ডেস্ক রিপোর্ট

১৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪০ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে প্রথমবার উদযাপিত হলো ব্যতিক্রমী ‘খনার মেলা’

আপডেট টাইম : এপ্রিল ১৪, ২০২৪ ১১:৪০ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় একদিনব্যাপী ‘খনার মেলা’ শেষ হয়েছে। এ মেলায় গ্রামীণ সংস্কৃতি ও কৃষিতে খনার বচনের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে নানান পরিবেশনায়।

জেলার কেন্দুয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম আঙ্গারোয়া। চৈত্রসংক্রান্তির দিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোরের হাওয়ায় উদ্বোধন হয় খনার মেলা। পহেলা বৈশাখের ভোরের হাওয়ায় শেষ হয়েছে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন।

মঙ্গলঘর পরিসর আয়োজিত এই মেলা উদ্বোধনের পর মেলা মঞ্চে খনার বচন গানে গানে পরিবেশন করেন শিল্পীরা। পালাগান, গীত, বাউলগান ও নানা লোকায়ত সংগীতের বিভিন্ন পরিবেশনায় মুগ্ধতা ছড়ায় দর্শক-শ্রোতাদের মাঝে। এ ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে কৃষির নানা উপকরণের প্রদর্শনী ছাড়াও রয়েছে দেশজ বীজ কৃষকদের মাঝে বিনিময়।

চট্রগ্রাম থেকে পরিবার নিয়ে খনার মেলা দেখতে এসেছেন সাংস্কৃতিক কর্মী আসমা বিথি। তিনি বলেন, খনার মেলা এর আগে কোথাও দেখিনি। এই মেলা ব্যতিক্রম বলেই দেখতে এসেছি। আমাদের যে নিজস্ব গান আছে, পুঁথি আছে। এ যেন এক অন্য রকম অনুভূতি।

সোনারগাঁও থেকে এসেছেন শাহেদ কায়েস। তিনি বলেন, সকাল থেকে যে খনার মেলা চলছে তা আমার মাঝে অসাধারণ এক অনুভূতি সৃষ্টি করেছে। খনার মেলা আইডিয়াটা নতুন। বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গেরও কোথাও এর আগে হয়নি। আমাদের খনার বচনের সঙ্গে কৃষি সংস্কৃতির এবং প্রাণ প্রকৃতির একটা সম্পর্ক আছে। আমরা আজ যে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলছি খনা তা হাজার বছর আগেই বলে গেছেন। প্রকৃতি ঘনিষ্ট যে জীবন আমাদের তা খনার বচনে রয়েছে। প্রতিবাদী একটা চরিত্র ছিল খনার। সেখানে তিনি সমাজের নানা অসঙ্গিত নিয়ে কথা বরেছেন প্রবাদ প্রবচনের মাধ্যমে। তার কথা হৃদয়ঙ্গম করে প্রকৃতিতে ফিরে যাওয়া দরকার আমাদের।

মেলায় আসা কবি শ্মশাং ঠাকুর বলেন, খনার মেলা বিষযটি আসলে আকর্ষনীয়। খনার বিষয়টাকে বাংলার ঐতিহ্য থেকে কেউ কখনও সামনে আনিনি। বাঙ্গালি জাতিস্বত্বার যে চিন্তাকে ভেতরে আটকে রেখেছি, বর্তমানে সেই চিন্তা থেকেই সবাই একত্রিত হয়ে যায়। এ দিক থেকে খনার মেলা একটি প্রতীক। তিনি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না, কোনো ধার্মিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। আর্থ সামাজিক যেসব সত্য মানুষের জীবনের সঙ্গে, খাবারের সঙ্গে, আবহাওয়ার সঙ্গে জড়িত সেই সত্যগুলো খনা বলতেন। সেই সময়ের ধর্ম, রাজনীতি তার বিরুদ্ধে ছিল, বর্তমান সময়টাও সেইরকম।

মেলায় আসা কৃষকরা বলছেন, মেলায় গিয়ে তারা খনার বচনে কৃষির অনেক নতুন বিষয় জানতে পেরেছেন। যা তাদের কৃষিকাজে অনেক উপকারে আসবে।

আঙ্গারোয়া গ্রামের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, প্রকৃত অর্থের খনার বচন বলতে যে কি তা আমাদের জানা ছিল না। মেলার মাধ্যমে খনার বচনের অনেক কিছুই জানতে পেরেছি আমরা। অনেক বচন আছে খনার, যা জানা ছিল না। আজ এখান থেকে জানতে পারছি।

মঙ্গলঘর পরিসরের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাঙালির যে হাজার বছরের জ্ঞান বিশেষ করে কৃষিতে তা খনার বচন থেকে নেওয়া। কৃষি কৃষ্টির জ্ঞানের পরিবাহক তিনি। তাই কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে খনাকে সামনে নিয়ে আসছি আমরা। মেলা মঞ্চে সারা দিন ও রাতে খনার বচন গানে, কবিতায়, আলোচনায় পরিবেশনার মধ্য দিয়ে গেছে। কৃষিতে খনার জ্ঞান ছড়িয়ে দিতেই মেলার আযোজন করা হয়েছে।

শেয়ার করুন