ডেস্ক রিপোর্ট

১৬ আগস্ট ২০২৩, ৮:৫০ অপরাহ্ণ

ডেঙ্গু মহামারি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি বাসদের

আপডেট টাইম : আগস্ট ১৬, ২০২৩ ৮:৫০ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

মেয়র বরাবর স্মারকলিপি পেশ

অধিকার ডেস্ক: ডেঙ্গু মহামারি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণ, বিনামূল্যে ডেঙ্গু টেস্ট ও চিকিৎসা করা, নগরীর জলাবদ্ধতা দূর ও দখল-দূষণ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সমাবেশ ও স্মারকলিপি।

ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে আজ বুধবার (১৬ আগস্ট ২০২৩) বেলা ১২টায় সেগুনবাগিচাস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েত শেষে মিছিলসহকারে গুলিস্তানন্থ নগর ভবনের সামনে সমাবেশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার সদস্যসচিব জুলফিকার আলীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় সম্পাদক ম-লীর সদস্য নিখিল দাস, বাসদ ঢাকা মহানগর নেতা খালেকুজ্জামান লিপন, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী-শ্যামপুর শাখার নেতা জাকির হোসেন, আফজাল হোসেন, লালবাগ থানার নেতা রুখশানা আফরোজ আশা, শাহবাগ থানার নেতা আনোয়ারুল ইসলাম, খিলগাঁও থানা শাখার নেতা অনিক কুমার দাস, সূত্রাপুর থানার নেতা সুস্মিতা মরিয়ুম প্রমুখ।

নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর দেশের ডেঙ্গু রোগীর অর্ধেকই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮৭ হাজার ৮৯১ জন। এর মধ্যে রাজধানীর ৪৩ হাজার ৬৬৫ জন। এ সময়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৪১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ জনই ঢাকার বাসিন্দা। অর্থাৎ ডেঙ্গুতে যত মৃত্যু তার প্রায় ৭৬ শতাংশই ঢাকার। চলতি আগস্ট মাসকে ভাবা হচ্ছে ডেঙ্গুর পীক সীজনের সময়। তার উপরে আবার গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে হয়ে যাওয়া বর্ষণ ও জলাবদ্ধতা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব লাগামছাড়া করে ফেলছে। ইতিমধ্য ডেঙ্গু আক্রমণে দেশে বেশ কয়েকজন ডাক্তার ও নার্স মারা গিয়েছেন। কারণ ডেঙ্গু এখন সারাবছর ধরে হচ্ছে এবং বদলে যাচ্ছে মশার জীবনচক্র ও আচরণ।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ৪২টি খাল ৪ টি নদী পরিবেষ্টিত এই ঢাকা মহানগর, অথচ সেই ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সামান্য বৃষ্টিতেই জলজট ও যানজটে নগরবাসী নাকাল। ঢাকার বেশীরভাগ খাল, পুকুর ও জলাশয় দখল হয়ে গেছে। দখল দূষণে ৪টি নদীর অবস্থা মৃতপ্রায়। ওয়াসার পাম্প স্টেশনগুলো নষ্ট, ফলে নদী, খাল, পুকুর ও জলাশয় থাকার পরও ঢাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার ভঙ্গুর দশা। এই দখল-দূষণ থেকে ঢাকা শহরকে রক্ষার কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি দৃশ্যমান। আবার বর্ষার মৌসুম আসলেই সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন বিভাগের খনন ও রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হয় যা নগরবাসীকে আরও বেশি সংকটের মধ্যে ফেলে। আবার এই মেরামতকালীন সময় পানি জমে থাকা ও মশার উপদ্রব বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ বলেও অনেকে অভিহিত করছেন।

সমাবেশে শেষে নিম্নোক্ত দাবি বাস্তবায়নে কমরেড জুলফিকার আলী, জাকির হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মেয়র বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।

৥ ডেঙ্গু মহামারী পরিস্থিতিকে জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা কর।
৥ বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসা করতে হবে, ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে অস্থায়ী ডেঙ্গু পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ কর।
৥ হাসপাতালগুলোতে আপদকালিন পর্যাপ্ত ডাক্তার-নার্সের ব্যবস্থা কর, সীট ও স্যালাইন সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নাও।
৥ এডিশ মশা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে কীটতত্ত্ববীদ, জনস্বাস্থ্যবীদ, স্থানীয় সরকারসহ সকল অংশীজনের সমন্বয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
৥ জলাবদ্ধতা নিরসনে দখলকৃত সকল খাল, পুকুর ও জলাশয় উদ্ধার এবং ওয়াসার সকল পাম্প সচল কর।
৥ অপরিকল্পিত নগরায়ণ বন্ধ কর, দখল-দূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নাও, খাস জমি উদ্ধার কর।
৥ মশা নিধন কার্যক্রম-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার বিষয়গুলো তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দুই সিটি কর্পোরেশনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
৥ উপযুক্ত কীটনাশক ও এর চাহিদা নির্ধারণ, ক্রয়, কার্যকরিতা ও সহনশীলতা পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটি করতে হবে, তাদের কার্যক্রম নিয়মিত হতে হবে এবং সভাগুলোর কার্যবিবরণী প্রকাশ করতে হবে। অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে কীটনাশক ক্রয় প্রক্রিয়ায় জাতীয় ক্রয় আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করতে হবে।
৥ মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করতে হবে এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

শেয়ার করুন