ডেস্ক রিপোর্ট

১৬ আগস্ট ২০২৩, ১:২৩ পূর্বাহ্ণ

সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে তাণ্ডবকারীদের নাম পেয়েছে ডিবি

আপডেট টাইম : আগস্ট ১৬, ২০২৩ ১:২৩ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিতার ডেস্ক: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে তাণ্ডবকারীদের নাম পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

ডিবি বলছে, সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে একটা অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি করাই ছিল তাণ্ডবকারীদের উদ্দেশ্য। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্তকরণের কাজও চলমান।

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) রাতে জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, শুধু সাঈদীকে ঘিরেই নয়, যখনই তারা (জামায়াতে ইসলামী) সুযোগ পাচ্ছে তখনই পুলিশের ওপর হামলা, মানুষের জানমালের ক্ষতি করছে ও গাড়িতে আগুন দিচ্ছে।

ডিবিপ্রধান আরও বলেন, এছাড়া জামায়াতে ইসলামী নয়, অন্য কিছু গোষ্ঠী সমর্থক রয়েছে। তারা চাচ্ছে সামনে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে একটা অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। আমাদের কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট আছে, অনেকেরই নাম পেয়েছি। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।

২০১৪ সালে সাঈদীর মামলায় রায় দেওয়ার সময়ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জ্বালাও-পোড়াও করেছিলেন বলে জানান হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, তাদের ১৫ আগস্টের প্রোগ্রাম বানচাল করার উদ্দেশ্য ছিল। নতুবা সাঈদীর পরিবার চাইলো মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে। সেই মুহূর্তে ২০১৪ সালে যারা হামলা ও বোমা নিক্ষেপ করেছিল, ও সাঈদীকে চাঁদে দেখার প্রোপাগান্ডা যারা চালিয়েছিল তারাই আবার তাণ্ডবলীলা চালায়। এর আগেও জামায়াতে ইসলামী ডিএমপি কমিশনারের অনুমতি ছাড়াই মিরপুরসহ ঢাকার বেশকিছু এলাকায় মিছিল-মিটিং করেছে।

তিনি আরও বলেন, সাঈদীর ছেলে সরকারের কাছে যেভাবে অনুনয়-বিনয় করছিলেন মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য, সেই অনুমতিও দিয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ। আমরা ভেবেছিলাম মরদেহ নিয়ে চলে যাবে এবং তাদের নেতার জন্য দোয়া মাহফিল করবে। আমরা এটিই ভেবেছিলাম। কিন্তু আমরা দেখলাম জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাঙচুর করছেন। মোটরসাইকেলে আগুন দিচ্ছেন। পুলিশের ওপর তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছেন।

তাণ্ডবলীলা চালিয়ে সরকারের ইমেজ নষ্ট করতে চেয়েছে উল্লেখ করে ডিবিপ্রধান বলেন, এর আগেও তারা রাজধানীর আবুল হোটেলের সামনে পুলিশের ওপর হামলা করেছিল। এটা নতুন না, সুযোগ বুঝে তারা হামলা চালায়। সাঈদীর মৃত্যুর পর তার ছেলে আমাদের সঙ্গে কো-অপারেশন করেছেন। কিন্তু ‘বাঁশের কেল্লা’ নামক অনলাইনের মাধ্যমে সবাইকে শাহবাগ ডেকে এনে জড়ো করা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে সোমবার (১৪ আগস্ট) দিনগত রাতে তাণ্ডব চালিয়েছে জামায়াত-শিবির।

রাতের হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়টি বিবেচনা করে বুধবার (১৬ আগস্ট) গায়েবানা জানাজার নামাজের অনুমতি দেওয়া হবে না হলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, বিএসএমএমইউতে সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তার মরদেহ হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে সারারাত জামায়াত-শিবির ও তার স্বজনরা নাটক করেছে এবং তাণ্ডব চালিয়েছে। তিনি মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তার দুই ছেলেকে জানায়। পরে তার দুই ছেলে মরদেহ পিরোজপুর নেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। এর মধ্যে জেল কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্ত করার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে। সেই অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে আসা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট এসে মরদেহের সুরতহাল সম্পূর্ণ করেন। যখন ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যাওয়া হবে সেই মুহূর্তে তার ছেলেরা জোর দাবি জানান, তারা ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ নিয়ে যেতে চান। এ বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের অনেক সময়ক্ষেপণ হয়। পরে রাত একটা/দেড়টার দিকে তারা জেল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায়।

তিনি বলেন, এরপর মরদেহের গোসল শেষে পরিবার প্রস্তুতি নেয় পিরোজপুর নিয়ে যাবে। তখন বিএসএমএমইউ ও শাহবাগে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া কয়েক হাজার জামায়াত-শিবির কর্মী দাবি তুলেন যে, ‘জানাজার নামাজ পড়ে মরদেহ নিতে চাই।’ তখন আমরা তাদের বলি আপনারা এখানে জানাজা পড়তে পারেন। আমরা তাদের বলি আগামীকাল জাতীয় শোক দিবস আমাদের ব্যস্ততা আছে, আপনারা এখন জানাজা পড়ে মরদেহ নিয়ে যেতে পারেন। রাত সোয়া ২টার দিকে তারা জানাজার নামাজের পরিবর্তে মোনাজাত করে আধা ঘণ্টা। তারা বলে আমরা জানাজা পড়বো না মোনাজাত করেছি, পরে আমরা গায়েবানা জানাজার নামাজ পড়বো। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা মোনাজাত করেন।

‘কিন্তু যখন মরদেহ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়, তখন হাজার হাজার জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী মরদেহবাহী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তারা মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে দেবেন না। এসময় মরদেহবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসার ও সদস্যদের ওপর হামলা করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। গাড়ি ভাঙচুরও শুরু করেন তারা। এ হামলায় ডিসি রমনাসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র অফিসার আহত হন। তারা পুলিশের ৪-৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেন। দুটি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে দেয়। আমরা ধৈর্য সহকারে এ তাণ্ডব সহ্য করি। তারপরও আমরা কোনো শক্তি প্রয়োগ করিনি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ফজরের নামাজের পরে তাদের আবারও অনুমতি দেওয়া হলো জানাজা পড়ার। কিন্তু তারা আমাদের অফিসারদের বের করে দিয়ে বিএসএমএমইউ দখলে নেয়। তারা মরদেহ পিরোজপুর নিতে দেবে না। এরপর ফেসবুক তারা প্রচার শুরু করলো সারাদেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের শাহবাগে জড়ো হওয়ার জন্য। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাধ্য হয়ে অত্যন্ত সীমিত আকারে শক্তি প্রয়োগ করি। আমরা কিছু টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করি। এরপর সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুর পাঠানোর ব্যবস্থা করি। কারণ হাসপাতালে অনেক রোগী ছিল। এ জন্য পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।

শেয়ার করুন