ডেস্ক রিপোর্ট

৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৫:৩৬ অপরাহ্ণ

সেজান জুসে ৫৪ শ্রমিক হত্যাকান্ডে অভিযোগপত্রে মালিককে অব্যহতি ন্যায়বিচারের মূলে কুঠারাঘাত

আপডেট টাইম : সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩ ৫:৩৬ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন ও সাধারণ সম্পাদক
আহসান হাবিব বুলবুল আজ ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এক বিবৃতিতে হাশেম ফুড লিমিটেডের সেজান জুস কারখানায়অগ্নিকান্ডে ৫৪ জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার ২ বছর পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে দায়ী কারখানা মালিকদের অব্যহতি দেয়া এবং ধারা পরিবর্তন করে মামলা কে দুর্বল করার নিন্দা এবং পুন:তদন্ত করার দাবি জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০২১ সালের ৮ জুলাই রূপগঞ্জের হাসেম ফুড কারখানায় আগুনে পুড়ে র্কমর্কতা-শ্রমিকসহ ৫৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ভুলতা পুলিম ফাঁড়ির তৎকালিন পরর্দিশক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসমে ও তার চার ছেলেসহ ৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। ঘটনার দুই বছর পর মামলার তদন্তকারী র্কমর্কতা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির নারায়ণগঞ্জ অফিসের পরিদর্শক মোকছেদুর রহমান গত ৩ সেপ্টেম্বরে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

অভিযোগপত্রে তদন্ত র্কমর্কতা বলেছেন তদন্তকালে হাসেম ও তার চার ছেলের বিরুদ্ধে মামলায় জড়িত থাকার সুনির্দি্ষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং অভিযোগে র্বর্ণিত পেনাল কোড ৩০২/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭ ধারার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এজন্য তদন্তকারী র্কমর্কতা মালিক এবং তার চার ছেলেকে অব্যহতি দিয়েছেন এবং আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩০৪ (ক) ৩৪ ধারায় অবহেলার দ্বারা মৃত্যু সংঘটনের অভিযোগ এনেছেন যে ধারায় একজন আসামির র্সবোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। অথচ অভিযোগপত্রের ঘটনা বিবরণিতে তদন্ত র্কমর্কতা যে সকল অপরাধের কথা উল্ল্যেখ করেছেন যেমন- ৩৪ হাজার ৫০০ র্বগফুটের হাসেম ফুড কারখানার মূল নকশায় তিনটি সিঁড়ি থাকলেও নির্মাণ কালে দুটি সিঁড়ি রাখা হয়। ২০২০ সালের ২ মে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ম্যাংগো জুস উৎপাদনের জন্য ছাড়পত্র নেওয়া হলেও সেখানে ম্যাংগো জুসের পাশাপাশি র্শত ভঙ্গ করে লাচ্ছা সেমাই, টোস্ট, মুড়ি, ক্যান্ডি, জ্যাম- জেলি, আচার, ম্যাংগো বার, সফট ড্রিঙ্ক ইত্যাদি খাবার উৎপাদন হতো। দুই দশমিক ৫৯ একর জমির ছাড়পত্র নেওয়া হলওে অনুমতি ছাড়া নসিলা উৎপাদনের জন্য কারখানা সম্প্রসারণ করা হয়।

কারখানায় র্পযাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। র্দুঘটনা কবলতি ভবনে শ্রমিকদের বের হতে ভেতর ও বাইরে থেকে দরজা খোলার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। প্রতটি ফ্লোরে নেট দিয়ে। শ্রমিকদের আবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল ও সিঁড়ি তালাবদ্ধ ছিল। কারখানায় শ্রমিকদের ফায়ার প্রশক্ষিণ ও ফায়ার কর্মী ছিলনা। দূর্ঘটনা কবলিত ভবনের নিচ তলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরে দাহ্য পদার্থ মজুদ ছিল। সেই দাহ্য পদার্থের সঙ্গে উৎপাদিত মালামাল মজুদ করে রাখা হয়েছিল। কারখানার ভবনের ভেতরে মেশিন স্থাপনে দূরত্বের লেআউট প্ল্যান মানা হয়নি। এগজাস্ট ফ্যানও ভবনের ভেতরে রাখা ছিল। নকশা অনুযায়ী কারখানার দক্ষিণ পাশে ২০ ফুট রাস্তা ও পূর্ব পাশে ১০ ফুট এবং পশ্চিম পাশে ২০ ফুট রাস্তা রাখার কথা থাকলেও রাখা হয়নি। কারখানাটি ৬ মাসের র্শত সাপেক্ষে অনুমোদন নিয়ে করা হলেও সেই র্শত বাস্তবায়ন করা হয়নি। শিশু আইন অমান্য করে শিশু শ্রমিক
নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আগুনে পোড়া অধিকাংশ মৃতদেহ শিশুর ইত্যাদি- কোনোভাবেই মালিকদের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া সংগটিত হওয়া এবং দিনের পর দিন তা অব্যাহত থাকার সুযোগ নেই। কারখানা নির্মাণ থেকে উৎপাদন পরিচালনার প্রতিটি পর্যায়ে আইন লঙ্ঘনের যে ভয়াবাহ চর্চা হাসেম ফুড কর্তৃপক্ষ করেছে তা অবশ্যই মালিকদের ইচ্ছা এবং নির্দেশনায় সংগটিত হয়েছে। অভিযোগপত্রেও উল্ল্যেখ আছে যে হাসেম ফুডসের মালিক ও তাদের নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের অপরিকল্পনা-অব্যবস্থাপনা জনিত কারণে বৈদ্যুতিক গোলাযোগে সৃষ্ট আগুন থেকে অগ্নিকান্ডের কারণ তদন্তে প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে অথচ অভিযোগ পত্র থেকে কারখানা মালিক আবুল হাসেম এবং তার ৪ ছেলের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে যা স্ববিরোধীতা।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন অপরাধের ধরণ মালিকের সম্পৃক্ততা এবং অতিমুনাফার লোভে ইচ্ছাকৃতভাবে সংগঠিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রমান না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে কারখানা মালিকদের দায় থেকে অব্যহতি দেওয়া এবং অভিযোগের ধারা পরিবর্তন করে মামলাকে লঘু করে দেওয়া ন্যায়বিচারের মূলে কুঠারাঘাতের শামিল। নেতৃবৃন্দ নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার অধিকার পদদলন কে উৎসাহিত করার এই অভিযোগপত্র প্রত্যাহার করে পুণঃতদন্ত করার জোর দাবি জানান।

নেতৃবৃন্দ বলেন, মালিক তোষণ বা মালিকদের রক্ষার নীতির র্চচা অব্যাহত রাখলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ শ্রমিকদের আস্থা হারাবে যা সুখকর হবনো।

শেয়ার করুন