ডেস্ক রিপোর্ট
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: গণহত্যার বিচার, শহিদের সংখ্যা নির্ধারণ, শহিদ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করাসহ সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ ছাত্র ইউনিয়নের
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে উৎখাত হওয়া গণহত্যাকারীদের একাধিক ট্রাইব্যুনালে দ্রুততম সময়ে বিচার করা, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল ও সীমান্তহত্যা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবিতে আজ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ শাহবাগে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের সংখ্যা নির্ধারণ, আহত ও শহিদ পরিবারদের ক্ষতিপূরণ ও দ্রুত পুনর্বাসনের দাবিও জানানো হয়।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনির সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, একদিকে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের আলাপ শুনতে পাই, আবার অন্যদিকে তারাই দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক সভা করে চলেছেন। আমরা তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশ বাকশালকে কখনো মানেনি, মানবেও না।
তিনি আরো বলেন, সীমান্তে গত ১৫ বছরে ৬৫০ এর বেশি মানুষকে বিএসএফ-এর গুলিতে প্রাণ হারাতে দেখেছি। সীমান্তে আর একটি প্রাণও যেন না ঝরে, এমন পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের বিকল্প নেই। যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার দুজন মানুষকে নির্যাতন করে মেরে ফেলার ঘটনা আমরা দেখেছি। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, অপরাধীরও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার অধিকার আছে এবং তা যদি বর্তমান সরকার নিশ্চিত না করতে পারে তাহলে বৈষম্য ও শোষণহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে।
ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক তামজিদ হায়দার চঞ্চল তার বক্তব্যে বলেন, স্বৈরাচারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ছুড়ে ফেলে সমান সুযোগ, অধিকারের ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করতে হবে। বর্তমান সরকারকে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কঠোর হতে হবে। সীমান্ত হত্যা বন্ধে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে।
কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি শিমুল কুম্ভকার বলেন, শহিদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে আমরা কোনো কালক্ষেপন দেখতে চাই না। আহত সকলের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানে আহত কেউ নিজের সন্তান কিংবা স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে চিকিৎসা করতে বাধ্য হচ্ছে, এমন ঘটনা আর একটিও আমরা দেখতে চাই না।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি ফয়সাল মাহমুদ বলেন, যে কাঠামো ফ্যাসিস্ট উৎপাদন করে সেই কাঠামোর মূলোৎপাটনের বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে অতি শীঘ্রই এই সংক্রান্ত রূপরেখা প্রকাশ করতে হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সহ-সভাপতি অন্তু অরিন্দম বলেন, ভবিষ্যতে নতুন ফ্যাসিস্ট কাঠামো এদেশের ছাত্র-জনতা মেনে নিবে না। কাজেই এই সরকারকে সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ সকল নিপীড়নমূলক আইন বাতিল করতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, একাত্তরের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান যেমন বাকশাল গঠন করে মানুষের কন্ঠরোধ করেছিলো, তার কন্যাও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে। মাঝখানে বিএনপি এবং স্বৈরাচার এরশাদের সরকারও গণআকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে হেঁটেছে। হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণকারী হিসেবে আমরা যেমন সেই সরকারের প্রতি সহযোগীতার উদ্দেশ্যে এক হাত বাড়িয়ে রেখেছি, তেমনি আমাদের আমাদের দুচোখ সচেতন দৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে। গণআকাঙ্ক্ষার বিপরীত ভাবনার প্রতিফলন অন্তর্বর্তী সরকারের মাঝে দেখলে আমরা চুপ করে থাকবো না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের দেশে ফিরিয়ে এনে প্রয়োজনে একাধিক ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ১৫ বছরে হাসিনা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে এদেশের মানুষের কন্ঠরোধ করতে, সে সবের অন্যতম সাইবার নিরাপত্তা আইন। স্বৈরাচারের অস্ত্র সংশোধন না করে তা ছুড়ে ফেলতে হবে, বাতিল করতে হবে।
সমাবেশে গণুভ্যত্থানের সময় আহত শিক্ষার্থীদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসা রিক্সা শ্রমিক নাজ্জু শেখ বলেন, ছাত্রদের সাথে আমরাও মাঠে ছিলাম এবং নিজেদের সাধ্যমত তাদের সাহায্য করেছি। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে স্বরচিত একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।