ডেস্ক রিপোর্ট

৮ জুন ২০২৪, ৭:৫৯ অপরাহ্ণ

বাজেট প্রত্যাখ্যান করে বামজোটের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

আপডেট টাইম : জুন ৮, ২০২৪ ৭:৫৯ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

অধিকার ডেস্ক: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সংকটের চক্রে ঘূর্ণায়মান দিশাহীন বাজেট। অতীতের অর্থনৈতিক সংকটের কারণ চিহ্নিত করে দূর করার কোন দিক নির্দেশনা এ বাজেটে না থাকায় অর্থনীতি সংকটের চক্রেই ঘুরপাক খেতে থাকবে। এ কথাগুলো বলেছেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখান করে দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে ৮ জুন দেশ্যব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বিকাল সাড়ে চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা শিশু, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য কমরেড অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাকেজুজ্জামান রতন, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি কমরেড আব্দুল আলী। সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন।

কমরেড ফিরোজ বলেন, সরকারের দুর্নীতি, অপচয় ও লুণ্ঠনমূলক নীতির দায় জনগণের উপর চাপিয়ে কর ও ভ্যাট বৃদ্ধির বাজেট জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বহুগুণ বাড়াবে।

সমাবেশে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবারের বাজেটকে গতানুগতিক ও ঋণনির্ভর ঘাটতি বাজেট প্রত্যাখ্যান করে গরীব মেহনতি মানুষের পক্ষে গণমুখী বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ২ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি বাজেটে দেশি বিদেশি ঋণের উপর নির্ভর করা হয়েছে। তাই বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধের জন্যই ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেটের ৭ ভাগের একভাগ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী তিন মাসেই ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত মার্চের শেষে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ বাস্তবে সাড়ে ৪ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। একদিকে ঋণ খেলাপি বাড়ছে অন্যদিকে সরকার বাজেটে দেশের ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্থ হবে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, টাকার অবমূল্যায়, মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি বিবেচনায় নিলে বাজেটে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষি এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতেও বরাদ্দ বাস্তবে বাড়েনি বরং কমেছে। টাকার অংকে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও বাস্তবে তা পেনশনভোগী, উপবৃত্তি ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় চলে যাবে। উপরন্তু কৃষি খাতে ভর্তুকীতে ২৩-২৪ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। মুঠো ফোনে ১০০ টাকার টক টাইম পেতে এখন গ্রাহককে দিতে হবে ১৩৯ টাকা। বহুল প্রচারিত মেট্রো রেলেও ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। যা জনজীবনে ভোগান্তি বাড়াবে।

বাজেটে শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিশ্চয়তার জন্য রেশনিং এর জন্য কোন বরাদ্দ রাখা হয়নি। বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্নীতি রোধে কোন কার্যকর দিক নির্দেশনা নাই। যেখানে আজিজ, বেনজির, আনার কাণ্ডে সরকারের দুর্নীতির ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে সেখানে এবারেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখে দুর্নীতিকে আরো উৎসাহিত করার ব্যবস্থা হচ্ছে।

বাম জোটের নেতৃবৃন্দ ধনী, লুটপাটকারীদের স্বার্থে ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট না করে গরীব মেহনতি মানুষের স্বার্থে বাজেট প্রণয়নের জোর দাবি জানান।

শেয়ার করুন