ে চলছে।’
উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় বর্তমানে ২৬টি বৃহৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা মহানগরীতে মাস র্যাপিড ট্রানজিট
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ৬টি মেট্রোরেল সমন্বয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর আওতায় মোট ১২৮.৭৪১ কিলোমিটার (উড়াল ৬৭.৫৬৯ কিলোমিটার এবং পাতাল ৬১.১৭২ কিলোমিটার) দীর্ঘ ও ১০৪টি স্টেশন (উড়াল ৫১টি এবং পাতাল ৫৩টি) বিশিষ্ট একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার নিমিত্ত সরকার – সময়াবৃদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ গ্রহণ করেছে। দীর্ঘ ১৬টি স্টেশন বিশিষ্ট, ঘন্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহণে সক্ষম দ্রুতগামী, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, সময় সাশ্রয়ী, বিদ্যুৎ চালিত,পরিবেশবান্ধব ও দূরনিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক গণপরিবহণ ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬) এর নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
সেতু ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন
দেশের সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়নে সেতু বিভাগ বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করেছে বলে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামালবলেন, ‘সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছে।’
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করোনা মহামারির প্রকোপের মধ্যেও পূর্ণগতিতে এগিয়ে চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৮৪.৫০ শতাংশ। আগামী বছরের জুনের মধ্যে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’
মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পাশাপাশি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালি পর্যন্ত র্যাম্পসহ ৪৬.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসের কাজ এগিয়ে চলছে। গাজীপুর হতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি লেনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশে, ৩.৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রথম টিউব এর রিং স্থাপনসহ বোরিং শেষে দ্বিতীয় টিউব এর বোরিংসহ অন্যান্য নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া হয়ে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি জি-টু-জি ভিত্তিতে চীনা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্মিত হতে যাচ্ছে বর্তমানে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কে মেঘনা নদীর উপর সেতু নির্মাণ হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বরিশাল-ভোলা সড়কে কালাবদর ও তেতুলিয়া সেতু নির্মাণ, মিঠামইন সেনানিবাস হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার মরিচখালী পর্যন্ত একটি দোতলা সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন এবং নতুন সেতু ও ইনার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা, যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনাসহ ঢাকা শহরে সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলমান রয়েছে।’
অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু বৃহৎ সেতু নির্মাণেরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী
রেলের উন্নয়নে ৫লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩০ প্রকল্প:
বর্তমান বিশ্বে স্থল যোগাযোগ ব্যবস্থায় যাত্রী ও মালামাল পরিবহণে—রেলওয়ে খাতটি অধিকতর নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন,‘ আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বল্প খরচে ও নিরাপদে ভ্রমণ এবং যোগাযোগের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে গণপরিবহন মাধ্যম হিসেবে রেলওয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার এ খাতের সুষম ও সুসংহত উন্নয়নের স্বার্থে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। এ মহাপরিকল্পনার আওতায় ৬টি ধাপে ৫,৫৩,৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।’
মোস্তফা কামাল বলেন,‘ বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০৪৫) সংশোধিত মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার সাথে কক্সবাজার, মোংলা বন্দর, টুঙ্গীপাড়া, বরিশাল, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য এলাকা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনয়ন, পদ্মা বহুমুখী সেতুতে রেল লিংক-স্থাপন, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে ও আঞ্চলিক রেলওয়ে যোগাযোগ স্থাপন এবং উন্নত কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালুর মধ্যে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর, যেমন- ঢাকা, চট্টগ্রাম,রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট প্রভৃতি শহরের সাথে নিকটবর্তী শহরতলীর যোগাযোগ স্থাপন করার নিমিত্ত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন,‘ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ৭৯৮.০৯ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ, বিদ্যমান রেললাইনের সমান্তরালে ৮৯৭ কিলোমিটার ডুয়ালগেজ/ ডাবল রেললাইন নির্মাণ, ৮৪৬.৫১ কিলোমিটার রেললাইন সংস্কার, ৯টি গুরুত্বপূর্ণ রেল সেতু নির্মাণ, লেভেল ক্রসিং গেটসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইসিডি নির্মাণ, ওয়ার্কশপ নির্মাণ, এবং আধুনিকায়ন, ১৬০টি নতুন লোকোমেটিভ, ১,৭০৪টি যাত্রীবাহী কোচ, আধুনিক রক্ষণাবেক্ষণ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ২২২টি স্টেশনের সিগনালিং ব্যবস্থার রেলওয়ে ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকা-চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটে যাত্রী পরিবহণের জন্য বিগত ২৭ মার্চ ‘মিতালি এক্সপ্রেস’ নামে
একটি ট্রেন উদ্বোধন করা হয়েছে। বিভিন্ন রুটে ৬টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে, এবং ১৫০টি যাত্রীবাহী কোচ ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রেলওয়ের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য ৪৭,৭০৩টি পদ সম্বলিত সংশোধিত জনবল কাঠামোর চূড়ান্ত অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দেশের রেলখাতে বাস্তবায়নাধীন বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের প্রায় ৪০ শতাংশ, চট্টগ্রাম-দোহাজারি- ঘুমদুম রেললাইন প্রকল্পের প্রায় ৫৭ শতাংশ এবং মংলা-খুলনা রেললাইন প্রকল্পের কাজ প্রায় ৭৭.৭৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, যমুনা রেল সেতু এবং রুপসা রেলসেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে বলে জানান তিনি।