ডেস্ক রিপোর্ট

২৫ জুন ২০২২, ১০:৩৫ অপরাহ্ণ

বিচারহীনতার ফলেই শিক্ষক নির্যাতন ও মৌলবাদীদের আস্ফালন: কমরেড ফিরোজ

আপডেট টাইম : জুন ২৫, ২০২২ ১০:৩৫ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক:: নড়াইলের মির্জাপুর এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হেনস্থার ঘটনা জাতির জন্য লজ্জাজনক মন্তব্য করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী রাজনীতি তোষণ এবং বিচারহীনতার ফলেই শিক্ষক নির্যাতন ও মৌলবাদীদের আস্ফালন বেড়ে চলেছে।

আজ শনিবার, ২৫ জুন সংবাদপত্রে দেয়া এক বিবৃতিতে নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্চনার ন্যাক্কারজনক ঘটনা এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে লাঞ্ছনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে কমরেড ফিরোজ বলেন, নড়াইলের মির্জাপুর কলেজের এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে অধ্যক্ষের কাছে উত্তেজিত অবস্থায় যান এলাকাবাসী ও কিছু শিক্ষার্থীরা। সে সময় তিনি কলেজের সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে বিষয়টি পুলিশকে জানান। এতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তিনি ওই শিক্ষার্থীকে রক্ষা করার জন্য পুলিশে ফোন করেন। একথা বলে উত্তেজিত ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ওই শিক্ষকের উপর হামলে পড়েন। এ সময়ে কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষকেও নির্মমভাবে প্রহার করে আহত করা হয়। অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস, শিক্ষক প্রশান্ত রায় এবং শিক্ষক আরুণ কুমার মন্ডলের তিনটি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ধর্মান্ধ দুর্বৃত্তরা। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কলেজে তাণ্ডব চালানো হয়। শুধু এতেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা গলায় দিয়ে লাঞ্চিত করা হয়। এসময় সেখানে পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে সে ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে একজন শিক্ষকের এধরণের লাঞ্ছনা শুধুমাত্র সেই শিক্ষক নন গোটা জাতির জন্য লজ্জাজনক। এবং এক সপ্তাহ পূর্বে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় এখনো কেন কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হলনা সে বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বিভিন্ন সূত্রে এখন জানা যাচ্ছে কলেজেরই একটি চক্র শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অন্য একজনকে ওই পদে আনতে চান বলেই এমন মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে লাঞ্চিত করা হয়েছে। এর পেছনে নিয়োগ বাণিজ্য ও অন্যান্য কায়েমী স্বার্থের বিষয় আছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

একইভাবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান সঞ্জয় সরকার এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়ের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে তাদের বিরুদ্ধে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। মৌলবাদবিরোধী তাদের অবস্থানকে ধর্মীয় অবমাননা বলে প্রচার করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি এই সাপ্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে। সম্প্রতি রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা প্রশ্নে একটি উদ্দীপকে নারীর অশালীন পোষকই ইভটিজিং এর জন্য দায়ী এ সংক্রান্ত বক্তব্য দেয়া হয়। সারা দেশের প্রগতিশীল মানুষ এর প্রতিবাদ করে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকেরাও এর প্রতিবাদ করেন। যেখানে দরকার ছিল ওই পরীক্ষার প্রশ্ন প্রস্তুতকারীকে খুজে বের করা এবং শাস্তির আওতায় আনা তা না করে এখন প্রতিবাদকারী শিক্ষকদেরকে হেনস্থা করা হচ্ছে।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কাউকে ঘায়েল করে কোন গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধার, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও উন্মাদনা তৈরি করা ইত্যাদি আজ হরহামেশাই ঘটে চলেছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান শ্যামল কান্তি ভক্ত নামে একজন শিক্ষককে সকলের সামনে চড় মেরেছিলেন এবং কান ধরে উঠবস করিয়ে পুলিশে দিয়েছিলেন। ওই সংসদ সদস্য বা এর সাথে যুক্তদের কোন বিচার হয়নি। মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে বিজ্ঞান পড়ানোর অপরাধে মারা হয়েছিল, জেলে দেয়া হয়েছিল। সে ঘটনার সাথে যুক্ত কারো বিচার হয়নি। নওগাঁয় হিজাব পরার কারণে একজন শিক্ষার্থীকে মারধোর করেছেন এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমোদিনী পাল নামের একজন নারী শিক্ষককে হেনস্থা করা হল। অথচ দেখা গেল স্কুল ইউনিফর্ম না পরে আসায় তিনি শিক্ষার্থীদের বকাঝকা করেছেন। একের পর এক এধরণের ঘটনা ঘটে চলছে অথচ রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসন কোন ঘটনার বিচার করছে না। আবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে শিক্ষক হয়রানি, মামলা, আটক এর ঘটনা তো আছেই।

কমরেড ফিরোজ বলেন, শাসকদলের সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী রাজনীতি তোষণ এবং একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার না হওয়ার কারণেই এধরণের সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির বিস্তার ঘটছে। তিনি অবিলম্বে শিক্ষকদের উপর এই নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এবং ধর্মান্ধ-মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং এদের প্রশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় বিশ্বাসী সকল বাম-প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল-সংগঠন-ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন-গণপ্রতিরোধের মাধ্যমে রুখে দাড়ানোর জন্য আহ্বান জানান।

শেয়ার করুন