ডেস্ক রিপোর্ট
১৭ জুলাই ২০২৪, ৯:৫১ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম রেজাসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চার গুলিবিদ্ধসহ পাঁচ জনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ধুনট মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ধুনট মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে বাধা দেয় পুলিশ। বিক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শুরু হয় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শতাধিক আন্দোলনকারী বুধবার বেলা ১১টার দিকে শেরপুর-ধুনট সড়কের তালতলায় জড়ো হন। তারা কোটাবিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে মিছিল নিয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের দিকে আসেন। দুপুর ১২টার দিকে অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থী তাদের মিছিলে যোগ দেন। মিছিল নিয়ে ধুনট মোড় হয়ে শেরপুর বাসস্ট্যান্ড ও শেরুয়া বটতলা এলাকায় ধুনট মোড়ে আসেন। সেখানে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে কোটাবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম রেজার নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের মহাসড়ক থেকে উঠে যেতে অনুরোধ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে পুলিশ জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন যানবাহনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে বাধা দিলে পুলিশের ওপরও ইটপাটকেল ছোড়া শুরু হয়। এ অবস্থায় রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। শুরু হয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একপর্যায়ে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেলে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাত, টিয়ারশেল, রাবার বুলেটে পথচারী, শিক্ষার্থী ও পুলিশসহ ২৫ জন আহত হন। শেষের দিকে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়লে বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজের অনার্স ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র শাহরিয়ার মুসতাহিদকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা।
আহতদের মধ্যে কয়েকজন হলেন শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা, এসআই তরিকুল ইসলাম, রাকিব, এএসআই মাসুদ, শিক্ষার্থী মারুফ, জিম, নজরুল, সনেট, আলী হোসেন, জীবন, স্থানীয় দোকানি নাসের উদ্দিন, মুন, বাবু, রহমান ও পথচারী আবদুস সামাদ, নুরুল ইসলাম এবং সোলায়মান।
গুলিবিদ্ধরা হলেন শেরপুরের শালফা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে মো. শাকিল (২৩), খানপুরের শহিদুল ইসলামের ছেলে মো. জাকারিয়া (২৮), গোপালপুরের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে মো. বাবু (২৪), ধুনটের শাকদহ গ্রামের বাবুর ছেলে হোসাইন (১৮) এবং ইটের আঘাতে আহত শেরপুরের খামারকান্দি গ্রামের মৃত শমসের শেখের ছেলে জয়নাল আবেদীন (৬৫)। তাদের শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বগুড়ার ছিলিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান বলেন, ‘শেরপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ চার জনসহ পাঁচ জনকে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা চিকিৎসাধীন আছেন।’
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের মহাসড়ক থেকে সরে ফাঁকা স্থানে গিয়ে কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানায় পুলিশ। কিন্তু তারা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এতে আমিসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়েছে পুলিশ। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে মঙ্গলবার বিকালে বগুড়ার সাতমাথা-তিনমাথা সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার পর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে কার্যালয়ের পাশেই মুজিব মঞ্চ, পুলিশ বক্স ভাঙচুর এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অস্থায়ী কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীরা এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সময় তারা পোস্ট অফিস, জাসদ অফিস ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়ও ভাঙচুর করেছেন।