ডেস্ক রিপোর্ট
২৮ জুলাই ২০২৪, ৮:২০ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: পূজা বস্ত্রকারকে লং অন দিয়ে বিশাল ছক্কা মারলেন কাভিশা দিলহারি, আর তাতেই ইতিহাস গড়লো শ্রীলঙ্কা। ২০০৪ সালে নারীদের এশিয়া কাপ শুরু হয়। আগের আট আসরে পাঁচবার ফাইনাল খেলেও ট্রফিতে চুমু খাওয়ার সুযোগ হয়নি লঙ্কানদের। অবশেষে আক্ষেপ, অপেক্ষা সবই ঘুচলো নিজেদের মাঠে। রবিবার ডাম্বুলাতে শক্তিশালী ভারতকে মাটিয়ে নামিয়ে দারুণ এক জয় তুলে নিলো চামিরা আতাপাত্তুর দল। ৮ উইকেটের এই জয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তুললো শ্রীলঙ্কা।
ডাম্বুলাতে আগে ব্যাটিং করে ভারত ১৬৫ রান সংগ্রহ করে। শ্রীলঙ্কাকে জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হতো। এর আগে এত রান তাড়া করে সফল হওয়ার ইতিহাস ছিল না লঙ্কানদের। তবে রবিবার সবকিছুই যেন শ্রীলঙ্কারদের মতো করেই হলো। ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতের ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সবকিছুই যেন হলো ছন্নছাড়া। সুযোগটা খুব ভালো করেই কাজে লাগিয়েছে স্বাগতিকরা।
ভারতের দেওয়া ১৬৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার বিশমি গুনারত্নকে (১) হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় লঙ্কানরা। তবে টুর্নামেন্টের শীর্ষ রান সংগ্রাহক লঙ্কান অধিনায়ক চামিরা সেই চাপকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। দ্বিতীয় উইকেটে হার্ষিতা সামারাবিক্রমাকে সঙ্গে নিয়ে ৬৩ বলে ৮৭ রানের জুটি গড়ে দলে জয়ের পথটা তৈরি করে দেন। সামারাবিক্রমাকে কিছুটা দেখেশুনে খেললেও চামিরা বিস্ফোরক ব্যাটিং করেছেন। দিপ্তী শর্মার বলে বোল্ড হওয়ার আগে লঙ্কান অধিনায়ক খেলেন ৪৩ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৬১ রানের ইনিংস। ১২তম ওভারে যখন চামিরা আউট হন, তখন লঙ্কানদের জিততে প্রয়োজন ৪৮ বলে ৭২ রান।
কিন্তু এই লক্ষ্যটাকে একেবারে সহজ করে দেন সামারাবিক্রমা। চামিরা আউট হওয়ার পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। ভারতীয় বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে দ্রুত রান তুলে নেন। রাধা যাদবের করা ১৮তম ওভারে ১৭ রান তুলে নেন সামারাবিক্রমা। তাতে করে শেষ দুই ওভারে লংঙ্কানদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৮ রানের। স্বাভাবিক ভাবেই শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি লঙ্কনাদের। ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে কাভিশা দিলহারির ছক্কায় এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে লঙ্কানরা। তারা দুইজন ৪০ বলে ৭৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন। ভারতীয় ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাতের সুযোগ নিয়ে লঙ্কান তিন ব্যাটার ভারতের আধিপত্য থামিয়ে দিলেন। শুধু ক্যাচ নয়, গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে হতাশা উপহার দিয়েছে ভারত।
লঙ্কান ব্যাটারদের মধ্যে সামারাবিক্রমা সর্বোচ্চ ৬৯ রানের ইনিংস খেলেন। ১৬ বলে ৩০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেও দলের প্রথম শিরোপা জিততে ভূমিকা রাখেন কাভিশাও। ছক্কা মেরে দলকে জেতানোর পর মাঠেই আগ্রাসন দেখালেন কাভিশা। আগের ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাতেও রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ডাগআউটে লঙ্কান ক্রিকেটাররা আবেগে ভেসেছেন। অধিনায়ক চামিরা তো আনন্দে চোখ ভেজান। হবেই বা না কেন, ২০০৪ থেকে ২০২৪। গত ২০ বছরে নয়টি আসর হয়েছে। আগের ৫ আসরে ফাইনাল খেলেও শিরোপার দেখা পাচ্ছিলো না। প্রথম চার আসরে তো টানা চারবার ফাইনাল খেলেছে তারা। কিন্তু প্রতিবারই হাতছোঁয়া দূরত্ব থেকে শিরোপা হারাতে হয়েছে। তবে এবার আর ভুল করেননি লঙ্কানরা। দারুণ পরিকল্পনায় পুরো টুর্নামেন্ট দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেই শিরোপা খরা কাটালো তারা।
রবিবার ডাম্বুলার রনগিরি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। তবে শুরুটা হয় সাদামাটা। ৪৪ রানের ওপেনিং জুটি হলেও রানরেটে খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল না সাতবারের চ্যাম্পিয়নরা। যার প্রভাব শেষ পর্যন্ত ছিল। শেফালি ভার্মা (১৬), উমা ছেত্রী (৯) ও হারমানপ্রিত কৌর (১১) আউটের পর সব চাপ গিয়ে পড়ে স্মৃতি মান্ধানার ওপর। ১৭তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৪৭ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলে দলের স্কোরকে ১৩৩ রানে নিয়ে যান স্মৃতি। এরপর জেমিমা রদ্রিগেজের ১৬ বলে ২৯ এবং রিচা ঘোষের ১৪ বলে ৩০ রানের ওপর দাঁড়িয়ে ভারত ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারে।
ব্যাটিংয়ে আগে বল হাতে লঙ্কানদের সেরা পারফরমার কাভিশা। ৩৬ রান খরচায় তার শিকার দুটি উইকেট।