ডেস্ক রিপোর্ট

২১ আগস্ট ২০২৩, ৮:৪৭ অপরাহ্ণ

সিআইডি পরিচয়ে খুলনার ৪ চিকিৎসককে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ

আপডেট টাইম : আগস্ট ২১, ২০২৩ ৮:৪৭ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: খুলনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া চার চিকিৎসকের সন্ধান চেয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। গত শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সুনির্দিষ্ট কারণ না দেখিয়ে সাদা পোশাকে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে পরিবারের দাবি। তিন দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন তারা।

এই চিকিৎসকরা কোথায় ও কেমন আছেন তা জানতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে খুলনা বিএমএ মিলনায়তনে ভুক্তভোগীদের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।

নিখোঁজ চার চিকিৎসক হলেন- ডা. লুইস সৌরভ সরকার, ডা. নাদিয়া মেহজাবিন তৃষা, ডা. মুত্তাহিন হাসান লামিয়া ও ডা. শর্মিষ্ঠা সাহা।

সংবাদ সম্মেলনে তৃষার মা নিলুফার ইয়াসমিন, সৌরভের মা ম্যাকুয়েল সরকার, লামিয়ার মা ফেরদৌসী আক্তার ও শর্মিষ্ঠার বাবা ডা. দীনবন্ধু মন্ডল তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৮ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে রাত ২টার মধ্যে সবাইকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান সিআইডি সদস্যরা। এর মধ্যে ডা. লুইসকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রাত ২টার দিকে। অভিযানের সময় সিআইডি সদস্যরা বাসার মালামাল তছনছ করে গেছেন। আটকের কারণ জানতে চাইলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ সময় তারা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমার মোবাইল নম্বর দিয়ে যান। কিন্তু সেই নম্বরে ফোন করে তারা কোনো সাড়া পাননি।

আবেগাপ্লুত চিকিৎসকদের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা তাদের কোনো কথা বলার সুযোগই দেননি। তারা বাসায় তল্লাশির নামে ব্যক্তিগত কাগজপত্র ও ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ভেঙে ফেলেছেন। কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখাতে পারেননি। এক কাপড়ে পৃথকভাবে নিয়ে গেছেন। একটি যোগাযোগের মোবাইল নম্বর দিলেও সেটি কেউ ধরছেন না।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চার চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় সিআইডি সদর দপ্তরে গিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে তারা নিশ্চিত হয়েছেন সদর দপ্তরেই তাদের সন্তানদের আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু কেন তাদের আটক করা হয়েছে- এ ব্যাপারে সিআইডির পক্ষ থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। তিন দিন অতিবাহিত হলেও পরিবারের কোনো সদস্যদের সঙ্গে তাদের দেখা করতে দেয়নি। মাকে না পেয়ে নারী চিকিৎসকদের ছোট সন্তানরা কাঁদছে। তারা দ্রুত সন্তানদের বিষয়ে তথ্য পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

অভিভাবকরা বলেন, তাদের সন্তানরা অপরাধী হলেও কী অপরাধ করেছে, কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে- আইন অনুযায়ী তা তাদের জানার অধিকার রয়েছে। তাই তাদের সন্ধান চাই।

ডা. লামিয়ার মা ফেরদৌসী আক্তার বলেন, লামিয়ার আড়াই বছরের একটি শিশুসহ দুটি সন্তান রয়েছে। শিশুরা তাদের মাকে খুঁজছে। আমরা কোনোভাবেই তাদের বোঝাতে পারছি না।

এক প্রশ্নের জবাবে অভিভাবকরা জানান, তাদের সন্তানরা এক সময়ে খুলনার আলোচিত ডা. তারিমের থ্রি ডক্টরস কোচিংয়ে পড়াশোনা করেছেন। কোচিংয়ের নিয়ম অনুযায়ী ফি পরিশোধ করেছেন। নিজ নিজ মেধা ও যোগ্যতায় তারা চিকিৎসক হয়েছেন। তাই মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে যা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়।

অপরদিকে নিখোঁজ চার চিকিৎসকের সন্ধান চেয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) খুলনা জেলা শাখা। রোববার রাতে পুলিশ কমিশনারকে দেওয়া চিঠিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসকদের খুঁজে বের করার দাবি জানানো হয়।

বিএমএ’র খুলনা জেলা সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, প্রায় তিন দিন ধরে নিখোঁজ চার চিকিৎসকের সন্ধান চেয়েছি। তারা কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হলে সেটি আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কিন্তু কোনোভাবেই আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তিন দিন ধরে কাউকে আটকে রাখা যায় না। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু এখানে কী হচ্ছে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।

চিকিৎসকদের নিখোঁজের বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই বলে জানিয়েছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন) এ জেড এস তৈমুর রহমান।

শেয়ার করুন