ডেস্ক রিপোর্ট

৪ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৬ অপরাহ্ণ

আর কোনো তামাশার নির্বাচন হতে দেব না: মির্জা ফখরুল

আপডেট টাইম : মার্চ ৪, ২০২৩ ১১:৪৬ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: এবার আর কোনো তামাশার নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনে করছে, গত দুটি নির্বাচন তারা যেভাবে করেছে, এভাবেই আবার নির্বাচন করবে। এভাবেই জনগণকে আবার শোষণ করবে, দেশের সম্পদ লুট করবে। কিন্তু এবার আর তা মানুষ হতে দেবে না।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় (আজমপুর) বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপণ্য এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, মানুষের অধিকার হরণ, নৈরাজ্য সৃষ্টি, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা, কর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি ও পুলিশের গুলিতে বিএনপির নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে দেশের মহানগরগুলোর সব থানায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন হলে সেই নির্বাচন যে কখনো অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না, সেটা গত দুটি নির্বাচনে দেখেছি। তাই সবার আগে সরকারকে পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার গঠন করতে হবে।’

এসব দাবিতে মানুষ রাজপথে নেমে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল আন্দোলন করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল সবাইকে এ আন্দোলনে অংশ নিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় নিতে নয়, জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন।

মামলার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কথায় কথায় মামলা দেয়, মিথ্যা মামলা দেয়। রাতে বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এই ভয় দেখিয়ে কি আমাদের লাভ আছে? বিগত ১৫ বছর ধরে আন্দোলনে আছি ও থাকব। ছয় শতাধিক কর্মীকে গুম করে, হাজার খানেকের ওপরে হত্যা করেও বিএনপিকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি। সব বাধা অতিক্রম করেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।’

সরকার দেশ চালাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তারা অর্থনীতিতে সংস্কার আনতে, অর্থনীতিকে চালু রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। কথায় কথায় বৈশ্বিক সমস্যা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কথা বলে। এগুলো আসল সমস্যা নয়। সরকারের দুর্নীতির কারণে দেশে এসব সমস্যা হচ্ছে। তাদের কেউ কানাডায়-মালয়েশিয়ায় বাড়ি বানানোয়, টাকা পাচার করায় ও দেশের সম্পদ বিদেশে জমা করায় এসব সমস্যা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীও মানুষের সঙ্গে উপহাস করেন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষ খাদ্যের সংকটে আছে। অথচ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী প্রধানমন্ত্রী কদিন আগেও রাষ্ট্রপতির বাড়িতে (কিশোরগঞ্জে) হাওর এলাকায় গেলে তাঁকে ৪৩ পদের খাবার রান্না করে খাওয়ানো হয়েছে। সেখানে ২৩ প্রকারের মাছ, খাসি, হাঁস ও গরুর গোশত খাওয়া হয়েছে। যখন মানুষ খেতে পাচ্ছে না, খাদ্যের অভাব চলছে, তখন এটা সাধারণ মানুষের সঙ্গে উপহাস।’

বক্তব্যের শুরুতে সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের কাছে মির্জা ফখরুল জানতে চান, বিএনপির শাসনামলে (২০০১-২০০৬ সাল) চাল-ডালের কেজিপ্রতি দাম কত ছিল আর এখন কত হয়েছে? নেতা-কর্মীরা তখন চিৎকার করে বলেন, চাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে। বিএনপির সময়ে এই দাম প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ১৭-১৮ টাকা ছিল বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।

তেল, কাঁচা মরিচ, ব্রয়লার মুরগি, ডিমের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘টিসিবির ট্রাকে আগে যে পণ্য দিত, সরকার সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন যাদের শুধু কার্ড আছে, তারাই কিনতে পারবে। ফলে যারা সরকারি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, সেসব সাধারণ মানুষ এখন আর ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারছে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব নেই, জবাবদিহি নেই, জনগণের পরোয়াও করে না তারা। যে সংসদ আছে সেখানে কারা? সব তাদের লোকজন, যারা নিশিরাতের ভোটে নির্বাচিত।’

সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনারও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাণ্ডব চালাচ্ছে।

আজ ঢাকা মহানগরের ৫০টি থানায় বিক্ষোভ পদযাত্রা করেছে বিএনপি। বিএনপির উত্তরা পূর্ব থানার কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন