ডেস্ক রিপোর্ট

১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ

আলোকবর্তিকার অভিগমন

আপডেট টাইম : সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩ ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ

শেয়ার করুন

মুক্তজ্ঞান চর্চার উজ্জ্বল বাতিঘর,সমাজ সংস্কারক,পরশপাথর ও স্বমহিমায় ভাস্বর এক মহান গুনীমানুষ ছিলেন প্রয়াত মো. আব্দুস সাত্তার।তাঁর সুকর্ম ও করে যাওয়া অগনিত সুকীর্তি ছিলো সমাজের সর্বব্যাপী বিস্তৃত।তিনি ছিলেন জ্ঞানবিজ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দুরদর্শীতায় অগ্রসর।এবং জ্ঞান অন্বেষণে এক নীরব ব্রতী।তিনি নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন সামাজিক ন্যায়বিচার ও প্রাণ-প্রকৃতি এবং মানুষের কল্যাণে।খ্যাতি-যশ-লোভ-প্রভাব-প্রতিপত্তি থেকে নিজেকে আগলে রেখেছিলেন।নীরব-নিভৃতে অসীম সাহসী কর্মবীরের মতো সমাজপ্রগতির জন্যে আমৃত্যু প্রকৃত কর্মসৃজন করেছিলেন।প্রদর্শন প্রবনতা তাঁর মধ্যে একেবারেই অনুপস্থিত ছিলো। প্রচারবিমুখ এই অকৃত্রিম ভাষাসংগ্রামী,মহান মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক মানুষটি ছিলেন মানুষের পরম নির্ভরতার আশ্রয়স্থল ও নিদানকালের কাণ্ডারী।তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও সৎসাহসের মূর্ত প্রতিক।তাঁর অর্জিত জ্ঞান-বুদ্ধি,বিবেক,নেতৃত্বের সৃজনশীলতা,ন্যায়পরায়নতা, সততা-নিষ্ঠা,সালিশবিচার সবই ছিল সর্বজনীনতার মাঝে নিগোঢ়। তিনি গত ৩১আগষ্ট, ২০১৯ বৃহস্পতিবার সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।যেনো একটি তারা খসে পরলো আকাশ থেকে।ইমামবাড়ি গোরস্তানে তিনি চিরশায়িত হয়েছেন।

প্রয়াত মো. আব্দুস সাত্তার ৩১ ডিসেম্বর ১৯৩৯ সালে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার পৌরসভার কসবা গ্রামে তৎএলাকার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।পরে কসবা গ্রাম থেকে খাসা গ্রামের স্থায়ী অধিবাসী হন।তাঁর পিতা প্রয়াত আব্দুল লতিফ,মাতা প্রয়াত কুতুব জান বিবি। তাঁদের চার পুত্রসন্তান ও চার কন্যাসন্তানের মধ্যে আব্দুস সাত্তার ছিলেন জ্যেষ্ঠতম।তিনি কসবা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি হন।পাঠশালাশেষে পরবর্তীতে তৎকালীন আসাম প্রদেশের অধীন বিয়ানীবাজারের খাসা গ্রামের অধুনালুপ্ত ‘রুক্ষিনী মোহন মিডল ইংলিশ স্কুল’-এ পড়াশোনা করেন এরপর পিএইচজি হাই স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক পাশ করেন।পরবর্তীতে কলেজে ভর্তি হয়ে নানা প্রতিকুলতায় উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ সম্ভব হয় নি। প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ধারাবাহিকতায় ঠিকে না থাকলেও;সমাজবাস্তবতা থেকে পাঠগ্রহণ থেমে থাকেনি।নিরবধি স্বসাধানায় নিজেকে জ্ঞান-গরিমায় সমাসীন করেছিলেন।তাঁর বিদ্যা-জ্ঞানের দুত্যি ছড়িয়ে ছিলেন অন্যদের মধ্যে।সমাজে আবির্ভূত হয়েছিলেন ভিন্নমাত্রায়।এবং অনন্যউচ্চতায়।

শিক্ষা,সাহিত্য,সংস্কৃতি,ক্রীড়া ও সমাজনীতির প্রতি এক সময় তিনি ঝুকে পড়েন।গভীর মনোনিবেশ করেন।তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন,এই সব বিষয়ে অবদান না রাখতে পারলে প্রগতিশীল সুসমাজ কোনোভাবেই বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়।তাঁর মধ্যে দুরদর্শীতা ছিলো বলেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন।সত্যিকার অর্থে এমনই অগ্রসর চিন্তার মানুষ ছিলেন মো. আব্দুস সাত্তার।বিশ্বসাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁর প্রবল আকর্ষন ছিলো।ফলে তিনি পৃথিবীর নানাদেশ হতে আত্বীয়-স্বজনের মাধ্যমে বিখ্যাত বই,প্রকাশনা ও চলচ্চিত্র এবং তথ্যচিত্র সংগ্রহ করতেন।নিজে, স্বপরিবার ও মানুষ নিয়ে উপভোগসহ শিক্ষাগ্রহণ করতেন। উদ্দেশ্য ছিলো মানুষকে উদ্বুদ্ধ,সচেতন ও বিশ্ব জ্ঞানভাণ্ডারে প্রবেশ করানো। এর ফলে তাঁর সান্নিধ্যে যারা এসেছিলেন তাঁরা জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়েছিলো।তিনি তাঁর দিনলিপিতে বইয়ের একটি মুল্যবান তালিকা করেছেন, কোন কোন বই পাঠ করা যায় এবং করা দরকার।তাঁর করা তালিকাকে একটি বই পড়ার উপর সিলেবাসও বলা যেতে পারে।ইহা একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।পাঠকের সুবিধার্থে অচিরেই কৃত বাছাই তালিকা প্রকাশ করা হবে তিনি স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের সেক্রেটারি ছিলেন কয়েক বছর।ঐ সময় তাঁর বুদ্ধি-বিবেচনাবোধ, বিচক্ষণতা,প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের সমন্বয়ে মানুষের সামাজিক-পারিবারিক অনেক সমস্যা-সংকটের সন্তোষজনক সমাধান করেছেন।তাঁর এমন সমাজ হিতৈষী মনোবৃত্তিতে মানুষজন অভিভূত ও উপকৃত হতো।বিবাদ-বিরোধ মিটাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন।পক্ষপাত দুষ্ট ছিলেন না কখনো।উভয়পক্ষ জয়ী মনে করতো তাঁর সমাধানে।ইহাই আধুনিককালে আইন-আদালতের ভাষায় ‘ অল্টারনেট ডিসপোট রিজিলিউশন’ অর্থাৎ ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’।তিনি এভাবেই বিরোধ নিষ্পত্তি করতে সক্ষমতা দেখিয়ে ছিলেন।ফলে আপামর মানুষের নিকট কুটবিতর্ক ব্যতিত বিপুল সমাদৃত হয়েছিলেন।মুলত তখন থেকেই তাঁর নামডাক-খ্যাতি-যশ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

তৃণমূল পর্যায়ে দেওয়ানি বা ফৌজদারি উভয় ধরনের বিবাদ-বিরোধ লেগেই আছে।সালিশ বিচারের মাধ্যমে নিষ্পত্তির ঐতিহ্যগতভাবে সুযোগ রয়েছে।এসব বিরোধের বিচারকার্য সমাধান করেন সালিশানগণ।আবহমানকাল থেকে স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে গঠিত হয় বিচারকসভা।এসব বিচারকসভার অতি উত্তম ন্যায়বিচারক হিসেবে নিজেকে তিনি সমাসীন করেছিলেন।সালিশবিচারের ক্ষেত্রে তাঁর অসমান্য অবদান রয়েছে।তিনি ‘উভয় পক্ষের জন্য ন্যায়সঙ্গত বিজয়ের’ রায় দিতে পারদর্শী ছিলেন।সমগ্র জীবনব্যাপী জ্ঞান অন্বেষণ করেছেন।বিশ্ব পরিমণ্ডল হতে তাঁর আহরিত জ্ঞান,প্রজ্ঞার সাথে আজীবন মানুষের কল্যাণে বিতরন করেছেন।তিনি বৃটিশ-বেনিয়াদের শাসন অবলোকন করেছেন ১৯৪৭ সালে দেশভাগের প্রত্যেক্ষদর্শী সাক্ষী ছিলেন।’রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই দাবিতে ১৯৫২ সালে উত্তাল সমগ্র তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান।বায়ান্নের অগ্নিগর্ভ, এই আন্দোলনের সময় তিনি রুক্ষিনী মোহন এমই স্কুলের ছাত্র ছিলেন।

মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি সামিল ছিলেন। ভাষা লড়াইয়ে তিনি সরব,সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।তিনি ছিলেন একজন ভাষাসংগ্রামী। এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর দিনলিপিতে লিখেন-‘আমি তখন রুক্ষিনী মোহন এম,ই স্কুলের ছাত্র।আহাদ মিয়া,কাকরদিয়ার সাদত খান এরা মিছিল করেছেন।আমাদেরও মিছিলে নিয়েছেন।শিক্ষকরা প্রচুর বাঁধা দিয়েছেন।ছাত্ররা বাঁধা মানে নি’…।

তিনি নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহ দিনলিপিতে নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করতেন। তিনি লিখেন-‘
‘বৃটিশ রাজের অন্তিম দশাও প্রত্যক্ষ করেছি।পাকিস্তানী অপশাসন ও পতন-অভ্যুদয় পুরোই প্রত্যেক্ষ করেছি।বাঙালির বড় অর্জন ভাষা আন্দোলন ও একাত্তর দুটোই কাছ থেকে দেখেছি।কমবেশ অংশগ্রহণও ঘটেছে।শেখ মুজিবের… শাসন,এরশাদের…শাসন সবই দেখলাম।মৌলানা ভাষানীর আন্দোলন থেকে সব গণ আন্দোলন এত কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য কয়জনের হয়েছে?ঘটনাবহুল উনিশ শতকের যুগান্তকারী ঘটনাগুলো এক জীবনে দেখে গেলুম।এর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতেই হয়।নতুন সহস্রাব্দ কি আশার বার্তা এনেছে তাও যতটুকু দেখার সুযোগ পাই,তাই হাজার নিয়ামত।মার্কিনীদের একছত্র দাপট,সোভিয়েট পতন,জার্মানীর একত্রীকরণ কত ঘটনাই উনিশ শতকে ঘটেছে।বিশ শতকে কোন মঙ্গল আরতি জ্বলে তাই এখন দেখার অপেক্ষা।আপনজনদের অনেকেই চলে গেছেন।কুলে একা বসা আছি।যাবার ডাক …বলে।এখন চলছে গ্রেস পিরিয়ড।মানুষের কল্যাণে এই সময়টুকু কি কাটাতে পারবো…’
এছাড়া তিনি দিনলিপিতে সমকালীন নানা ঘটনা , শিল্প-সাহিত্য ভাবনা,রাজনীতি,পরিবেশ প্রকৃতি,সমাজ,ক্রিড়াসহ ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গে লিখেছেন।

স্বাধীনতা!মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্যেই স্বাধীনতার বীজ বপন করা হয়েছিলো।বাংলার মানুষ পাকিস্তানি হায়েনা-শোষকদের বিরুদ্ধে ক্রমশই সোচ্চার হতে থাকেন।মানুষকে সুপ্তাবস্থা থেকে জাগিয়ে-উজ্জিবিত করতেন অগ্রসর মানুষজন।প্রতিটি অঞ্চলে এরকম স্বল্প সংখ্যক নেপথ্যের কারিগর ছিলেন।যারা সংগঠক হিসেবে কাজ করতেন।মো.আব্দুস সাত্তার ছিলেন বিয়ানীবাজার এলাকার অন্যতম কারিগর।মহান মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে সংগঠিত হওয়ার আগে-পরে তিনি প্রকৃত সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে দেশমাতৃকার জন্যে নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন।পরবর্তীতে সমাজপ্রগতির কাজে আজীবন ব্যপৃত ছিলেন।

তিনি পাকিস্তান আমল ও স্বাধীনতার পর ইউরোপ-আমেরিকা থেকে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি আমদানীতে জড়িত ছিলেন।আধুনিক ব্যবসায়ী হিসেবে আধুনিক প্রযুক্তির প্রতি ছিলো তাঁর দুর্ণিবার আগ্রহ।এই প্রবল আগ্রহের ফলে ১৯৯১ সালে তৈরি পোষাক শিল্পের আধুনিক যন্ত্রসামগ্রী ইউরোপ থেকে আমদানী করে নিয়ে আসেন বাংলাদেশে।স্বজনদের নিয়ে রাজধানী ঢাকার অদুরে গাজীপুরে গড়ে তুলেন আধুনিক গার্মেন্ট শিল্প কারখানা।তাঁর প্রচেষ্ঠায় নির্মিত হয় শতভাগ রফতানিমুখী ‘তাসনিয়া ফেব্রিক্স’ নামক কারখানা।তিনি বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প বিকাশের প্রথম দিকেই এই পোষাক কারখানা স্থাপন করেছিলেন।

মো. আব্দুস সাত্তার বাংলা,ইংরেজি,নাগরি এবং সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।ইংরেজি ভাষার পারদর্শীতার কারণে ভাউচারের মাধ্যমে ফরম পুরণক্রমে যুক্তরজ্যে গমনকারীদের সহযোগিতা করেছিলেন।এসব বিদেশগামী মানুষদের কাছ থেকে কোনো রকম আর্থিক সুবিধা বা বিনিময় মুল্য তিনি গ্রহণ করেন নি।এছাড়াও জাহাজে করে যারা বিলেত গমন করেছিলেন,এই সব প্রবাসীদের আত্বীয়-স্বজনকে পেনশন-ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৃটিশ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ ও আইনি পরামর্শ দিতেন।এক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদান সর্বজন বিদিত।

ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছিলো।অতিথি হিসেবে তিনি আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মো.আব্দুস সাত্তার সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে সংস্কৃত ভাষায় বক্তব্য দিয়েছিলেন।এই বক্তব্য ও আলোচনায় আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত সভায় উপস্থিত সকলেই অভিভূত হয়েছিলেন তাঁর অগাধ-জ্ঞানগর্ভ পাণ্ডিত্যপূর্ণ বক্তব্যের জন্যে।যা সেখানকার গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিলো।

প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি ছিলো তাঁর গভীর মমতা।প্রাণিজগৎ ভালোবাসতেন।টেনে নিতেন আপনভুবনে।বিড়াল লালন-পালন করতেন।নিজে খাবারগ্রহণ করার পূর্বেই বিড়ালকে খাবার সরবরাহ করতেন।এছাড়া গবাদিপশুকে আপন করে নিতেন।প্রাণিকুলের প্রতি অমানবিক-নিষ্ঠুর আচরণ মেনে নিতে পারতেন না।বৃক্ষের প্রতিও তাঁর প্রেম-প্রীতি ছিলো।ফলজ,বনজও ঔষধী নানা রকমারি গাছ সংগ্রহ করে রোপন করতেন।বৃক্ষ নিধনের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন ঘোরবিরোধী এক অনন্যমানুষ।এই মানুষ প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রেমিক ছিলেন।ছিলেন অতি মানবিক এক মানুষ!তাঁর দিনলিপির পাতায় পাতায় প্রকৃতির গুরুত্ব,পরিবেশ-প্রকৃতি নিয়ে নানা কর্মের আলোচনা উঠে এসেছে।

বিয়ানীবাজারে ক্রিড়া সংস্কৃতিতে তাঁর অবদান অপরিসীম।বিয়ানীবাজার ক্রীড়া সংস্থা ও বিয়ানীবাজার সাংস্কৃতিক ক্লাব গঠনে ছিলো অনন্য ভূমিকা।খেলা-ধুলা ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের প্রতি ছিলো তাঁর পরম অনুরাগ।এসব কর্মকাণ্ডে তিনি পৃষ্টপোষকতায় জড়িত থাকতে পছন্দ করতেন।ক্রিকেট খেলার প্রতি ছিলো বিরাট মোহ।তিনি বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে বিশ্ব ক্রিকেট খেলার ধারাভাষ্য তৎকালে শোনতেন।যখন ক্রিকেট খেলার নামই মানুষ কম জানে।খেলা দেখার সুযোগ তখন ছিলো না।তাঁর আগ্রহ ও উৎসাহের কারণেই তাঁর পরিবার-স্বজনরা আশির দশকে বিয়ানীবাজারে ক্রিকেট খেলার সুচনা করেছিলেন।

মো. আব্দুস সাত্তার শিক্ষা,সাহিত্য,সংস্কৃতি ও ক্রিড়াসহ নানাবিধ প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়-দায়িত্ব পালন করেছিলেন।তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ,পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়,বিয়ানীবাজার উচ্চ বিদ্যালয়,খলিল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়,বিয়ানীবাজার সিনিয়র মাদ্রাসাসহ অপরাপর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পরিষদের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি পঞ্চখন্ড গোলাবিয়া লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক,বিয়ানীবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের প্রধান উপদেষ্টা,ইমামবাড়ী হাফিজিয়া মাদ্রাসার সভাপতি,হযরত গোলাব শাহ(রহ:)ওয়াকফ এস্টেটের সভাপতি,কসবা-খাসা গ্রাম কমিটির আহবায়কসহ অপরাপর প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার অর্পিত দায়িত্ব সততা-নিষ্ঠার সাথে সুচারুপে পালন করেছিলেন।
আজ তিনি আমাদের মাঝে শারীরিকভাবে নেই।তাঁর সুমহান কর্ম ও অবিনাশী প্রেরণা বিদ্যমান আছে।এবং থাকবে।তাঁর সত্য-সাহস,মনন-মগজে মাথা উঁচিয়ে ঋজু হয়ে পথ চলার এক অনন্য আলোকবর্তিকা।প্রাণস্পর্শ অনন্য বাতিঘর হয়ে আলো দেখাবে সমাজকে।ন্যায়-নীতি,সৎ-সততার অঙ্গীকার হয়ে রইবেন যুগ-যুগান্তর। আজীবন সমাজের কাজে নিজেকে সমর্পিত করে একটি অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে অনন্যমাত্রায় অধিষ্টিত করে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন।

আজ তাঁর প্রয়াণের দিন।প্রয়াণ দিবসে

মো. আব্দুস সাত্তারের স্মৃতি ও কর্মের প্রতি সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানাই।

লেখকদ্বয়: মোহাম্মদ মনির উদ্দিন আইনজীবী ও ইসতিয়াক আহমদ আইনজীবী

শেয়ার করুন