ডেস্ক রিপোর্ট
২ আগস্ট ২০২৩, ৯:৪০ অপরাহ্ণ
অধিকার ডেস্ক: তিন ছিনতাইকারী রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী প্রান্ত মিত্রকে (২৩) ছুরি মেরে হত্যা ও জেলা জাকের পার্টির সভাপতি মশিউর রহমান ওরফে যাদু মিয়াকে (৪২) কুপিয়ে জখম করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার (২ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শহরের গুহলক্ষ্মী মহল্লার মো. সজীব শেখ (২৩), ফরিদপুর সদরের মমিনখার হাট এলাকার মো. ইসরাফিল মল্লিক (৩৪) ও শহরের টেপাখোলা গোপালদি মাতুব্বরের ডাঙ্গী মহল্লার মো. সিফাতুল্লাহ বেপারী (১৯)।
পুলিশ সুপার জানান, ছিনতাই কাজে তিনজন জড়িত ছিল। তারা ভাড়ায় একটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল মো. মাসুম শেখের কাছ থেকে ভাড়া নেন ছিনতাইকারীরা। পুলিশ মাসুম শেখকেও গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় ছিনতাই হওয়া প্রান্ত ও মশিউর রহমানের মোবাইল ফোন, ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত চাকু, একটি চাপাতি ও একটি রেঞ্চ, ছিনতাইকারীদের ব্যবহৃত রক্ত মাখা জামা, একটি গামছা ও এক জোড়া স্যান্ডেল জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, বন্ধু হৃদয় খানের বোনের সিজার হবে ফরিদপুর ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে। এজন্য প্রান্তের সাহায্য চান হৃদয়। এ খবরে শহরের ওয়্যারলেসপাড়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে একটি রিকশা করে প্রান্ত আসার পথে রাত সোয়া ২টার দিকে আলীপুর সেতুর উত্তর পাশে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এই চক্র ভোর ৫টার দিকে শহরের কমালাপুর ঠাকুর বাড়ির মোড় এলাকায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া জেলা জাকের পার্টির সভাপতি মশিউর রহমানকে কুপিয়ে জখম করে তার মোবাইল ও টাকা নিয়ে যায়।
প্রান্তের ঘড়ি ও হাতের আংটি ছিনতাইকারীরা কেন নেয়নি জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ওই সময় আরেকটি মোটরসাইকেল ঘটনাস্থলের কাছাকাছি চলে আসায় ছিনতাইকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এই ছিনতাইকারী চক্র প্রান্তকে ছুরি মেরে হত্যা ও মশিউর রহমানকে কুপিয়ে জখম করার মধ্যবর্তী সময়ে আরও দুটি ছিনতাই করে ফরিদপুর শহরে। রাত পৌনে ৪টার দিকে শহরের বাদামতলী সড়কে এক সবজি বিক্রেতার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা ও রাত সোয়া ৪টার দিকে শহরের ঝিলটুলী মহল্লার এলাকায় এক ইমামের কাছ থেকে মোবাইল ও ৭০০ টাকা ছিনতাই করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার জানান, আসামিদের মধ্যে গত মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকার শ্যামপুর এলাকা হতে মো. সজীব শেখকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে প্রান্তের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মধুখালী থানা এলাকা হতে মো. ইস্রাফিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে মশিউর রহমানের ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে কানাইপুরে রাজীবের পরিত্যক্ত ঘর হতে চাকু ও চাপাতি উদ্ধার করে পুলিশ। রাত সাড়ে ৩টার দিকে মো. সিফাতুল্লাহকে টেপাখোলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৪টার দিকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক মো. মাসুম শেখকে শহরের ভাজনডাঙ্গা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ জলিল বলেন, এ ব্যাপারে প্রান্তের বাবা বিকাশ মিত্র বাদী হয়ে হত্যা মামলা এবং মশিউর রহমানের ভাই মোকলেসুর রহমান বাদী হয়ে ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুটি মামলা করেছেন।
প্রান্ত হত্যার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতয়ালী থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম হোসেন, আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলে তাদের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ ইমদাদ হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএরসবি) মো. আব্দুল্লা বিন কামলাম, ট্র্যাফিক পুলিশ পরিদর্শক তুহীন লস্কর, নিহত প্রান্তের বাবা বিকাশ মিত্র ও মা পুতুল মিত্র উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুতুল মিত্র কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি আসামিদের প্রশ্ন করেন, আমার ছেলে তোদের কি ক্ষতি করেছিল, যে তাকে এভাবে হত্যা করলি।
তিনি হত্যাকারীদের চূড়ান্ত শাস্তি দাবি করে বলেন, আর কোনো মাকে যেন আমার মতো ভাগ্য বরণ করতে না হয়। আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ জুলাই দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে শহরের আলীপুর সেতুর কাছে বুকে চাকু মেরে হত্যা করা হয় প্রান্তকে। ২৫ জুলাই ভোর ৫টার দিকে শহরের কমলাপুর ঠাকুরবাড়ি এলাকায় মশিউর রহমানকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়।