ডেস্ক রিপোর্ট
১১ মে ২০২৪, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা মহল্লায় অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী সরবোর। যা টেপাখোলা লেক হিসেবে পরিচিত। এই লেক এবং আশপাশের এলাকার সৌন্দর্যবর্ধণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা পরিষদের জায়গায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
সৌন্দর্যবর্ধনসহ এই লেকের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৩১টি গাছ কেটে ফেলার দাপ্তরিক সব প্রক্রিয়া শেষ করেছে জেলা পরিষদ। যে কোনো মুহূর্তে কেটে ফেলা হবে এসব বড় বড় গাছ।
ফরিদপুর জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, টেপাখোলা লেকটি ১৪ একর জমির ওপর অবস্থিত। এই লেকসহ এর আশপাশে জেলা পরিষদের মোট ১৮ একর জমির ওপর লেক উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ১৮০ কোটি টাকার চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের মেয়াদকাল এই বছরের ৩০ জুন শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। আপাতত ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ায় এ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে এ প্রকল্পের মেয়াদকাল আরও দুই বছর বাড়ানোর জন্য প্রকল্প পরিচালক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যই ওই গাছগুলো গত ২৮ মার্চ ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার বিনিময়ে নিলাম করা হয়েছে। তবে গাছগুলো এখনো কাটা শুরু হয়নি। নিলাম পাওয়া ব্যক্তি চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। এরপরই তিনি গাছ কাটায় হাত দেবেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেপাখোলা লেকের পূর্ব পাড়ে এবং দক্ষিণ পাড়ে সড়কের পাশে এ গাছগুলো অবস্থিত। গাছগুলোর বয়স আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ বছর। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কেটে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া গাছগুলোর গায়ে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কেটে ওপরের ছাল বাকল তুলে লাল রঙ দিয়ে ১, ২, ৩ সংখ্যা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাছগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই মেহগনি গাছ। এর পাশাপাশি, আম, কাঁঠাল ও নারকেল গাছও রয়েছে।
এ গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্তে ওই এলাকার বাসিন্দাসহ শহরবাসীর মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নগরায়নের ফলে শহরবাসীর বিকেলে হাঁটা এবং স্বস্তির নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ কমে আসছে। বর্তমানে প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি সারা বছর শহরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে সর্বস্তরের লোকজন একটু স্বস্তির প্রত্যাশায়, ক্লান্তি দূর করতে ছুটে আসে এই লেকপাড়ে।
টেপাখোলা এলাকার বাসিন্দা স্বপন মৃধা (৩৮) বলেন, শৈশব থেকেই এই গাছগুলোর ছায়ায় বড় হয়েছি। প্রচণ্ড গরমে একটু স্বস্তির আশায় এ গাছগুলোর নিচে বসতাম। শুনতেছি এখানে বড় প্রকল্প হবে, বড় বড় ভবন হবে। এজন্য গাছগুলো কেটে ফেলা হবে। এ খবর শোনার পর মনে স্বস্তি পাচ্ছি না।
ওই এলাকার বাসিন্দা মো. সজিব শেখ (৫০) বলেন, প্রকল্প-ট্রকল্প আমরা বুঝি না। যা কিছু করা হোক না কেন এ গাছগুলো রক্ষা করে করতে হবে।
একই এলাকার বাসিন্দা সজিব মিয়া (২৩) বলেন, গাছ অক্সিজেন দেয়। এটা ফরিদপুরের অক্সিজেনের ভাণ্ডার। এলাকার সব পর্যায়ের মানুষ এ গাছতলার এসে বসে। গাছ কাটার এ উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে।
টেপাখোলা লেকের পূর্বপাশে অবস্থিত ফরিদাবাদ এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান (৩৯) বলেন, উন্নয়ন হোক তা আমরাও চাই। কিন্তু এজন্য গাছ কাটতে হবে কেন। পূর্বদিকের গাছগুলো লেকের পাশের রাস্তার পূর্বদিকে আছে এবং দক্ষিণ পাশের গাছগুলো রাস্তার উত্তরে লেকের পাড়ে আছে। এ লেকের সৌন্দর্য বাড়াতে গাছ কাটতে হবে কেন।
ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গাছগুলো রাস্তার পাশে এবং লেকের পাড়ে অবস্থিত। আমি নিজে সেখানে পরিদর্শন করেছি। আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। তবে আমার মনে হয়েছে গাছগুলো রক্ষা করে এ প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব। গাছগুলো কেটে ফেলার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখছি না।
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বলেন, কোনো যুক্তিতেই ৬০-৭০ বছর বয়সী এ গাছগুলো কেটে ফেলা আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না। গাছগুলো রক্ষা অবশ্যই করতে হবে। প্রতিদিন ওই লেকের পাড়ে এ ছায়াঘন পরিবেশের কারণেই মানুষ ক্লান্তি দূর করতে যায়। বড় বড় এ গাছগুলো কেটে ফেললে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। এ উদ্যোগ আমরা নাগরিক সমাজ মেনে নিতে পারি না।
ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বাকাহীদ হোসেন বলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন ও বড় বড় ওই গাছগুলো রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এগুলো রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আমাদের জানানো হয়।
তিনি বলেন, ওই ৩১টি গাছ কাটা হলেও পাশাপাশি এক হাজার ৭৬২টি গাছ রোপণ করা হবে। এটি সরকারি উদ্যোগে একটি দৃষ্টিনন্দন কাজ হবে। এ কাজের স্বার্থে আপাতত এ ক্ষতি আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।