ডেস্ক রিপোর্ট
২৮ আগস্ট ২০২৩, ৭:২৬ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীদের অন্যতম পথ্য ডাবের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ ও প্রতিকার খুঁজতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনায় দাম বৃদ্ধির জন্য ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে দায়ী করেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটায় ডাবের চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেশি। যোগান কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে।
ব্যবসায়ীদের এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হয়নি ভোক্তা অধিদপ্তর। তারা বলছে, যে পরিমাণ দাম বেড়েছে তা অযৌক্তিক। দাম বাড়ার প্রকৃত কারণ যাচাই এবং বাজার তদারকি করতে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) থেকে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে অধিদপ্তর।
সোমবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে ডাব ব্যবসায়ী ও ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে দাম বাড়ার সপক্ষে যুক্তি দিয়ে আড়ৎদাররা জানান, সারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ পিস ডাব আসে। ক্রয়মূল্য ও পরিবহন খরচসহ ডাব আড়ৎদারের ঘরে পৌঁছাতে প্রতি পিসে অন্তত ৮০ থেকে ৮৫ টাকা গুনতে হয়। পরবর্তীতে তারা খরচ ও লাভ রেখে সাইজ ভেদে পিস ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করেন। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন প্রতি পিস ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত।
প্রতি পিস ডাবে ১০-১৫ টাকা লাভ করেন দাবি করে বৈঠকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা সাইজ ভেদে আড়ৎ থেকে ডাব কিনে থাকি। ভালো মানের ডাবগুলো গত দুমাস আগে কিনেছি প্রতিটি ৮০ টাকা দরে। বর্তমানে সেগুলো কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায়। আমাদের সব খরচ রেখে বিক্রি করি ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। এতে আমাদের সর্বোচ্চ ১০-১৫ টাকা করে লাভ থাকে।
সভায় উপস্থিত কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভুঁইয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে ৮০ শতাংশ ব্যবসায়ী অসৎ। এটা কীভাবে হতে পারে? আপনাদের লজ্জাও নেই। আপনারা দেশের বারোটা বাজাচ্ছেন, ভোক্তাদের বারোটা বাজাচ্ছেন। আপনারা এটা করবেন না প্লিজ।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে গিয়ে মানুষ কিছু কিনতে পারছে না। যদি ভোক্তারা মরে যায় তাহলে আপনাদের ব্যবসা থাকবে না। সবক্ষেত্রে অরাজকতা চলছে, এভাবে অরাজকতা চলতে দেওয়া যাবে না।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ব্যবসা করলে অবশ্যই লাভ করবেন। তবে একটা উপলক্ষ সামনে এনে দাম বাড়িয়ে দেবেন সেটা হতে পারে না। ৪০০ টাকা দিয়ে বাংলাদেশে দুটি ডাব কিনতে হবে, আমরা কি সেই পর্যায়ে পৌঁছে গেছি?’
তিনি বলেন, ‘ডাব তো জাহাজে করে বিদেশ থেকে ইমপোর্ট করতে হয় না কিংবা ডলারে পেমেন্ট করে আনতে হয় না। তাহলে দাম এত বাড়বে কেন? ডেঙ্গুকে পুঁজি করে আপনারা প্রতিটি বাজার জিম্মি করছেন। এভাবে চলতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভাবতে পারিনি ডাবের জন্য আমাকে এখানে বৈঠক করতে হবে। আগামীকাল থেকে ডাবের দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে তদারকি করা হবে। আমি আমার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে দেব, তারা সারা দেশের বাজারে গিয়ে দেখবে আপনাদের ট্রেড লাইসেন্স আছে কি না, টিন নাম্বার আছে কি না? আপনারা ভ্যাট-ট্যাক্স ঠিকঠাক দিচ্ছেন কি না। আপনারা অবশ্যই আপনাদের ভাউচার রাখবেন। যাদের ভাউচার নেই তাদের আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। এরমধ্যে আপনারা এটি করে নেবেন।’